মোশাররফ করিম
মোশাররফ করিম

জন্মদিনে মোশাররফ

পিঙ্গলকাঠি গ্রামের ছেলেটি যেভাবে আজ মোশাররফ করিম

অভিনেতা মোশাররফ করিমের জন্মদিন আজ। তারকাদের জন্মদিন উদ্‌যাপিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে। অথচ জন্মদিন নিয়ে এই অভিনেতার তেমন আগ্রহ নেই।

আজ অভিনেতা মোশাররফ করিমের জন্মদিন। তারকাদের জন্মদিন উদ্‌যাপিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে। অথচ জন্মদিন নিয়ে এই অভিনেতার তেমন আগ্রহ নেই। বয়স বেড়ে যাচ্ছে, এটি একটি কারণ। আরেকটি কারণ, টিকে থাকার ভাবনা! পেছন ফিরে তিনি ভাবেন, বেঁচে থাকার মতো কী করেছেন! তাঁর কাজগুলো কত দিন মানুষের মনে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে? কথায় কথায় অনেক কথা বললেন তিনি। পিঙ্গলকাঠি গ্রামের ছেলেটি যেভাবে আজ হয়ে উঠলেন মোশাররফ করিম।
মোশাররফ করিম

বাবাকে অনুকরণ করতে গিয়েই অভিনেতা
শৈশব থেকেই মোশাররফ বাবার নেওটা। বাবা যা যা করবেন, তাঁর যেন সেগুলোই করতে হবে। বাবার পিছে পিছে ঘোরা ছিল মোশাররফের অভ্যাস। এমনও হয়েছে, চাচাতো ভাই বা সহপাঠী-বন্ধুদের সঙ্গে খেলছেন, হঠাৎ দেখলেন দূরে বাবা আসছে...ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতেন। ‘যত দিন জীবিত ছিলেন, তত দিন তিনি ছিলেন আমার সেরা বন্ধু’—বলেন মোশাররফ করিম। বাড়িতে থাকলে বাবা যা করতেন, তিনিও তা–ই করতেন। বাজারে চা খেতে গেলে বাবা তাঁকেও সঙ্গে নিতেন। বাবা যেভাবে চা খেতেন, মোশাররফ করিমও খেতেন সেভাবে। এই অভিনেতার ধারণা, বাবাকে অনুকরণ করতে গিয়েই অভিনয়ের সুপ্ত বীজ জেগে ওঠে। এমনকি তাঁর কথা বলা, পড়া, চলা, হাঁটা এমনকি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার প্রায়ই মনে হয়, বাবা বেঁচে থাকলে তাঁকে শুটিংয়ে নিয়ে আসতাম। অন্য সবার মতো বাবা আমার শুটিং দেখে হেসে ফেলতেন। আমি ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতাম। বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে সবাই হেসে ফেলত।’

আমার প্রায়ই মনে হয়, বাবা বেঁচে থাকলে তাঁকে শুটিংয়ে নিয়ে আসতাম। অন্য সবার মতো বাবা আমার শুটিং দেখে হেসে ফেলতেন। আমি ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতাম। বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখে সবাই হেসে ফেলত।
মোশাররফ করিম, অভিনেতা

মোশাররফ করিমের শুরুটা
১৯৮৯ সালে থিয়েটারে কাজ শুরু করেন মোশাররফ করিম। সেই থেকে শুরু করে ক্যারিয়ারের বয়স আজ ৩১ বছর। থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একদিন জানলাম, তারিক আনাম খান নতুন একটি দল করবেন। তখনো দলের নাম ঠিক হয়নি। দলে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাস। আমি তখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি, রেজাল্ট হয়নি। অডিশনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা নেই। আমি সেটাই ফরমে লিখে ভাইভা দিতে আসি। পরে ১ হাজার ৪০০ জনের মধ্য থেকে বাছাই করে ২৫ জনকে নাট্যকেন্দ্রে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি তাঁদের একজন।

১ হাজার ৪০০ জনের মধ্য থেকে বাছাই করে ২৫ জনকে নাট্যকেন্দ্রে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি তাঁদের একজন।
মোশাররফ করিম

