বিনোদনপিপাসু দর্শক এখন টেলিভিশনের বাইরে নানা মাধ্যমে খুঁজে নিচ্ছেন বিনোদন। সে রকম একটি মাধ্যম হিসেবে কিছুদিন হলো এসেছে ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট। মোবাইল অ্যাপস এবং অনলাইনের মাধ্যমে দেখা যায় এসব স্ট্রিমিং সাইট। স্ট্রিমিং সাইটের মাধ্যমে উপভোগ করা যায় নাটক, টেলিছবি এবং ওয়েব সিরিজ। দেখা যায় চলচ্চিত্রও।
দেশের এ রকম স্ট্রিমিং সাইট বায়োস্কোপ ও আইফ্লিক্স। প্রথম সারির দুটি মুঠোফোন অপারেটরের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইব করে দেখা যায় এই স্ট্রিমিং সাইটগুলো। তা ছাড়া বাংলাদেশ থেকে দেখা যাচ্ছে ভারতের হইচই, আড্ডা টাইমস, জি ফাইভ স্ট্রিমিং সাইটগুলো।
টেলিভিশন থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নেওয়া দর্শকদের জন্য নানা ধরনের বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) নিয়ে কাজ করছে এই সাইটগুলো। দেখানো হয় চলচ্চিত্র, একক নাটক ও ওয়েব ধারাবাহিক। গত বছর মুক্তি পাওয়া জয়া আহসান প্রযোজিত ও অভিনীত দেবী এ বছর দেখা যাচ্ছে বায়োস্কোপে। আবার তৌকীর আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্র ফাগুন হাওয়ায় দেখা যাচ্ছে আইফ্লিক্সে।
তবে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ওয়েব ধারাবাহিক। কয়েক পর্বের এসব ওয়েব ধারাবাহিক মুক্তি দেওয়া হয় এখানে। অনেক সময় দু-একটি পর্ব ফ্রি দেখা গেলেও বাকিটা দেখতে নির্দিষ্ট মূল্যের টাকা দিতে হয় বা ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে হয়। এ ছাড়া ব্যাংকিং কার্ডের মাধ্যমে হওয়া যায় সাবস্ক্রাইবার।
সম্প্রতি বসুন্ধরার জিপি হাউসে কথা হয় বায়োস্কোপের প্রোডাক্ট ম্যানেজার রাফায়েল মাহবুবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে বায়োস্কোপ। ২০১৮ সালে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় বায়োস্কোপ। তবে বাংলাভাষীদের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই অ্যাপের কনটেন্ট তৈরি করা হয়।
রাফায়েল মাহবুব জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার কনটেন্ট উঠেছে বায়োস্কোপে। প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ লাখ মানুষ ঢুঁ মারেন এখানে। এদিকে আইফ্লিক্সে ক্রমাগত দর্শক বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে তাঁরা সংখ্যাটা বলতে চাননি।
এ ছাড়া বাংলাদেশি দর্শকদের কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে এ দেশে কার্যালয় খুলেছে কলকাতাভিত্তিক ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট হইচই। আর ভারতের জি নেটওয়ার্কের টিভি চ্যানেলগুলোতে বাংলাদেশি দর্শকদের উদ্দেশে নিয়মিত তাদের ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট জি ফাইভের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কলকাতাভিত্তিক আড্ডা টাইমসে দেখানো হচ্ছে তৌকীর আহমেদ ও বিজরী বরকতউল্লাহ অভিনীত শিশুতোষ ধারাবাহিক বাবা থাকে বাসায়।
হইচই বাংলাদেশের বিজনেস লিড সাকিব আর খান বলছেন, সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের জন্য এই অ্যাপ। আর বাংলাদেশের মেধাবীদের কাজের সুযোগ তৈরি করতেই এখানে অফিস নিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে যেকোনো দর্শক হইচইয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে সাবস্ক্রাইবার হতে পারবেন। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বাংলাদেশি দর্শকের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন সাবস্ক্রাইবার বাড়ছে বলে জানান তিনি।
সাকিব বলেন, যত বেশি এ রকম এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাপ আসবে, তত বেশি দর্শক নানা ধরনের কনটেন্ট উপভোগ করতে পারবেন। প্রতিযোগিতা হবে। সেরা কাজের প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই সেরা কাজ দেখবেন দর্শক।
সম্প্রতি হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছে অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত, অপি করিম অভিনীত ‘ঢাকা মেট্রো’ নামের একটি ওয়েব ধারাবাহিক। বিনোদনের এই নতুন মাধ্যম নিয়ে কথা হয় অমিতাভ রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা আলাদা করে আমাদের দেশে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারা পৃথিবীতে এটা নতুন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিনোদনের নতুন কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি এটাতে অভ্যস্ত হতে পারব, তত মঙ্গল। কারণ আমার মনে হয়, এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক এ ব্যাপারে বলেন, অনলাইনে এখন মানুষ বেশি সময় কাটাচ্ছে এবং ব্যবহারকারী বাড়ছে, এ কারণে এটার একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনের এসব কনটেন্ট বিজ্ঞাপন বিরতি ছাড়া দেখা যায়। তবে কোনো নীতিমালা বা সেন্সরশিপ না থাকায় একটু ঝুঁকিও আছে। এদিকটা একটু খেয়াল রাখা জরুরি। কারণ, এখানে অ্যাডাল্ট কনটেন্টের অভিযোগও উঠেছে। তবে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে এই স্ট্রিমিং সাইটগুলোর সম্ভাবনা আছে।