একসময় দিনের পর দিন শুটিংয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করলেও বয়সের ভারে এখন আর শুটিং করতে পারেন না তাঁরা। কেমন আছেন তিন প্রবীণ অভিনয়শিল্পী মাসুদ আলী খান, মিরানা জামান ও প্রবীর মিত্র?
দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে কোনো বাধাই তাঁকে অভিনয় থেকে দূরে রাখতে পারেনি। এখনো মাঝেমধ্যে অভিনয়ের প্রস্তাব পান। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় শরীর, বয়স। এ বছর ৯৩তম জন্মদিন কাটিয়েছেন গুণী অভিনেতা মাসুদ আলী খান। এখনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে চায় তাঁর মন। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কষ্ট নিয়ে নির্মাতাদের কাছে অপারগতা প্রকাশ করেন। শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয় করে যাবেন, এটাই ভেবেছিলেন মাসুদ আলী খান। সেই ইচ্ছায় প্রথম আঘাত আসে প্রায় সাত বছর আগে। হঠাৎ করেই বাসায় পড়ে গিয়ে পা ও কোমরে আঘাত পান। তারপর থেকে শারীরিক অবস্থা নাজুক হতে থাকে। তারপরও টুকটাক চালিয়ে গেছেন অভিনয়।
এই অভিনেতা বলেন, ‘তিন মাস আগেও হানিফ সংকেত ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমি তো বেরই হতে পারি না। এখনো কোমরে ব্যথা। তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে না করে দিলাম। অভিনয় ছাড়া থাকতে কষ্ট হয়। এখন বাড়িতে শুয়ে থাকি, বই পড়ি, সিনেমা দেখি। তারপরও সময় কাটে না।’ তাঁর এক মেয়ে, এক ছেলে। তিনি বলেন, ‘মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। আমরাই স্বামী–স্ত্রী একসঙ্গে থাকি। একজন কাজের মেয়ে আছে। সে–ই দেখাশোনা করে। একটু বাইরে বের হতে চাইলে আশপাশেই আত্মীয়স্বজন থাকে, তাদের বলতে হয়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভিনয় করতে পারি না, এটাই কষ্ট দেয়।’
৮৫ বছর বয়সে এখনো মানসিকভাবে শক্ত অভিনেত্রী মিরানা জামান। চেয়েছিলেন শেষ সময় পর্যন্ত অভিনয় করে যাবেন। কিন্তু করোনার কারণে এখন আর ঘর থেকেই তেমন একটা বের হওয়া হয় না। ‘করোনার কারণে এখন একেবারেই বাসায় বন্দী। করোনার মধ্যে আমাদের মতো বুড়োরা কেউ অভিনয় করেননি। আমি তো এখন ঘর থেকেই বের হই না। বয়স হয়ে গেছে। আর কত। সেই ব্রিটিশ আমলে জন্ম। ১৯৩৬ কি ১৯৩৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর,’ কথাগুলো বলেন মিরানা জামান। যা চেয়েছিলেন অভিনয় থেকে, তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন। মনে কোনো কষ্ট নেই। তিনি বললেন, ‘বয়স বাড়ছে, সমস্যাও বাড়ছে। হাঁটুতে ব্যথা। দাঁড়াতে পারি না। ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করি। মাঝেমধ্যে ব্যালান্স ঠিক রাখতে পারি না। লাঠি নিয়ে চলতে হয়,’ কষ্টের কথা বললেও মুখে ছিল হাসি। শর্মিলী আহমেদ, মাসুদ আলী খান এখনো নিয়মিত খবর নেন। তিনি বলেন, ‘এখন তো মনে হয় না আর অভিনয় করতে পারব। শুটিংয়ের ভালো সময়গুলো এখনো মিস করি। আমাদের বয়সী প্রায় সবাই মারা গেছেন। আর হয়তো অভিনয় করতে পারব না, সেটাই মাঝেমধ্যে কষ্ট দেয়।’
সিনেমা থেকে অর্থ, খ্যাতি, সম্মান—সবই পেয়েছিলেন। সেই সিনেমা নিয়েই এখন আর কথা বলেন না প্রবীর মিত্র। সিনেমার মানুষেরা এখন আর খুব বেশি যোগাযোগই রাখেন না। নিজের মতো করেই বেশির ভাগ সময় শুয়ে থাকেন প্রবীর মিত্র। চেষ্টা করেন বই পড়তে। করোনার সময় দীর্ঘদিন তাঁকে টেলিভিশনও দেখতে দেওয়া হয়নি। কারণ, করোনায় মৃত্যুসংখ্যা তখন বেশি ছিল। মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েন তিনি। করোনার প্রভাব কিছুটা কমায় এখন টেলিভিশন দেখেন। প্রবীর মিত্রর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হলো না। তিনি সেভাবে কানে শুনতে পান না। পাশ থেকে জোরে কথা বললে কিছুটা বোঝেন। তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থার কথা জানালেন তাঁর পুত্রবধূ সোনিয়া ইয়াসমিন। তিনি বললেন, ‘বাবার এখন শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তবে সব ঠিক থাকলেও হাঁটুতে ব্যথা। এ কারণে হাঁটতে পারেন না। সমস্যাটা বেড়ে গেলেই মাঝেমধ্যে ডাক্তার দেখাতে যেতে হয়।’ সিনেমা, অভিনয়, পেছনে ফেলা আসা দিনগুলো নিয়ে আর বাসায় কথা বলেন না এই অভিনেতা। টেলিভিশনে কখনো সিনেমা দেখেন না। শুধু খেলা দেখে সময় কাটান। তিনি আগের চেয়ে এখন কম কথা বলেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে মাঝেমধ্যে বিশেষ দিবসে উপহার আসে। এ ছাড়া তেমন কেউ আর খবর নেয় না। এটা তিনি এখন আর আশাও করেন না।