কঠিন চ্যালেঞ্জ আর অস্তিত্ব রক্ষার একটা বছর পার করল টেলিভিশন নাটক। যে সময়ে নাটক ও টেলিছবির শুটিং নিয়ে প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের ব্যস্ত হয়ে ওঠার কথা, সে রকম এক সময়ে হঠাৎ সবকিছু থমকে যায়। মার্চের লকডাউনে ঘরবন্দী হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। তখনো থেমে যাননি কেউ। ঘরে বসে নাটক নির্মাণের পথ খুঁজে নিয়েছেন অনেক নির্মাতা।
দুই ঈদের নাটকের দিকে দৃষ্টি ছিল দর্শকের। সংকট আর অনিশ্চয়তার মাঝেও কিছু নাটক দর্শকমনে আশার সঞ্চার করেছে। যে কয়টা নাটক আশার সঞ্চার করেছে, সেসবের গল্প ছিল মানবিক। তবে সব কটি নাটকের শুটিং হয় করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে। অন্যদিকে নতুন স্বাভাবিকে অনেকেই শুটিং শুরু করেছিলেন, সেখানে করোনা মহামারির নানা সংকট উঠে এসেছে। শুটিং করতে গিয়ে অনেক শিল্পী, পরিচালক ও কলাকুশলী আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে।
বেশ কয়েক বছর ধরে নাটকে অভিনয়শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারীর সংখ্যাকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। এ নিয়ে এজেন্সি, টেলিভিশন এবং প্রযোজক-পরিচালকের মধ্যে এক শীতল দ্বন্দ্ব লক্ষ করা গেছে। তবে করোনাকালে প্রচারিত বেশ কিছু নাটকের অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁদের অনেকের লাখ লাখ অনুসারী নেই।
এ বছরের যে নাটকগুলো দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে ভিকটিম, বোধ, কেন, শহর ছেড়ে পরানপুর, ইতি মা, গিরগিটি, টু লেট, ভুল এই শহরের মধ্যবিত্তদেরই ছিল, মা, বাবা, মনের মতি মনের গতি, ইরিনাসহ বেশ কিছু নাটক। বেশির ভাগ নাটক নিয়ে আলোচনা হয়েছে ফেসবুক আর ইউটিউবে। আর যাঁরা দেখেছেন, বেশির ভাগ দর্শক তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউটিউবে। বেশ কিছু ধারাবাহিকের সঙ্গেও জড়িয়ে গিয়েছিলেন নাটকের দর্শকেরা। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্যামিলি ক্রাইসিস, পরের মেয়ে, বাকের খনি ও মান অভিমান।
দর্শক এখন টেলিভিশনের চেয়ে ইউটিউবে বেশি নাটক দেখেন, এ বিষয়ে একমত হয়েছেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু। তিনি বললেন, ‘এখন ইউটিউবভিত্তিক কাজই হচ্ছে বেশি। আরেকটা নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে, একবার টেলিভিশনে প্রচারের পর সারা বছর ইউটিউবে দেখানো, যা মোটেও ভালো নয়। নাটক প্রচারের ৩০ মিনিট পার না হতেই ইউটিউবে চলে যাচ্ছে। তাহলে দর্শক কেন দেখবে। একটা নাটক টেলিভিশনে প্রচারের পর কমপক্ষে মাসখানেক পর ইউটিউবে প্রকাশ করা উচিত। তা না টেলিভিশনে নাটক আরও বড় ধরনের অস্তিত্বের সংকটে পড়বে।’
অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক আবুল হায়াত মনে করেন, নাটকের প্রতি দর্শকের আগ্রহ কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এখন টেলিভিশনে নাটক দেখানোর চেয়ে ইউটিউবে প্রচারের মাধ্যমে রোজগারের পথ বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে!’ তা ছাড়া নাটকের মান ধীরে ধীরে কমছে বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, দুর্বল গল্প, সীমাবদ্ধ লোকেশন, একই নায়ক-নায়িকার প্রেম দেখে বিরক্ত টেলিভিশন দর্শকেরা। তবে করোনাকালে প্রচারিত কিছু নাটক প্রচলিত ধারা থেকে বের হওয়ার চেষ্টাও করেছে। সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে সামাজিক সব চরিত্র, যা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিল বাংলাদেশের টিভি নাটকে। প্রেমের গল্পের বাইরে ছিল ঘুষ, দুর্নীতি, বেকারত্বসহ নানা সমস্যা।
বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান তারেক আখন্দ বললেন, ‘ভীষণ চ্যালেঞ্জিং বছর পার করেছি আমরা। বছরের একটা বড় সময় কোনো ধরনের শুটিং করতে পারিনি। তবে দিন শেষে প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মাঝে আশার আলো থাকে। নতুন কিছু কাজ শুরু করতে পেরেছি। ভালো কিছুর অপেক্ষায় আছি।’