মোশাররফ হোসেন থেকে মোশাররফ করিম
মঞ্চনাটকে অভিনয়ের ১৬ বছর পর ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে টিভি পর্দায় নিয়মিত হন মোশাররফ করিম। এর মধ্যে অনেক নাটকেই অভিনয় করেছেন। সেসব নাটকের টাইটেলে তাঁর নাম যেত সংক্ষেপে, কে এম মোশাররফ হোসেন। দিন যায়, পরিচিতি বাড়ে। ২০০৫ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করেই নামের সঙ্গে ‘করিম’ যুক্ত করে নিজের নাম বদলে ফেলেন তিনি। মোশাররফ হোসেন থেকে হয়ে যান মোশাররফ করিম। ‘করিম’ কোত্থেকে এল? এই অভিনেতা বলেন, ‘করিম শব্দটি আমার বাবার নাম থেকে নেওয়া। বাবার নাম ছিল খলিফা মোহাম্মাদ আবদুল করিম।’

২০০৫ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করেই নামের সঙ্গে ‘করিম’ যুক্ত করে নিজের নাম বদলে ফেলেন তিনি। মোশাররফ হোসেন থেকে হয়ে যান মোশাররফ করিম। ‘করিম’ কোত্থেকে এল? এই অভিনেতা বলেন, ‘করিম শব্দটি আমার বাবার নাম থেকে নেওয়া। বাবার নাম ছিল খলিফা মোহাম্মাদ আবদুল করিম।’

ক্যারিয়ার বদলে গেল স্ত্রীর পরামর্শে
মোশাররফ করিম অভিনীত জনপ্রিয় নাটক ক্যারাম। প্রচারের পর থেকে বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়ায় নাটকটি, বিশেষ করে তরুণদের কাছে। এরপরই আলোচনায় চলে আসেন এই অভিনেতা। নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কিন্তু অভিনয়জীবনের টার্নিং পয়েন্ট এই নাটক শুরুতে করতেই চাননি তিনি। মোশাররফ বলেন, ‘ক্যারাম নাটকে যখন অভিনয়ের প্রস্তাব আসে, তখন অন্য একটি নাটকের শুটিংয়ের জন্য থাইল্যান্ডে যাওয়ার কথা। প্রথমবার দেশের বাইরে গিয়ে শুটিং করব, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল। তাই এই নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল না। পরে স্ত্রী জুঁই বলল, তুমি ক্যারাম নাটকটি করো, নাটকটি ভালো হবে। তারপর মত পরিবর্তন করি।’ ক্যারাম নাটকে অভিনয়ের আগে মোশাররফ করিম মাত্র একটি নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেটি ছিল সৈয়দ আওলাদ পরিচালিত ‘হেফাজ ভাই’।

যে কারণে শিল্পী হওয়া
ক্লাস থ্রিতে পড়াকালীন মোশাররফকে একটি কবিতা পড়তে বলা হলো। চাঁদ নিয়ে কবিতা। সেই কবিতা পড়ে একধরনের তৃপ্তি পেলেন তিনি। মোশাররফ করিম বলেন, ‘এই তৃপ্তি আমার চেতনের সঙ্গে অবচেতনের যোগাযোগ ঘটাল। আমি কবিতাটি পড়ে কবিতার মধ্যে ঢুকে যেতে শুরু করলাম। সেই ছোটবেলাতেই কবিতার মধ্যে ঢুকে যেতে পেরে যে আনন্দ পেয়েছি, সেই আনন্দটা একান্ত আমার, ভীষণ অন্য রকম অনুভূতি, অব্যক্ত অনুভূতি। সেই থেকেই ঠিক করে ফেললাম, এই আনন্দটা আমি সারা জীবন পেতে চাই। তাই তখন থেকেই আমার শিল্পী হওয়ার বাসনা।’
বাবার স্মৃতি

মোশাররফ করিম

মোশাররফ করিমের বাবা খুব আধুনিক, একই সঙ্গে শৌখিন মানুষ ছিলেন। দামি ঘড়ি, দামি কলম পছন্দ করতেন। আফসোসের কথাও জানালেন মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে সস্ত্রীক কলকাতা যাই। যাদবপুর সুপার সিটি মল নামে একটি মার্কেটে হঠাৎ লক্ষ করি বাবার ব্যবহার করা একটি নামী ব্যান্ডের একটি কলম। আমার খুব ভালো লাগল। কিন্তু আমার কাছে কোনো রুপি ছিল না, শুধু ডলার। ডলার ভাঙাতে গেলে প্লেন মিস করব। কলমটি কিনতে খুব ইচ্ছা করছিল। অনেক অনুনয়-বিনয় করেও ডলার দিয়ে সেই কলমটি কিনতে পারলাম না। মনটা ভেঙে গিয়েছিল।’