করোনা পরিস্থিতি টিভি চ্যানেলগুলোর ধারাবাহিক নাটকগুলোর স্বাভাবিক প্রচারে জটিলতা তৈরি করবে। প্রায় ১৫ দিন শুটিং বন্ধ থাকায় অনেক নির্মাতা ধারাবাহিকের পর্বগুলো জমা দিতে পারেননি। করোনাভাইরাস সতর্কতায় ২২ থেকে থেকে ৩১ মার্চ ছোট পর্দার সব শুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সময়সীমা বাড়িয়ে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত নেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে শুটিং না হওয়ায় তৈরি হয়েছে নাটক বন্ধের আশঙ্কা। এতে চ্যানেলগুলোকে হয়তো ধারাবাহিকগুলোর পুরোনো পর্বগুলোই পুনঃপ্রচার করতে হবে।
এটিএন বাংলায় চলছে শামীম জামান পরিচালিত ধারাবাহিক নাটক অলরাউন্ডার। নতুন পর্ব না থাকায় নাটকটি নিয়ে শঙ্কায় আছে চ্যানেলটি। নাটকটির প্রযোজক রফিকুল ইসলাম জানান, করোনা সতর্কতায় শুটিং করতে পারেননি তাঁরা। ফলে নাটকটি ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা আর সম্ভব হচ্ছে না। কবে থেকে শুটিং করতে পারেন, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, আগামী ২ এপ্রিল নাটকটি ২৮ পর্বে গিয়ে শেষ করে দিতে হবে।
এনটিভি, বাংলাভিশন, আরটিভি, মাছরাঙাসহ বেশ কয়টি চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনায় শুটিং বন্ধ হওয়ায় নিয়মিত ধারাবাহিকগুলো প্রচারে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সবাই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন।
বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান তারেক আখন্দ জানান, ‘শুটিং বন্ধের ইমপ্যাক্ট আমাদের চ্যানেলের প্রচারিত ধারাবাহিকগুলোর ওপর কিছুটা পড়বেই। নির্মাতাদের সঙ্গে কথা বলেই সেগুলোর শুটিং বাতিল করা হয়েছে। আমাদের হাতে যে পর্বগুলো আছে, সেগুলো আপাতত চালাব। পরে সমস্যা হলে বিকল্প সিদ্ধান্ত নেব। আগামী ১০ এপ্রিলের পরও যদি শুটিং শুরু হয়, তাহলেও আমাদের কোনো ধারাবাহিক বন্ধ হবে না। সংকটে পড়লে কোনো কোনো নাটকের আগের পর্ব চালাতে হতে পারে।’
আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রচার করার মতো ধারাবাহিক নাটকের পর্ব হাতে আছে বলে জানিয়েছেন মাছরাঙা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক আরিফ রহমান। তিনি জানান, ‘যদি ১৩ এপ্রিলের পরও শুটিং শুরু করা না যায়, তাহলে আমাদের আগের পর্বগুলো চালাতে হবে।’ এনটিভি সূত্রে জানা যায়, আগামী ৪ তারিখ পর্যন্ত তাদের সমস্যা হবে না। কিন্তু পরে দুটি ধারাবাহিক নাটক প্রচারে সমস্যা হতে পারে।
নির্মাতা সকাল আহমেদের নাটক ভদ্রপাড়া বাংলাভিশন এবং খান বাড়ি বাড়াবাড়ি দেখাচ্ছে ইটিভি। তিনি বলেন, ‘আমার এই দুটি নাটকই করোনা পরিস্থিতি কারণে নিয়মিত প্রচারের সমস্যায় পড়বে। খান বাড়ি বাড়াবাড়ি নাটকটি ১২ পর্ব পর্যন্ত জমা দেওয়া আছে। বাকি পর্বগুলোর শুটিং করে জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেটা আটকে গেছে।’ ইটিভি জানায়, সংকটে পড়লে আগের পর্বগুলোই প্রচার করবে তারা। আরটিভি অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান দেওয়ান শামসুর রাকিব বলেন, নাটকগুলো নিয়মিত প্রচার করতে আপাতত কোনো সমস্যা নেই।
টেলিভিশন প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির জানান, ‘আমরা এখন সবাই পরিস্থিতির স্বীকার। কেউই কাজ করতে পারছে না। এর প্রভাব ধারাবাহিকের ওপর পড়াটাই স্বাভাবিক। সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু ধারাবাহিক বন্ধ হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাইকে রিপিট চালাতে হবে। আমাদের পাশের দেশ ভারত আরও আগে থেকে সেটা শুরু করেছে।’
ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক এ প্রসঙ্গে বলেন, বেশ কজন সহকর্মীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের ধারাবাহিকের স্বাভাবিক প্রচার বিঘ্ন হতে পারে। আমার নিজের নাটক জায়গির মাস্টার-এর ফুটেজ আছে ১৪ তারিখ পর্যন্ত প্রচারের মতো। এর মধ্যে শুটিং শুরু না করলে প্রচার-জটিলতায় পড়তে হবে। পরিস্থিতিটা সবাইকে মেনে নিতেই হবে।’