জাপানের কেন শিমুরা যেভাবে বাংলায় 'কাইশ্যা' হলেন

কেন শিমুরা বাংলায় কীভাবে ‘কাইশ্যা’ হয়ে উঠলেন, সে গল্পই শোনালেন চ্যানেলটির পেছনের দুই কারিগর।ছবি: সংগৃহীত
কেন শিমুরা বাংলায় কীভাবে ‘কাইশ্যা’ হয়ে উঠলেন, সে গল্পই শোনালেন চ্যানেলটির পেছনের দুই কারিগর।ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৯ মার্চ মারা গেছেন জাপানের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা কেন শিমুরা। ১৯৫০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাপানের টোকিও শহরে জন্ম নেওয়া প্রবীণ এই অভিনেতা বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছে ‘কাইশ্যা’ নামে পরিচিত। তাঁকে এই পরিচিতি এনে দিয়েছে ‘পাগলা ডিরেক্টর’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল। কেন শিমুরা বাংলায় কীভাবে ‘কাইশ্যা’ হয়ে উঠলেন, সে গল্পই শোনালেন চ্যানেলটির পেছনের দুই কারিগর।

‘পাগলা ডিরেক্টর’ ইউটিউব চ্যানেলটি পরিচালনা করেন দুই ভাই—মোরশেদ আহমেদ ও মনসুর আহমেদ। মোরশেদ মানুষের কাছে সুজন নামে পরিচিত, আর মনসুর আহমেদকে সবাই চেনেন সজীব নামে। ২০১৭ সালে হাস্যরসাত্মক ভিডিও প্রকাশের জন্য ‘পাগলা ডিরেক্টর’ চ্যানেলটি শুরু করেছিলেন মোরশেদ আহমেদ। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাবেক এই ভিডিও এডিটর জানালেন, ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালা মেনে শুরু থেকেই তাঁরা বিভিন্ন ভাষার পুরোনো কমেডি ধারাবাহিকগুলো ডাব করতেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু করেছিলেন কেন শিমুরার ধারাবাহিকের কাজ। বাংলায় ডাব করার সময় বিভিন্ন চরিত্রের কণ্ঠ দিতেন তিনিসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরাই। তবে শুরু থেকে কেন শিমুরার কণ্ঠ দিতেন মনসুর আহমেদ।

‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফানি দরজা’ নামে প্রথম ভিডিওটি ইউটিউবে তুলে দেওয়ার পর ভালো সাড়া পান তাঁরা। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৯০ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। মনসুর আহমেদ বলছিলেন, ‘এরপর “ট্রেনে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চোর” নামে একটি পর্ব ডাব করি, সেখানে কেন শিমুরাকে বয়স্ক মানুষ হিসেবে দেখানো হয়। প্রথমটায় সহজাতভাবে কণ্ঠ দিলেও সেই ভিডিওতে কণ্ঠও দিয়েছি একটু অন্যভাবে।’

কাইশ্যা পরিচিতি এনে দিয়েছে ‘পাগলা ডিরেক্টর’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল। ছবি: সংগৃহীত

নাম দিলেন ‘কাইশ্যা’
ভিডিওগুলো যখন জনপ্রিয় হতে শুরু করল, তখন মনসুর আহমেদ ভাবলেন, প্রধান চরিত্রের একটি মজার নাম দিলে কেমন হয়! বড় ভাই মোরশেদ আহমেদকে বলেন বিষয়টি। মোরশেদই নাম প্রস্তাব করলেন—কাইশ্যা। এমন নাম কেন? মোরশেদ বলছিলেন, ‘আমরা নোয়াখালীর মানুষ। কাইশ্যা নামটি তুচ্ছার্থে আমাদের এলাকায় প্রচলিত। বিভিন্ন পর্বে কেন শিমুরাকে দেখা যেত পুলিশ, চিকিৎসক, অফিসের বড় কর্তা, চোরসহ নানা চরিত্রে। কিন্তু তিনি অধিকাংশ চরিত্রে ছিলেন ব্যর্থ মানুষ, কাজ করতে গিয়ে প্রায় গুবলেট পাকিয়ে ফেলতেন। সে জন্যই কাইশ্যা নামটি মাথায় আসে।’

