ঈদুল ফিতরে টেলিভিশন ও ইউটিউবের জন্য নির্মিত প্রায় ২০টি নাটকে অভিনয় করেছিলেন মেহ্জাবীন চৌধুরী। ঈদুল আজহাতেও এ সংখ্যা প্রায় সমান। রাত-দিন সমানে শুটিং করছেন এখনো। গত ঈদের আগে রাত ১২টা পর্যন্ত একটি নাটকের শুটিং শেষ করে ভোররাত পর্যন্ত করতে হয়েছিল আরেকটির শুটিং। এই যে এত কাজ, সেগুলোর মধ্যে বৈচিত্র্য কতটা?
প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ, কষ্ট কিংবা হাসির চরিত্রের বাইরে কটি কাজ করতে পেরেছেন তিনি? অভিনেত্রী ও মডেল মেহ্জাবীন চৌধুরী বলেন, ‘নাটক তো নাটকই। মানুষের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব বেশি গল্প কি থাকে? যে পাঁচ-ছয় রকম গল্প থাকে, সেসব নিয়েই তো নাটক হবে। পৃথিবীতে যা ঘটছে, তার বাইরের কিছু নিয়ে তো নাটক করা যাবে না। সুতরাং ভিন্নতার সুযোগই বা কই?’ তিনি বলেন, ‘বৈচিত্র্যের জন্য সে রকম গল্প লিখতে হবে। ধরুন গল্পও লেখা হলো, কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে যদি এয়ারপোর্টের ভেতরে শুটিং করতে হয়, বিমানের ভেতরে শুটিং করতে হয়, সেটা কঠিন। গল্পের প্রয়োজনে নায়িকাকে বিমান চালাতে হয়, রকেট চালাতে হয়।’ তবে এই অভিনয়শিল্পী মনে করেন, বাজেট থাকলে অনেক সময় ভিন্ন গল্পের নাটক নির্মাণ সম্ভব।
তবে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী চরিত্রে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন মেহ্জাবীন। তিনি বলেন, ‘এই ঈদের জন্য বাসার গৃহকর্মী, হাসপাতালের আয়া, একজন পাকিস্তানি মেয়ের চরিত্রসহ অনেকগুলো ভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করেছি।’
এ প্রসঙ্গে এখনকার অন্যতম জনপ্রিয় তারকা আফরান নিশোর বক্তব্য কিছুটা ভিন্ন। ঈদুল ফিতরের জন্য প্রায় ৩৫টি নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ঈদুল আজহাতেও প্রায় ৩০টি নাটকের কাজ হবে। নিশো বলেন, ‘শুটিং শুরু করার আগে আমি নাটকের গল্প ও নিজের চরিত্র ভালোভাবে দেখে কাজ করি। বেশির ভাগ নাটকে ভিন্ন গল্প, ভিন্ন চরিত্র না পেলে কাজ করি না।’ জানা গেল, এবারও অন্তত ২০টি ভিন্ন চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। মেকানিক, দিনমজুর, হকার, কবিতাপ্রেমী, মোবাইল ফোন চোরসহ নানা চরিত্র।
এই ঈদে প্রায় ৩০টি নাটকে কাজ করছেন অপূর্ব। শুটিং করতে হবে চাঁদরাত পর্যন্ত। চরিত্রের বৈচিত্র্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দর্শকের চাহিদার ওপর নির্ভর করেই নাটক তৈরি হচ্ছে। এক ধরনের নাটক জনপ্রিয়তা পেলে সবাই ওই ধরনের নাটক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরীক্ষামূলক কাজও হচ্ছে, তবে কম। পরীক্ষামূলক কাজে বাজেটও লাগে।’
ঈদুল ফিতরে ছয়-সাতটি নাটকে কাজ করলেও এবারের ঈদে প্রায় ১৫টি নাটকে থাকছেন শবনম ফারিয়া। বেশির ভাগ নাটক একই ধাঁচের হলেও ব্যতিক্রম কয়েকটি চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নাটকের গল্প প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ, হাসি—এসবের বাইরে যেতে পারে না।
এই অভিনেত্রী বলেন, ‘ব্যতিক্রমী কাজ করতে হলে দরকার হয় যথেষ্ট বাজেট। তা ছাড়া আছে গল্পের ওপর সেন্সরশিপ। গল্পের প্রয়োজনে সঠিক জায়গায় শুটিংয়ে বাধা। সব মিলিয়েই ভিন্ন কাজ দিতে পারছি না আমরা।’
এবারে ঈদে প্রতিবন্ধী, নায়িকা, টমগার্ল, গৃহবধূ, চোরাকারবারিসহ বেশ কিছু চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে নুসরাত ইমরোজ তিশাকে। বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যতিক্রমী কাজ হচ্ছে না, সেটা ঠিক নয়। বিষয়ভিত্তিক কাজ প্রচুর হচ্ছে। সামনে আরও হবে। আমাদের অনেকেই বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে কাজ করছি। ভালো বাজেট থাকলে এসব কাজের পরিমাণ বাড়বে।’
তিশার সঙ্গে একমত হয়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এখন কিন্তু ভালো ভালো নাটক হচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ নাটক তৈরি হচ্ছে, সংখ্যানুপাতে হয়তো ভিন্ন ধরনের কাজ একটু কম। তারপরও ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমি যতগুলো কাজ করেছি, প্রায় সবই ভিন্ন গল্পের, ভিন্ন চরিত্রের।’
এই অভিনেতা মনে করেন, ভালো গল্প ও চরিত্রের অভাব আছে। আবার এ-ও ঠিক যে স্বাধীনভাবে গল্প লেখার সুযোগও কম। তিনি জানালেন, এ ঈদেও প্রায় ২০টি এক ঘণ্টার নাটকে ও ৫ থেকে ৬টি সাত খণ্ডের ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন তিনি।