গানের চেয়ে নাটক নির্মাণের ব্যাপারে বেশি তৎপর হয়ে উঠছে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। যে প্রতিষ্ঠানগুলো এত দিন অডিও ও গানের ভিডিও নিয়ে কাজ করে আসছিল, দুই বছর ধরে সেগুলোর কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গানের পাশাপাশি নাটক ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের দিকে ঝুঁকেছে। নাটকে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে তারা।
অডিও-ভিডিওর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অডিও ও ভিডিও গানের বাজার পড়ে গেছে। যে পরিমাণ বিনিয়োগ করে অডিও ও ভিডিও গান প্রকাশ করা হচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাভ তো দূরের কথা, বিনিয়োগের অর্থই ফিরে আসছে না। টিকে থাকার তাগিদেই প্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্য হয়ে গানের পাশাপাশি নাটক প্রযোজনায় হাত দিয়েছে।
২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে অডিও ও ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ধ্রুব মিউজিক স্টেশন। গত বছর থেকে নাটক ও অল্প কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেছে তারা। ঈদুল ফিতরে তারা প্রযোজনা করেছিল চারটি নাটক। এবার ঈদুল আজহায় করছে ১০টি নাটক। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও গায়ক ধ্রুব গুহ জানান, গত দুই বছর অডিও-ভিডিও গানে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে, এখনো তার আসল টাকা ঘরে আসেনি। এখন গানের বাজার ভালো যাচ্ছে না। অডিও-ভিডিও প্ল্যাটফর্ম থেকে আগে যে পরিমাণ টাকা আসত, এখন সে রকম আসছে না। সবচেয়ে বড় ধসটি নেমেছে ওয়েলকাম টিউনের আয়ের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে নাটক প্রযোজনা করছি। নাটক থেকে যে আয় হয়, সেটা দিয়ে সংগীতকে কিছুটা হলেও সাপোর্ট দিতে পারছি। কারণ গানকে বাঁচাতে হবে।’
নাটক থেকে আয়ের ব্যাপারে তিনি জানান, নাটকের স্থিতিকাল ভিডিও গানের তুলনায় বড় হওয়ায় ডিজিটালি কিছু বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। তা ছাড়া নাটক নির্মাণে অনেক সময় স্পনসর পাওয়া যায়। পাশাপাশি টেলিভিশনে একবার প্রচার করলে সেখান থেকে কিছু টাকা আসে। এরপর প্রতিষ্ঠানের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারের পর কিছু লাভ আসে।’
একই কথা জানালেন অডিও-ভিডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভির স্বত্বাধিকারী মালিক সাহেদ আলী। গত বছর থেকে নাটক প্রযোজনায় হাত দিয়েছেন তিনি। জানালেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে ঈদের পর থেকে একটানা নাটক নির্মিত হবে। তিনি বলেন, ‘গানের বাজার অনেকটাই স্লো হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানকে তো বাঁচাতে হবে। তা ছাড়া আমি তো অন্য ব্যবসা জানি না। তাই প্রতিষ্ঠানকে ধরে রাখতে নাটকে বিনিয়োগ করছি। নাটকের কনটেন্ট বড়। এখানে লাভও আসছে। ফলে নাটকের টাকা থেকে গানের ভর্তুকি দিতে পারছি।’
পুরোনো নাটক কিনে নিজেদের চ্যানেলে চালাত সিডি চয়েজ। গত বছর থেকে নিজেরাই নাটকে বিনিয়োগ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ঈদুল ফিতরে চারটি নাটক নির্মাণ করেছে তারা। ঈদুল আজহায় করছে ১০টি। সিডি চয়েজের কর্ণধার জহিরুল ইসলাম দুঃখ করে বলেন, ‘গত রোজার ঈদে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাতটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করেছি। এখনো বিনিয়োগের ১০ ভাগ টাকাও আসেনি। তাহলে প্রতিষ্ঠান কীভাবে বাঁচবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন মিউজিক ভিডিওর দর্শক কমে গেছে। অডিও গানের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আহামরি আয় নেই। ওয়েলকাম টিউনের আয় শতকরা ৭০ ভাগ কমে গেছে। ফলে নাটক প্রযোজনা করছি। নাটকে কিছুটা আয় আসছে।’
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি গানচিল, জি সিরিজ, লেজারভিশন, ইগলস্, সুরঞ্জলীর মতো অডিও-ভিডিও প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নাটকে বিনিয়োগ শুরু করেছে।