রাঁধুনিরা এখনো রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলেন, 'টিভির সাউন্ডটা বাড়িয়ে দাও।' কেন? রান্না করতে করতে তাঁদের কানে যেন পৌঁছায় প্রিয় ধারাবাহিকের সংলাপগুলো। শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে তাঁরা ছুটে চলে আসেন পর্দার সামনে। করোনাকালে গৃহবন্দী সময়ে যখন নতুন টিভি অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে না, তখন পুরোনো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোই আবার প্রচার করছে টেলিভিশনগুলো। এবেলাও বাংলাদেশের ২০টির বেশি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারকারী টেলিভিশনের সঙ্গে লড়াই করছে পশ্চিম বাংলার দুটি টিভি চ্যানেল।
বলা যায়, করোনার সঙ্গেও লড়ছে চ্যানেলগুলো। কেননা, বিনোদনের চেয়ে তথ্য পেতে খবরের চ্যানেলগুলোতেই বেশি সময় কাটাচ্ছেন দর্শক। অন্যদিকে বিনোদন পেতে যাচ্ছেন পুরোনো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোয়। পুরোনো অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচারের সবচেয়ে বড় ঘটনা বলা যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে 'কোথাও কেউ নেই' ও 'বহুব্রীহি' ধারাবাহিক দুটির সম্প্রচার। অন্যদিকে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোও কম-বেশি পুরোনো কিছু নাটক প্রচার করছে। সেসব নিয়ে দর্শকমহলে তেমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অ্যাপসভিত্তিক সিরিজ দেখার সুবিধা যাঁদের নেই, সেই সব দর্শকের কাছে ওই টিভি চ্যানেলগুলোই ভরসা।
এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, মাছরাঙা, দেশ টিভি, দীপ্ত, নাগরিক, এনটিভি, আরটিভি, বাংলাভিশন, বৈশাখী, ইটিভির মতো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারকারী টেলিভিশনগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দুই বাংলা টিভি চ্যানেল জি বাংলা ও স্টার জলসা। নতুন অনুষ্ঠানের অভাবে চ্যানেল দুটি সম্প্রচার শুরু করেছে তাদের পুরোনো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো। সেগুলোর মধ্যে জি বাংলায় দেখাচ্ছে 'দীপ জেলে যাই', 'সাত ভাই চম্পা', 'ভুতু', 'গোয়েন্দাগিন্নি'র মতো ধারাবাহিক ও রিয়েলিটি শো। অন্যদিকে স্টার জলসায় 'মহাভারত', 'ওগো বধূ সুন্দরী', 'বোঝে না সে বোঝে না'র মতো বেশ কিছু পুরোনো ধারাবাহিক। প্রথমবার প্রচারের সময় যাঁরা দেখেননি, তাঁরাও এ সুযোগ হাতছাড়া করছেন না।
করোনাকালের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান থেকে একটু বেশি নজর দিচ্ছেন খবরের চ্যানেলগুলোতে। সচেতনভাবে গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলের নম্বরগুলো মনে রেখে সেগুলোতেই চোখ রাখছেন তাঁরা। এর ফাঁকে ফাঁকে এখন বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার করা পুরোনো নাটক, জি বাংলা ও স্টার জলসার পুরোনো অনুষ্ঠানগুলো টানছে সাধারণ দর্শকদের। কিন্তু কী দেখেন তাঁরা?
গৃহিণী আরিফা রুহী জানান, বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোর কিছু কিছু অনুষ্ঠান দেখেন তিনি। তবে সনি আট চ্যানেলে 'সিআইডি' ধারাবাহিকটি বিশেষ পছন্দের। যদিও এখন সেসব দেখে পূর্ণ বিনোদন পাচ্ছেন না। খুলনার পারভিন খান জানান, স্বাভাবিক সময়ে 'দিদি নাম্বার ওয়ান', 'ত্রিনয়নী' নাটকগুলো দেখতেন, এখন বেশির ভাগ সময় খবরের চ্যানেল দেখেন তিনি।
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো যদিও এখনো অনুষ্ঠানসংকটে পড়েনি। যেসব অনুষ্ঠান তাদের আগাম তৈরি করা ছিল, আরও এক সপ্তাহ সেগুলো দিয়েই তারা চালিয়ে নিতে পারবে। বেশ কিছু চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, রমজান উপলক্ষে তাদের অনুষ্ঠানে পরিবর্তন এসেছে। দুপুরের পর থেকে রান্না ও ইসলামি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে চ্যানেলটি। তবে আরও এক সপ্তাহ পর বিনোদনমূলক পুরোনো অনুষ্ঠান প্রচারের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের টেলিভিশনে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, বিশেষ করে নাটক ও টেলিছবির পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ খোদ এই অঙ্গনের মানুষেরাই। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, একেবারে নতুন করে এই অঙ্গন ও পরিবেশকে ঢেলে সাজাতে হবে। করোনার এই সময়ে বাড়িতে বসে সেসব নিয়েই ভাবছেন তাঁরা। আশা করছেন, করোনার পর সেসব নিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে নামবেন।