সেই থেকে কাইশ্যা নামেই নতুন নতুন পর্বে কণ্ঠ দিতে শুরু করেন মনসুর আহমেদ। এখন পর্যন্ত ২০০টির বেশি পর্ব তৈরি করেছেন তাঁরা। মোরশেদ বলেন, ‘আমাদের চ্যানেলের ভিডিওগুলো এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৯ কোটি বার দেখা হয়েছে।

১৯৫০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাপানের টোকিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন কেন শিমুরা। ছবি: ফেসবুক থেকে

মোরশেদের জাপানযাত্রা
কেন শিমুরা নামটির সঙ্গে মোরশেদের প্রথম পরিচয় ২০০৫ সালে। তখন তাঁর বয়স ১৯ বছর। পরিবারের একজনের সহযোগিতায় সে বছর মোরশেদ গিয়েছিলেন জাপানে। জীবন পরিবর্তনের তাগিদে সেই জাপানবাস দীর্ঘ না হলেও টিভিতে দেখেছিলেন শিমুরার বেশ কিছু সিরিজ। তবে জাপানি এই অভিনেতার পর্বগুলো ডাবিংয়ের আগ্রহ পেয়েছিলেন পরিচিত একজনের মাধ্যমে। মোরশেদ বলছিলেন সে কথা, ‘ইউটিউব চ্যানেল যখন শুরু করলাম, তার কিছুদিন পর একজন একটি লিংক পাঠিয়েছিলেন, সেটা ছিল কেন শিমুরার কোনো একটি সিরিজের। আমি যেহেতু জাপানি ভাষা কিছুটা বুঝি, সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়েই ক্রিপ্ট তৈরি করেছিলাম, তবে নিজের মতো করে।’

একটি ধারাবাহিকের দৃশ্যে কেন শিমুরা। ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্নটা অপূর্ণই থাকল
মোরশেদ আহমেদ ও মনসুর আহমেদ এখন নোয়াখালীর নিজের বাড়িতেই আছেন। ৩০ মার্চ কথা হচ্ছিল দুই ভাইয়ের সঙ্গে। কেন শিমুরার মৃত্যুসংবাদে শোকাহত তাঁদের পুরো পরিবার। মোরশেদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘একটি ইউটিউব চ্যানেল জনপ্রিয় হওয়া মানে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া, পরিচিতি পাওয়া। আমরা এটা পেয়েছি কেন শিমুরার মাধ্যমে। শেষ রাতেই তাঁর মৃত্যুসংবাদ জেনেছি, এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।’

মনসুর আহমেদ বলেন, ‘কেন শিমুরার কণ্ঠের সঙ্গে সহজাতভাবেই আমার কথা বলার ধরনের মিল আছে, তাই কণ্ঠ দিতে কষ্ট হয়নি। আনন্দ নিয়েই কাজটি করতাম। একসময় অজান্তেই যেন কেন শিমুরাকে ধারণ করতে থাকি। ভীষণ ইচ্ছা ছিল তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার। চেষ্টাও করেছি। এত বড়মাপের অভিনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা তো সহজ কথা নয়। কিন্তু এখন তো সেই অপেক্ষাও চিরতরে থমকে গেল।’

স্বপ্নটা অধরা থাকল বলেই কেন শিমুরার কাজকে আরও বেশি ছড়িয়ে দিতে চান ইউটিউবার ভ্রাতৃদ্বয়। ‘কাইশ্যা’ সিরিজের নতুন নতুন পর্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে বাঁচিয়ে রাখবে জনপ্রিয় এই অভিনেতাকে।

‘পাগলা ডিরেক্টর’ ইউটিউব চ্যানেলটি পরিচালনা করেন দুই ভাই—মোরশেদ আহমেদ ও মনসুর আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত