করোনার কারণে আপাতত এক ঘণ্টার নাটকে অভিনয় করছেন না প্রবীণ অভিনেত্রী দিলারা জামান। তিনটি ধারাবাহিকের কাজ নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। সম্প্রতি শেষ করেছেন রাজশাহীর গারোদের জীবন নিয়ে ‘সুজুকি’ ছবির কাজ। অভিনয় ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বললেন তিনি।
কেমন আছেন?
বয়স বাড়ছে, তারপরও ভালো আছি। করোনার সংক্রমণ এখন বাড়ছে, আমাদের বয়সী মানুষেরা আতঙ্ক ও ভয়ে আছে।
নিয়মিত শুটিং করছেন?
সারা দিন বাসায় থাকতে ভালো লাগে না। সবাই কমবেশি কাজে ফিরছে, আমিও সাহস নিয়ে শুটিং করছি। নিয়মিতই বলা যায়। শুটিংয়ে থাকলে নির্মাতারা আমার নিরাপত্তার ব্যাপারে অনেক সচেতন থাকেন। আমি নিজেও অনেক সচেতন থাকি।
যত দূর জানি আপনার মেয়ে শুটিং করতে নিষেধ করেছিলেন?
তারা তো খুবই সচেতন। সব সময় আমার খোঁজখবর নেয়। মেয়েকে না জানিয়েই গত আগস্টে শুটিং করি। মেয়ে শুরুতে জানলে রাগ করত। পরে অবশ্য জানিয়েছি। অভিমান করে মেয়ে বলেছে, ‘আমরা আর তোমাকে কিছু বলব না। যা ইচ্ছে করো।’
‘সুজুকি’ ছবির শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
ঢাকার বাইরে গিয়ে শুটিং করতে প্রথমে ভয়ই লাগছিল। গল্পটা ভালো লাগায় করেছি। গল্পে আমাকে সাঁওতাল বুড়ির চরিত্রে দেখা যাবে, যে একসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে অভিনয় করছেন, কবে থেকে শুটিং?
প্রথমে বাংলাদেশে ছবিটির শুটিং হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে কাজ পিছিয়ে গেছে। এখন শুটিং হবে মুম্বাইতে। আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে আমার অংশের শুটিং শুরু হবে। পরে ফেব্রুয়ারি মাসে আবারও যেতে হবে। ছবির জন্য মোট চারবার আমাকে ভারতে যেতে হবে। এতে আমি বঙ্গবন্ধুর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করব। চরিত্রটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গল্প চূড়ান্ত হওয়ার আগে ও পরে তাঁকে নিয়ে লেখা অনেক বই পড়েছি। এখন চিত্রনাট্য হাতে পেলেই চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিব।
প্রয়াত অভিনেতা আলী যাকেরের সঙ্গে প্রথম অভিনয় করেছিলেন, তাঁকে নিয়ে কিছু বলবেন?
মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় আমরা প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেছি। ভৈরবে শুটিং হয়েছিল। সেই থেকেই তাঁর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। গুণী একজন মানুষকে আমরা হারালাম। মঞ্চ নাটকের অভিনেতা বা নির্দেশক হিসেবেই নয়, স্বাধীনতা–উত্তরকালে নাট্য আন্দোলনকে তিনি এগিয়ে নিয়েছেন। দর্শককে মঞ্চে নিয়ে আনার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনেক বেশি।
করোনার সময় কাটছে কীভাবে?
নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রেখেছিলাম। কাজের বুয়ারও আসা নিষেধ ছিল। ঘরের সব কাজ নিজেই করছি। আর টিভি দেখে সময় কাটছে।
করোনায় সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে কোন বিষয়টি?
এই পরিস্থিতিতে বাঁচব কি বাঁচব না, সেটাই ভেবেছি বেশি। একসময় মনে হয়েছিল, সবাই এত ভালোবাসে, অথচ পৃথিবীতে কী এক অভিশাপ নেমে এল। এই সময়ে আমি মারা গেলে তো কেউ আমাকে দেখতেও আসবে না! সবাই দূরে থাকবে। এই ভাবনাই আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে।
অনেক তো অভিনয় করলেন। কোনো অতৃপ্তি আছে কী?
আমার বয়স ৭৮ হয়েছে। অথচ অভিনয় নিয়ে অতৃপ্তি রয়েই গেছে। কত পছন্দের চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলাম, কিছুই হলো না।
অনেকবার বলেছেন, শৈশবে ফিরে যেতে চান। ফিরে পেলে কী করবেন?
শৈশবের ঝড়-বৃষ্টির দিনগুলো আমি খুব মিস করি। যদি সেই সময় আবার ফিরে পেতাম, তাহলে ঝড়ের দিনে বাড়ির পাশের গাছ থেকে আম কুড়াতাম।
শিশুদের জন্য বর্তমান পৃথিবীটা কতটা বাসযোগ্য?
দিন দিন মানুষ লোভী হয়ে উঠছে। যে কারণে বর্তমান পৃথিবী শিশুদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। আমরা নদী খেয়ে ফেলছি, পাহাড় কেটে ফেলছি, পরিবেশ থেকে শুরু করে আমরা সবকিছু অতি লোভে নষ্ট করে ফেলছি। নিজের সন্তান কোন পরিবেশে বড় হবে, তা নিয়ে ভাবছি না। লোভী মানুষ প্রকৃতির ওপর এত নিষ্ঠুর অত্যাচার করেছে, এত ক্ষতি করেছে—যে কারণে প্রকৃতি ঠিকই আজ তার প্রতিশোধ নিচ্ছে।