বিনোদন অঙ্গনে আলো ছড়ানো অনেক তারকার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিকাশে বড় ভূমিকা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁরা সেরা শিক্ষকের সান্নিধ্য যেমন পেয়েছেন, তেমনি পেয়েছেন অসাধারণ সব বন্ধুর সাহচর্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলেন ফেরদৌসী মজুমদার।
১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হই। কড়া শাসনের বেড়ি পেরিয়ে সেই আমার প্রথম স্বাধীনতা। আমাদের বাড়িতে নাচ–গান, সিনেমা দেখা, থিয়েটার সব নিষিদ্ধ ছিল। ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে পরিবেশটা তাই এত ভালো লেগেছে। ওখানকার জীবনটাই সবচেয়ে মধুর লাগত। অনেকে আছে না, স্কুল-কলেজ ভালো লাগে, কিন্তু আমার ভালো লেগেছিল ইউনিভার্সিটি।
আমার বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষককে কতটা মর্যাদা দিতে হয়, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে শিখেছি। আনিসুজ্জামান স্যার, মোফাজ্জল হায়দার স্যার, রফিক স্যার, আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্যার—আমরা মনে করতাম তাঁরাই আমাদের অভিভাবক।
আমরা মাঠেও যদি বসে থাকতাম, একজন শিক্ষককে দেখলে সম্মান দেখিয়ে দাঁড়িয়ে যেতাম। কিন্তু আবার যে সাংঘাতিক দূরে দূরে থাকতাম, সেটাও নয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাসাহাসি হতো।
আমার ডিস্ট্রিক্ট জাজ বাবা বলতেন, ‘আমি কিচ্ছু কইতাম ন, তোরা যখন ইউনিভার্সিটিতে ঢুকবি তখন নিজের পছন্দমতো যা করার করে নিবি।’ কেন বলতেন? কারণ, তখন বুদ্ধি পরিপক্ব হবে। তোমার সঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষমতা হবে। নিজের সঙ্গে তর্ক করতে পারবে। পছন্দ–অপছন্দকে মূল্যায়ন করতে পারবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, সাহস থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রথম সিনেমা দেখি। সপ্তাহে এক দিন, মঙ্গলবার সিনেমা দেখতাম। ‘নাজ’ তো ছোট হল ছিল। লেখা থাকত হাউসফুল। কিন্তু আমি গিয়ে যখন কাউন্টারে দাঁড়াতাম, হলের লোক বলত, আপা আপনাদের টিকিট কাউন্টারে রাখা আছে। আমরা যে নিয়মিত সিনেমা দেখতাম, সবাই চিনে ফেলেছিল।
একদিন গিয়ে দেখি, আমার বড় ভাই শেলী (আবুল ফাতাহ মোহাম্মদ ইকবাল)। আমাকে দেখে সে চমকে গেছে, তাকে দেখে আমি এরপর হেসে ফেলছি। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েই আমি স্বাধীনতার অর্থ বুঝেছি, তার সঠিক ব্যবহার শিখেছি।