বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে ঝরে গেল আরও একটি নক্ষত্র। সবার প্রিয় অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। আমাদের এ টি এম ভাই, বর্ণাঢ্য যাঁর অভিনয়জীবন। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। অবশেষে আজ সকালে সূত্রাপুরে তাঁর নিজস্ব বাসভবনে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তিনি।
অত্যন্ত মেধাবী, প্রাণবন্ত, বিনয়ী, সহজ-সরল আর সাদামাটা মানুষ ছিলেন এ টি এম ভাই। ছিলেন একজন আদর্শ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। অসুস্থতার সময় নিয়মিত তাঁর খোঁজখবর রাখতে চেষ্টা করতাম। হাসপাতালেও গিয়েছি। রুনী ভাবির সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো। এ টি এম ভাই ছিলেন ইত্যাদির বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোর প্রায় নিয়মিত শিল্পী। এ ছাড়া আমার অন্যান্য অনুষ্ঠান ও অনেকগুলো নাটকে তাঁকে নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তাই তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি, গভীরভাবে মেশার সুযোগ পেয়েছি। ছিল আন্তরিক সম্পর্ক।
ইত্যাদির প্রতি এ টি এম শামসুজ্জামানের একটা বিশেষ দুর্বলতাও ছিল। আর সে জন্যই চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও তিনি বারবার ইত্যাদির কথা স্মরণ করেছেন। হাসপাতালে দেখতে গেলে সুস্থ হয়ে আবারও ইত্যাদির ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আর তাই প্রথম যখন কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন, তখনই ভাবি আমাকে জানিয়েছিলেন, এ টি এম ভাই ইত্যাদিতে অভিনয় করতে চান। আমরা আমাদের নিজস্ব শুটিং স্পটে শুটিং করি। এখানকার পরিবেশ, খাওয়াদাওয়া—সবকিছুতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই তাঁর বিশ্বাস, এখানে এসে অভিনয় করলে তাঁর শারীরিক কোনো অসুবিধা হবে না। তাই এখান থেকেই তিনি আবার যাত্রা শুরু করতে চান।
আরেকজন বর্ষীয়ান অভিনেতা মাসুদ আলী খানের সঙ্গে জুটি করে সে সময় ইত্যাদির জন্য ছোট্ট একটি নাট্যাংশ নির্মাণ করেছিলাম। যেটি পরবর্তী সময়ে ইত্যাদিতে প্রচারিত হয়। আর ইত্যাদিতে করা সেই অভিনয়টুকুই ছিল এ টি এম ভাইয়ের জীবনের শেষ অভিনয়। অনেক শিল্পীরই বিকল্প তৈরি হয় কিংবা করা যায়; কিন্তু এ টি এম শামসুজ্জামানের কখনোই কোনো বিকল্প ছিল না। আর তৈরি হবে কি না, তা-ও জানি না। তাঁর প্রতিটি চরিত্রই ছিল তাঁর অভিনয়নৈপুণ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। এই মহান শিল্পীর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
সূত্র: ফেসবুকে হানিফ সংকেতের ভেরিফায়েড পেজ থেকে নেওয়া