রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন নাট্যনির্মাতা ফজলুর রহমান। তিন মাস আগে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে তাঁর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। শরীরের ভোগান্তি যেন মনের ভোগান্তি না হয়, সে কারণে পরিবার তাঁকে জানায়নি, তিনি কী রোগে আক্রান্ত। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
ফজলুর রহমান একক ও ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করতেন। তাঁর নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘স্বপ্নচূড়া’, ‘দুষ্টু প্রেমের মিষ্টি গল্প’, ‘উল্টো পথে উল্টো রথে’। আজ বাদ জোহর বনশ্রীর একটি মসজিদে তাঁর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফজলুর রহমানকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
প্রয়াত ফজলুর রহমানের জামাতার বরাত দিয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক পরিচালক এস এ হক অলীক জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ দিকে ফজলুর রহমান স্ট্রোক করেছিলেন। তখন কেবল লকডাউন শুরু হয়েছে। তারপর থেকে তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারতেন না। একপর্যায়ে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। জুলাই মাসে বাসায় পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান। অর্থোপেডিক চিকিৎসকদের দেখানো হলে তাঁরা আরও কিছু পরীক্ষা দেন। সেসব পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর শরীরে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকে তিনি বাসায় অবস্থান করছিলেন। তবে ক্যানসারের খবরটি তাঁকে জানানো হয়নি।
এস এ হক অলীক বলেন, ‘ফজলুর রহমান ভাই খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। করোনার আগেও কাজ করেছেন। কোমরের একটি হাড় ভেঙে গেলে তিনি কাজ বন্ধ করে দেন। অনেক নির্মাতা ও সম্পাদক তাঁর হাত ধরে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। তিনি অনেক তরুণ নির্মাতাদের কাজ প্রযোজনা করেছেন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। সে কারণেই জানতে পারি যে পড়ে গিয়ে তাঁর হাড় ভেঙেছে। গতকাল রাতে হঠাৎ তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ বেলা ১১টার সময় তিনি মারা যান।’
ফজলুর রহমানের মৃত্যুতে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী লিখেছেন, ‘এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে নির্মাতা ফজলুর রহমান মারা গেছেন। কত স্মৃতি মানুষটির সঙ্গে। বড় বড় প্রতিষ্ঠিত পরিচালকের সঙ্গে তাঁর কাজ ছিল।’ চিত্রগ্রাহক খায়ের খন্দকার লিখেছেন, ‘কর্মজীবনে আমার প্রথম বস ছিলেন তিনি। ছিলেন অভিভাবকও। আপনাদের মতো কিছু মানুষের ছত্রচ্ছায়ায় আজ আমি এই অবস্থানে। আপনার পরজনমের শান্তি কামনা করছি।’
ফজলুর রহমান বিটিভির স্বনামধন্য সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নিয়মিত নাটক নির্মাণ ও প্রযোজনা করতেন, ছিলেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সদস্য।
জানা যায়, টেলিভিশন অঙ্গনে তাঁর ক্যারিয়ার প্রায় চার দশকের বেশি সময় ধরে। তিনি জন্মগ্রহণ করেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়িয়ায়। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যাসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।