নাটকটির নাম ছিল ‘ট্যাটু’। সে নাটকে চাপাবাজির দৃশ্যে অভিনয় করেই দর্শকদের সামনে আসেন জিয়াউল হক পলাশ। তখন থেকেই তাঁর ‘চাপাবাজি’র অভিনয়কে বেশ পছন্দ করতে শুরু করেন দর্শক। নোয়াখালী জেলার আঞ্চলিক ভাষায় চাপাবাজি দিয়ে দর্শকদের কাছে পরিচিতি পান এ তরুণ। কাজল আরেফিনের নির্মাণে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিরিজে এখন নিয়মিত আঞ্চলিক ভাষায় ‘চাপাবাজি’ করছেন নোয়াখালী জেলার এই অভিনেতা।
পলাশ বলেন, ‘এটা ঠিক, প্রথম আমি দর্শকদের সামনে আসি চাপাবাজির চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। সে সময় আমার চরিত্রটি দর্শকদের ভালো লাগে। তারপর থেকে এখন আমার চাপাবাজিই দর্শক বেশি পছন্দ করে।’ তাঁর দাবি, তিনি অভিনয়ের প্রতি অনেক মনোযোগী। প্রতিটি নাটকে অভিনয়ের সময় ভাবেন এটাই তাঁর জীবনের শেষ দৃশ্য। সেভাবেই তিনি নিজের সবটা দিয়ে অভিনয় করার চেষ্টা করেন। এমনকি প্রতিটি দৃশ্যে ফুটিয়ে তোলার জন্য চিত্রনাট্যের বাইরে নিজে থেকে অনেক কিছু যোগ–বিয়োগ করেন এ শিল্পী। অভিনয়ের সময় তাঁর পুরো মনোযোগ থাকে কীভাবে ভালোভাবে শেষ দৃশ্যটি শেষ করবেন, সেদিকে। পলাশ বলেন, ‘হতে পারে যে দৃশ্যের জন্য ক্যামেরার সামনে আছি, এটাই আমার শেষ নাটকের শেষ দৃশ্য। এ জন্য চরিত্রটা সবার থেকে আলাদা করার জন্য যেমন ভাবি, তেমনি নিজেকে উজাড় করে সবটা দিয়ে অভিনয়ের চেষ্টা করি।’ অনেক আগে থেকে নাটক নির্মাণ করলেও নিয়মিত অভিনয় করছেন দুই বছর।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন পলাশ। কাজ করেছেন ইশতিয়াক আহমেদের সঙ্গে। অভিনয়ের পাশাপাশি এখনো নিয়মিত প্রতি মাসে একটি করে নাটক বানান তিনি। তিনি অভিনয় থেকে নির্মাণ করতেই বেশি ভালোবাসেন। তিনি বলেন, ‘দিন শেষে নির্মাতাই আমার আসল পরিচয়। আমি খুব বেশি অভিনয় করতে চাই না। এমন কিছু নির্মাতার সঙ্গে কাজ করি, তাঁদের না করতে পারি না। সবাই পরিচিত কাছের ভাই। গুছিয়ে নাটক নির্মাণ করতে আমার ভালো লাগে।’ তিনি সম্প্রতি ‘ঘরে ফেরা’ নামে একটি নাটক বানিয়েছেন। সেখানে অভিনয় করেন আফরান নিশো ও মেহ্জাবীন চৌধুরী।
‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নাটকটি এনটিভিতে প্রচারিত হচ্ছে। নাটকটি দর্শক ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। এই নাটকে ‘পারভেজ’ নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন পলাশ। নাটকে পারভেজকে বিভিন্ন সময় কবিতা বলতে দেখা যায়। এ তরুণ শিল্পী জানালেন, সেসব কবিতা চিত্রনাট্যে লেখা থাকে না। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই দৃশ্যের ভাব বুঝে কবিতা তাঁর মাথায় চলে আসে। ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’ নাটকের কবিতার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পেছনের গল্প টেনে এ অভিনেতা বলেন, ‘নাটকের গল্পে আমি নিজেই প্রথম হঠাৎ করে কবিতা প্রবেশ করাই। দর্শক সেটা পছন্দ করে। নির্মাতাও বিষয়টি নিয়ে নতুনত্ব পান।’ এরপর থেকে নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ তাঁকে একটি দৃশ্যে কবিতা আবৃত্তি করতে বলেন। সঙ্গে বুঝিয়ে দেন এবং কোন ধরনের ভাব প্রকাশ পাবে, সেটা। তারপর থেকেই কবিতাপাঠে উৎসাহ পান।
পলাশ বলেন, ‘একজন নির্মাতা হিসেবে শিল্পীদের গল্প বুঝিয়ে দেওয়ার অভ্যাস অনেক আগে থেকেই আছে। মোস্তফা কামাল রাজ ভাই যখন আমাকে কোনো দৃশ্যের ভাব বুঝিয়ে দেন, তখন দ্রুত সেটা বুঝতে পারি। এই গুণটি আমি নির্মাতা হওয়ার কারণে পেয়েছি।’ দর্শকদের শুধু বিনোদন দিতেই পলাশের ‘কবিতা তৈরি’ এবং আবৃত্তি করা বাড়তে থাকে। সেসব কবিতা ফেসবুকেও ভাইরাল হয়। তিনি বলেন, ‘বিনোদনের জন্যই এসব কবিতা বলি ভাই। দর্শকদের একটু ভালো লাগলে সেটা আমারও ভালো লাগে।’
ভক্তরা বেশির ভাগ সময় পলাশকে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাবাহিকটির সংলাপ শোনাতে অনুরোধ করেন। আঞ্চলিক ভাষায় অভিনয় প্রসঙ্গে এই অভিনেতা বলেন, ‘অনেকে মনে করে আমি আঞ্চলিক ভাষায় বেশি অভিনয় করি, কিন্তু এটা ঠিক নয়। আমি শুধু ব্যাচেলর পয়েন্ট ছাড়া অন্য নাটকে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি না। এই নাটকের ভিডিও ক্লিপগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে এটা দর্শকদের মনে হতে পারে।’ ভবিষ্যতে গল্প ও চরিত্রে বৈচিত্র্য আনতে চান এ শিল্পী।