অভিনেতা জাহিদ হাসান এখন পরিচালক। তাঁর পরিচালনায় দুটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে দুটি ধারাবাহিক। পরিচালনায় কি তিনি নিয়মিত হচ্ছেন? নিজের অভিনয়, পরিচালনা ও এ–সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
বিটিভি তাঁর হারানো গৌরব ফিরে পেতে নতুন কয়েকটি ধারাবাহিক নির্মাণ ও সম্প্রচার করছে। সেসবের মধ্যে আছে আপনার পরিচালনায় ‘পিছুটান’। এ ধারাবাহিক নিয়ে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
সব টেলিভিশন কমেডি নাটক চায়। কিন্তু বিটিভির ক্ষেত্রে আমি গোড়া থেকেই বলেছি যে আমি কমেডি করতে চাই না। ফ্যামিলি ড্রামা করব, যেমনটা বিটিভিতে আগে হতো। কমেডি করলে তো সেই একই জিনিস হবে, যা বেশ কিছুদিন করে এসেছি। অনেকে বলেন, ‘আরমান ভাই’য়ের মতো নাটক করেন। সেটা করলে তো হবে না! আমি তো চাইছি বিটিভির সেই আগের ফ্লেভার ফেরাতে। বিটিভির ডিজি, জিএম, আমার প্রযোজক—সবাই আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। এখনকার নাটকগুলোতে যা হয়, একটা–দুটা পরিচিত মুখ, বাদবাকি সব নতুন মুখ। কিন্তু আমার সিরিয়ালে একটা পরিবারের সদস্যদের চরিত্রে দেখা যাবে পরিচিত সব মুখ। বিটিভিতে আগে যে ধীরলয়ের পারিবারিক গল্পের নাটক দেখানো হতো, আমি সে রকম একটা নাটক দেখাতে চেষ্টা করেছি। কতটা সফল হব, দর্শক দেখার পর বুঝব। তবে আমার আস্থা আছে। অনেকে অবশ্য দুই পর্ব দেখেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। দুই পর্ব দেখে কোনো ধারাবাহিক সম্পর্কে কিছু বোঝা যাবে না। পৃথিবীর অনেক নাটক দেখবেন এক বা দুই পর্ব দেখে কিছু বোঝা যায়নি। আশা করি আমাদের ধারাবাহিকটি ভালো হবে।
আরটিভির ‘হুলস্থুল টিভি’ তো একেবারে উল্টো, তা–ই না?
নাটকটি অনেক আগে করেছিলাম। করোনার মধ্যে সব এলোমেলো হয়ে গেছে। নাটকের সঙ্গে যুক্ত অনেকে বিদেশে চলে গেছেন।
তাহলে বলা যায় আপনি পুরোদস্তুর পরিচালক হয়ে গেলেন?
তা বলা ঠিক হবে না। দুটি কাজ দুই সময়ে করা। একই সময়ে এসে সম্প্রচার হচ্ছে বলে মনে হতে পারে আমি বুঝি পরিচালনাকে পেশা হিসেবে নিয়ে ফেলেছি।
আপনি নিশ্চয়ই পরিচালক হিসেবে নিয়মিত হবেন?
হয়তো হব। তবে আমি একজন অভিনেতা। আমি অভিনয় করতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি।
পরিচালকদের নানা অভিযোগ। বাজেট কম, শিল্পী নির্ধারণ করে দেওয়াসহ নানা কিছু।
আপনার ক্ষেত্রে কী এ রকম বিড়ম্বনা হয়েছে?
আমি কাজ করার সময় কথাবার্তা খোলাসা করে নিয়েছি। আসলে আমাদের দেশের বিজ্ঞাপনগুলো যদি বিদেশি চ্যানেলে চলে না যেত, তাহলেই আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারতাম। তখন নাটকের দাম অনেক বেড়ে যেত। পরিচালকেরা তাহলে আরেকটু ভালোভাবে কাজ করতে পারতেন।
সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের খুব প্রিয় অভিনেতা, যাঁর ওপর তিনি আস্থা রাখতেন। অভিনেতা হিসেবে আপনার সেই পরিচালক কে, পরিচালক হিসেবে আপনার সে রকম অভিনেতা কে?
