ক্ষমা চেয়ে পার পাননি সারিকা

সারিকা সাবরিন
সারিকা সাবরিন

অপেশাদার আচরণের অভিযোগে গত ১ আগস্ট নিষিদ্ধ করা হয় মডেল ও অভিনয়শিল্পী সারিকা সাবরিনকে। ছয় মাসের জন্য তাঁর কাজের ওপর দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। এই সময়ে তাঁকে নিয়ে কেউ কোনো নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র, গানের ভিডিও বানাতে পারবে না। সারিকার বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ। এদিকে নিষিদ্ধ হওয়ার দুই মাসের মাথায় ফেসবুক ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দেন সারিকা। ক্ষমা চাওয়ার কারণ হিসেবে বলেছেন, জীবন নিয়ে নিজের উপলব্ধি থেকে ক্ষমা চেয়ে আবারও কাজে মনোযোগী হতে চান তিনি। এদিকে সারিকার এই ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম।

সারিকা সাবরিন

চলতি বছরের ২১ মার্চ নাটকের শুটিংয়ে নেপাল যাওয়ার কথা ছিল অভিনয়শিল্পী সারিকার। সে অনুযায়ী সারিকা শিডিউলও দেন। অগ্রিম পারিশ্রমিক ৫০ হাজার টাকা, ফিরতি টিকিট ও নাটকের চিত্রনাট্য দেওয়া হয় তাঁকে। আগের দিন ২০ মার্চ সারিকার সঙ্গে শুটিং ইউনিট যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সময়মতো বিমানবন্দর পৌঁছাবেন। ২১ মার্চ শুটিং ইউনিট বিমানবন্দর যাওয়ার পর সেখানে সারিকাকে পায়নি। তখন যোগাযোগ করা হলে সারিকার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সারিকা ছাড়াই শুটিং ইউনিট নেপাল চলে যায়। সারিকার এমন অপেশাদার আচরণের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী নাটকগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রযোজক আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন। পরে নেপাল থেকে ফিরে প্রযোজক টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনে সারিকার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ নানাভাবে সারিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সদুত্তর পায়নি। বাধ্য হয়ে সারিকাকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সারিকা সাবরিন

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে পরে জানানো হয়, এই নির্দেশ অমান্য করে কেউ সারিকাকে নিয়ে নাটক, মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপনসহ এ ধরনের কাজ করলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘আমাদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের ফেসবুক পেজ আছে, ভাইবারেও গ্রুপ আছে—সেখানে জ্যেষ্ঠ শিল্পী থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের সবাই যুক্ত আছেন। গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে এখানে উন্মুক্ত আলোচনা করা হয়। সারিকা যদি উপলব্ধি করেন তাঁর ভুল হয়েছে, তাহলে আমাদের কাছে একটা চিঠি দেওয়া উচিত ছিল। অভিনয়শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আমাদের এই সংগঠন। সারিকা তো একজন প্রতিভাবান শিল্পী, তিনি অভিনয় করতে পারছেন না, এটা যদি তিনি উপলব্ধি করেন, তাহলে প্রথম আমরা অবশ্যই তাঁর পাশে দাঁড়াব। প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

সারিকা সাবরিন

গত রোববার রাতে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে সারিকা লিখেছেন, ‘গত কয়েক মাস আমার জীবনে কঠিন সময় গেছে। সবকিছু সামলে নিয়েছি। এদিকে আমার মেয়েকে স্কুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছিলাম। আগামী সপ্তাহ থেকে সে স্কুলে যাবে। এরপর আবার হয়তো নাটক কিংবা বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং শুরু করতে পারব। সরি, পাঁচ অক্ষরের একটা শব্দ। সবার কাছে আজ সত্যি মনের গভীর থেকে মাফ চাইছি—পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী, আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে। কখনো যদি জেনে বা না জেনে এতটুকু আঘাত করে থাকি, অনুগ্রহ করে ক্ষমা করবেন। আমার চারপাশের কঠিন পরিস্থিতি ও শারীরিক সমস্যার কারণে কিছু জটিলতায় ভুগছিলাম। তবে এটাও মানছি, সব তা না। নিজের ব্যাপারেও সতর্ক ছিলাম না, ভুলত্রুটি যতটুকু পারি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করব। কারণ শেখার না আছে শেষ, না আছে বয়স। পুরোনো কষ্ট মুছে ফেলে নতুন করে শুরু করি সব। আমরা সবাই এক।’

সারিকা সাবরিন

দুঃখ প্রকাশের পর কোনো প্রযোজক আর পরিচালক যদি সারিকাকে নিয়ে কাজ করতে চান, সে ক্ষেত্রে কী হবে? আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘এই ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটি আমাদের সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাঁকে সাংগঠনিকভাবে আসতে হবে। কোনো প্রযোজক আর পরিচালক ইচ্ছা করলেও তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পারবে না। কারণ, তাঁর ব্যাপারে নেওয়া সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়নি। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তাঁকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, হয়েছে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে।’