নিজে নিজেই শাড়ি পরতে পারেন ওয়াতানাবে

পরনে শাড়ি, হাতে চুরি, বেণি করা চুল, কপালে লাল টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক। বেশভূষার এই বিবরণ বাঙালি নারীর। কিন্তু এই বেশের আড়ালে একজন জাপানি তরুণী সেজেছেন পূজার সাজে। আর এই সাজ একটি বাংলাদেশি নাটকে অভিনয়ের জন্য। জাপান থেকে পূজা দেখতে বাংলাদেশে আসা এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করছেন মে ওয়াতানাবে।

নাটকটি নির্মাণ করছেন গৌতম কৈরী। নাটকের গল্প শুনে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান এই জাপানি তরুণী। তাঁর কাছে চিত্রনাট্য পাঠান নির্মাতা। অনর্গল বাংলা বলতে পারলেও বাংলা পড়তে পারেন না তিনি। তাঁর বোঝার সুবিধার্থে নতুন করে রোমান হরফে বাংলায় চিত্রনাট্যটি লেখা হলো। সেটি হাতে পেয়ে দিনব্যাপী অনুশীলন করেন ওয়াতানাবে। গল্পটি তাঁর জীবনের সঙ্গেও অনেকটা মিলে গেছে বলে জানান তিনি।

জাপান থেকে পূজা দেখতে বাংলাদেশে আসা এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করছেন মে ওয়াতানাবে। সঙ্গে মনোজ প্রামাণিক

গল্পে দেখা যাবে অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক জাপানে থাকেন। পাঁচ বছর পর তিনি জাপান থেকে পূজায় দেশে আসেন। তাঁর সঙ্গে আসেন ওয়াতানাবে। ওয়াতানাবে বলেন, ‘আমিও মা-বাবা ও পরিবার রেখে এখানে (বাংলাদেশে) থাকি। সবাই আমাকে খুব আদর করে। শুটিং ইউনিটকে আমার নিজের বাড়ির মতোই মনে হচ্ছিল। শুটিংয়ে সবাই আমাকে যেভাবে আপন করে নিয়েছে, অনেক দিন পর জাপান গেলে আমার মা-বাবা এভাবেই আদর করে। শুটিং করে আমার খুব ভালো লেগেছে।’

বাংলাদেশে আসার পর থেকেই ওয়াতানাবে এখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে থাকেন। তখন থেকেই চেষ্টা করেছেন বাংলা ভাষার চর্চা করতে, এখানকার নারীদের শাড়ি, চুরি, টিপ, মালা পরতে। এ দেশে কোনো বিয়ের নিমন্ত্রণ পেলেও সেখানে শাড়ি পরে বাঙালি মেয়ের মতো হাজির হন তিনি।

শুটিংয়ে মে

মে জানান, কারও সাহায্য ছাড়া তিনি একাই শাড়ি পরতে পারেন। এরই মধ্যে ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘বৈশাখী ভালোবাসা’সহ চারটি নাটকে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত নাটকগুলো তাঁর জাপানের বন্ধু ও স্বজনেরাও দেখেন। নাটক দেখে কী বলেন তারা? তিনি বলেন, ‘বাংলা নাটক দেখে সবাই খুব খুশি। নাটকের মধ্যে মানুষজন কীভাবে থাকে, রাস্তায় কীভাবে চলাফেরা করে, এগুলো তাদের চোখে নতুন লাগে। বাংলাদেশের সবাই কীভাবে প্রেম করে, কীভাবে মান-অভিমান করে, কীভাবে বন্ধুত্ব করে, সেসব নাটকে দেখে সবাই খুশি হয়।’

‘নাটকের স্ক্রিপ্ট দেখে মনে হয়েছিল সাত দিন শুটিং হবে। সেখানে শুটিং হয়েছে মাত্র দুই দিন। এত কম সময়ে সবাই কীভাবে কাজ করে, ভেবে পাই না।’
মে ওয়াতানাবে

মে ওয়াতানাবে বাংলাদেশের একটি উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করেন। বর ও এক ছেলেকে নিয়ে তিনি বাংলাদেশে থাকেন। অভিনয় করতে তাঁর বেশ ভালো লাগে। তিনি জানান, এর আগে তিনি জাপানে মঞ্চনাটক করতেন। নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নাটকের স্ক্রিপ্ট দেখে মনে হয়েছিল সাত দিন শুটিং হবে। সেখানে শুটিং হয়েছে মাত্র দুই দিন। এত কম সময়ে সবাই কীভাবে কাজ করে, ভেবে পাই না। এবারে শুটিং ইউনিটটা খুবই ভালো লেগেছে। সবাইকে একটা পরিবার মনে হয়েছে।’

মে ওয়াতানাবে

গৌতম কৈরী জানান, শারদীয় দুর্গাপূজার বিশেষ এই নাটকটি এনটিভিতে দেখানো হবে। নাটকের নাম ‘ভৈরবী’। রচনা করেছেন শাওন কৈরী। এতে আরও অভিনয় করেছেন মনোজ প্রামাণিক, মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, শর্মিলী আহমেদ, তাথৈ প্রমুখ।