প্রথম কথা হচ্ছে, তাঁরা অনেক বড় মানুষ, তাঁদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করা যাবে না। তবে আস্থার কথা যদি বলতে হয়, প্রথম দিকে হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে যখন কাজ করতাম, বোধকরি তিনি আমার ওপর আস্থা রাখতেন। যেকোনো চরিত্রের ব্যাপারে তিনি আমার ওপর আস্থা রাখতে পারতেন। পরে আর সেইভাবে কোনো পরিচালককে পাইনি। আর নিজে পরিচালক হওয়ার পর সে রকম কাউকে পাইনি।
জাহিদ হাসান যে মানের অভিনেতা, তাঁকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেননি পরিচালকেরা, আপনাকে নিয়ে প্রায়ই এ রকম কথা শোনা যায়। আপনি কি কথাটার সঙ্গে একমত?
আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, আগে খুব রোমান্টিক চরিত্রে কাজ করতাম। এরপর শুরু করলাম কমেডি চরিত্রে অভিনয়, তারপর ভিলেনের চরিত্র। আমি আসলে ভার্সেটাইল অ্যাক্টর হতে চাই। কিন্তু দেখা যায়, পরিচালক বা চ্যানেলগুলো চায় ‘ওই রকম কমেডি’ অভিনয়। আসলেই তারা আমাকে নানা রকম চরিত্রে ব্যবহার করে না, এটা আমারও ভালো লাগে না। কাজ করতে হয় বলে করি, যেহেতু এটাই আমার পেশা।
সিনেমা পরিচালনার আগ্রহ আছে?
এখন নেই। এখন তো সিনেমা হলই নেই। সিনেমা বানিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরব? অনেকে আছেন বাইরে ফেস্টিভ্যালগুলোতে যান। সেটা পরের ব্যাপার। আমি বানালে আগে বানাব দেশের দর্শকের জন্য, তারপর বিদেশ। তবে আপাতত সিনেমা বানানোর চিন্তা নেই।
কোভিডের নতুন ঢেউ আসছে, উদ্বিগ্ন সবাই। চলমান কাজগুলো কীভাবে চালিয়ে নেবেন ভেবেছেন?
শুরুতে নানা রকম সতর্কতা ছিল। কিন্তু এখন দেখা যায়, কোভিড বলে কিছু নেই। শুধু শুটিংস্পটে নয়, রাস্তায় বের হলেও মনে হয় কোথায় কোভিড! ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি, নো মাস্ক নো সার্ভিস’ শিরোনামে আমি ও মৌ (তাঁর স্ত্রী নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম) সচেতনতামূলক একটা কাজ করলাম। যেখানে যাচ্ছি, ব্যক্তিগতভাবে এটা নিজেরা মেইনটেন করছি, সবাইকে বলার চেষ্টা করছি।
মঞ্চে ফেরার কথা ভাবছেন আপনার সমসাময়িক অনেকে, আপনি ফিরতে চান?
অনেকে মুখে বলে ফিরবেন, কিন্তু কে ফিরেছেন? আমি বলায় নয়, করে দেখানোয় বিশ্বাসী। মঞ্চে কাজ করব, যখন করব তখন অবশ্যই জানিয়ে করব।
একটি কোমল পানীয়র বিজ্ঞাপনে আপনাকে জিন হিসেবে বেশ মানিয়েছে। এ রকম ছোট ছোট ব্যতিক্রম কাজে মানুষের প্রশংসা পেলে কী মনে হয়?
আমি একটা চরিত্র থেকে বেরিয়ে আরেকটা চরিত্রে প্রবেশ করলে মানুষ অ্যাপ্রিশিয়েট করে। তখন দেখা যায়, সেই ঘরানাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাকে নানা রকম চরিত্রে কাজ করিয়ে নিচ্ছে কোথায়? পারলে করাক, তখন কেবল জিন কেন, পরির চরিত্রেও অভিনয় করব।