তারকারা হঠাৎ কেন ফেসবুক লাইভে

নাটকের শুটিং চলছে। ফেসবুক লাইভে সেটাই শেয়ার করছেন তারকা শিল্পীরা
ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

নাটকের শুটিং চলছে। ফেসবুক লাইভে সেটাই শেয়ার করছেন তারকা শিল্পীরা। হয়তো শুটিংয়ের সেই দৃশ্যে তিনি নিজে নেই। তখন নিজেই মুঠোফোন হাতে হয়ে যান ক্যামেরাম্যান। বাদ যাচ্ছে না মেকআপ, আড্ডা, ডাবিং কোনোটিই। সঙ্গে যোগ হচ্ছে নাটকের ভিডিওর সম্প্রচার। ভক্তরাও এসব ভিডিও দেখে আনন্দ পাচ্ছেন। হঠাৎ ফেসবুকে বেশ সরব হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের তারকা অভিনয়শিল্পীরা। শুধুই কি প্রচারণা, নাকি এসবের পেছনে রয়েছে অন্য গল্প?

নিয়মিত ফেসবুকে ভিডিও ও লাইভ ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন চিত্রনায়ক সায়মন

লাইট, ক্যামেরা প্রস্তুত। পরিচালক দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন। দূর থেকে এগুলো ফেসবুকে লাইভ করছিলেন অভিনেতা নিলয় আলমগীর। অবশ্য শুটিংয়ের কোনো ব্যাঘাত না ঘটিয়েই ভক্তদের জন্য শেয়ার করছিলেন—কীভাবে শুটিং হয়। ফেসবুকে এ রকম আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়—বাঁশঝাড়ের এক পাশে একটি চেয়ারে ঘুমাচ্ছেন অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য। তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন একজন অভিনেত্রী। কিছু বলতে বলতে দৌড়ে পরিচালক কাছে এসে কিছু একটা বলে গেলেন তাঁদের। একই ঘটনা আবার ঘটতে দেখা গেল। টেলিভিশন দর্শকেরা হয়তো দৃশ্যটি দেখবেন একবার। কিন্তু বাঁশঝাড়ের উল্টো পাশ থেকে করা ফেসবুক লাইভের দর্শকেরা পুরোটাই দেখলেন। লাইভ করছিলেন অভিনেতা নূরে আলম। মেকআপ দিয়ে কীভাবে চেহারা বদলে ফেলা হয়, সেটা লাইভে ভক্তদের দেখিয়েছেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ। অনেক দিন ধরেই আবদুন নুর সজল, মেহজাবীন চৌধুরী, ইরফান সাজ্জাদ, সায়মন সাদিক, সালহা খানম, সাফা কবির প্রমুখ তারকা এভাবে লাইভে নিজেদের শুটিংসহ নানা মুহূর্তের ঘটনা দেখিয়েছেন ভক্তদের।

ফেসবুকে তিন বছর ধরে সরব অভিনেত্রী মেহ্‌জাবীন চৌধুরী

ফেসবুকে তিন বছর ধরে সরব অভিনেত্রী মেহ্‌জাবীন চৌধুরী। তবে শুটিং থেকে সরাসরি লাইভে এসে কখনই নাটকে নিজের চরিত্র ভক্তদের কাছে ফাঁস করেন না। এমনকি শুটিং থেকেও সরাসরি লাইভে আসেন না। তিনি শুধু বিভিন্ন প্রোগ্রাম বা প্রচারণার সময় আলাদা টিম দিয়ে শুটিং করান। পরে সেগুলো ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেন। এই অভিনেত্রী বলেন, ‘কাজের প্রচারণায় সব সময়ই সরব থাকি আমি। আমার ভালো লাগা অনেক ভিডিও শেয়ার করি। এতে আমার দর্শকেরা আমার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। আমার কাজের আপডেট জানতে পারেন। এখন প্রচারণার বড় মাধ্যম ফেসবুক। যে কারণে আপডেট থাকার চেষ্টা করি।’ তবে এসব কর্মকাণ্ড থেকে অর্থপ্রাপ্তির কোনো বিষয় আছে কি না, সেটা বিষয়ে জানাতে নারাজ এই অভিনেত্রী।

শাহরিয়ার নাজিম জয়ের একটি ফেসবুক লাইভে চিত্রনায়িকা রোজিনা

এ নিছক লাইভ নয়, আয়ের বড় উৎস অভিনেতা শাহরিয়ার নাদিম জয়ের। ফেসবুকের জন্য আলাদাভাবে কনটেন্ট তৈরি করেন তিনি। সম্প্রতি একটি নাটকের শুটিং স্পট থেকে একদল নায়িকাকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন তিনি। এমনটা প্রায়ই দেখা যায়। জয়ের দাবি, ফেসবুক থেকে তাঁর মাসে আসে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক থেকে আয় করা যায়, এটা আমার কাছ থেকেই শিখেছেন অনেক অভিনয়শিল্পী। কারণ, আমিই এটা প্রথম শুরু করি। পারসোনাল কোনো পেজের মধ্যে আমার ফেসবুক থেকে আয় সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত কেউ এত টাকা পায়নি। এটা সময়ের দাবি। এখন ঘরে টেলিভিশন থাকলেও সেটা মানুষ বেশির ভাগ সময় বন্ধ করে রাখেন। এখন মুঠোফোন সবার হাতে থাকে।’

ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন নুসরাত ফারিয়া

বেশ কিছুদিন ধরেই চলচ্চিত্র অভিনেতা সায়মন সাদিক ফেসবুকে সরব। তিনি ভক্তদের সঙ্গে নিয়মিত শেয়ার করছেন শিল্পী সমিতির বিভিন্ন ঘটনা, শুটিংয়ের দৃশ্য ও শুটিংয়ের পরিবেশ। সিনেমায় কীভাবে মারপিট ও গানের দৃশ্য ধারণ করা হয়, কীভাবে হয় ডাবিং—সেগুলোও তিনি ভক্তদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো ভক্তদের সঙ্গে সময় কাটানো বলতে পারেন। শুটিংয়ের মজার দৃশ্যগুলো ভাগাভাগি করি। এমন না যে শুটিংয়ের পুরো কোনো দৃশ্য দেখাচ্ছি। কারণ, তিন মিনিটে শুটিং হয় না। ডিরেক্টর অ্যাকশন বলার পর সেই মুহূর্ত থেকে অল্প কিছুক্ষণ কৌতূহলী মানুষকে দেখাই। এতে শুটিংয়ের কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।’ ফেসবুক থেকে কোনো আয় হয় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফেসবুক থেকে আয়ের বিষয়ে আমি আসলে জানি না।’ এভাবে শুটিংয়ের দৃশ্য ধারণ করলে অসুবিধা হয় না? পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ বলেন, ‘শুটিংয়ের ব্যাঘাত না ঘটলে কোনো অসুবিধা নেই। এর মধ্য দিয়ে নাটকের একরকম প্রচারণা হচ্ছে। কিন্তু দৃশ্যে মধ্যে পুরো গল্প বলে দিলে দর্শকদের আগ্রহ থাকবে না।’

মেকআপ রুম থেকে লাইভে আসেন ফারুক আহমেদ

সম্প্রতি এভাবে লাইভ ও ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা গেছে মোস্তাফা কামাল রাজ, নাদিয়া আহমেদ, শামীম জামান, আ খ ম হাসান, নুসরাত ফারিয়া প্রমুখ অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতাকে। মোশাররফ করিম, আফরান নিশো, অপূর্ব, তৌসিফ মাহবুব, জোভান আহমেদ, সাবিলা নূর, তানজিন তিশাদের মধ্যে কেউ কেউ বাড়তি আয়ের আশায় মনোযোগী হচ্ছেন নিজেদের ফেসবুক পেজে। এতে একদিকে তাঁদের যেমন প্রচার ও প্রসার হচ্ছে, অন্যদিকে ফেসবুক থেকে আয়ও হবে। তবে জয় মনে করেন, এখানে ঝাঁপিয়ে পড়লেই যে আয় হবে, তা নয়। ঘটনা লাগে, কনটেন্ট দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা তৈরির একটা ব্যাপার আছে।

ফেসবুক থেকে ভক্তদের সঙ্গে কাজের ছবি ভাগাভাগি করেন মোশাররফ করিম