যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে অভিনয় শুরু করেছিলেন ইরেশ যাকের। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তাঁকে দেখা গেছে ‘চোরাবালি’, ‘জিরো ডিগ্রী’, ‘স্বপ্নজাল’ ও ‘দেবী’ সিনেমায়। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে তাঁর ‘কেমন আছেন তারা?’ সিরিজটি। এসব নিয়ে আলাপ হলো তাঁর সঙ্গে।
টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র—বাকের ভাই, এলাচি বেগমদের সঙ্গে আলাপ করে কেমন লাগছে?
লকডাউনে নিজেরা হাত গুটিয়ে বসে না থেকে কিছু একটা করার জন্য ‘কেমন আছেন তারা?’র যাত্রা শুরু। ঘরে ঢুকে পড়া দর্শকদের বিনোদিত করাই এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, ফিকশন চরিত্রগুলোকে দিয়ে স্যাটায়ারের মাধ্যমে মানুষকে চমৎকারভাবে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া যায়।
মহামারির প্রথম ধাক্কার ঘরবন্দী দিনগুলো কেমন কাটল?
অভিনয়শিল্পী ইরেশ জাকেরের জন্য কিছুটা হতাশাজনক ছিল। ঘরে বয়স্ক বাবা, মায়েরও বয়স হয়েছে। একটা শিশুও রয়েছে। তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা করেছি। লেখালেখি করেছি। অন্য সময়ে তো কিচ্ছু ভাবার সময় থাকে না। একটা কাজ শেষ করে আরেকটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। এই সময়টায় এসে একটু ভাবনার অবকাশ পেয়েছি। তবে বাবা হিসেবে সময়টা চমৎকার ছিল। আমাদের মেয়ে ছয় মাসের প্রতিটা দিন বড় হয়েছে। একদিন হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটেছে। দুই দিন পর আবার নিজে নিজে দাঁড়ানো শিখেছে। মহামারি না এলে কখনোই এভাবে তার বড় হওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারতাম না।
তবু বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, তাঁরা আলী যাকের আর সারা যাকেরের সন্তান হলে আরও অনেক কিছু করতে পারত। অন্যরা কী ভাবছে, সেটা মাথায় নিলে, সেসবে প্রভাবিত হলে নিজের জীবন খুঁটিহীন হয়ে যায়। নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার মতো সংকট তৈরি হয়।
মেয়ে আপনার জীবনকে কীভাবে বদলে দিয়েছে?
আমি আরও সাহসী হয়েছি, আবার ভীতুও হয়েছি। যেকোনো সিদ্ধান্ত ও ঝুঁকি নেওয়া আমার জন্য সহজ হয়েছে। আবার মনে হয়, এখন তো আমি কেবল নিজের জন্য বাঁচি না।
অভিনয়শিল্পী ইরেশ জাকের কী নিয়ে ব্যস্ত?
শিগগিরই সরকারি অনুদানে আকরাম খানের পরিচালনায় ‘বিধবাদের কথা’ ছবিটার শুটিং শুরু হবে। অভিনয় তো আমার মূল পেশা নয়। অভিনয় আমার লাক্সারি বলতে পারেন। তাই অনেক বেছে চরিত্রটার সঙ্গে যাতে সুবিচার করতে পারি, সেভাবে কাজ করি। আমার কাছে কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি সব সময়ই প্রাধান্য পেয়েছে।
সারা যাকের আর আলী যাকেরের সন্তান হওয়া কতটা চাপের?
চাপটা আমি নিইনি সেভাবে। তবে এখন যত বয়স বাড়ছে, চাপ বাড়ছে। মনে হচ্ছে, আমার বাবা–মায়েরা ইন্ডাস্ট্রিকে কী দিল, আর আমি কী দিচ্ছি! এ রকম একটা পাল্লায় মাপামাপি করে মাঝেমধ্যে চাপ অনুভূত হয়। আমার মা–বাবার সন্তান হওয়ায় শৈল্পিক, অর্থপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। আমি জানি, আমার আশপাশে যাঁরা আছেন, তাঁদের এই পর্যন্ত আসতে আমার চেয়ে অনেক বেশি সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমি সহজে সুযোগ পেয়েছি। তবে হ্যাঁ, যোগ্যতা আর পরিশ্রম ছাড়া এই জায়গায় বেশি দিন দাঁড়িয়ে থাকা যেত না। তবু বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, তাঁরা আলী যাকের আর সারা যাকেরের সন্তান হলে আরও অনেক কিছু করতে পারত। অন্যরা কী ভাবছে, সেটা মাথায় নিলে, সেসবে প্রভাবিত হলে নিজের জীবন খুঁটিহীন হয়ে যায়। নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়ার মতো সংকট তৈরি হয়।
নাটক আর চলচ্চিত্র দুটোই একটা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এই সময় আমাদের উঠে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ, আকাশ মুক্ত। আমাদের প্রতিযোগিতার কোনো সীমানা নেই।
লোকে বলে, আপনাকে নাকি খল চরিত্রে মানায় ভালো। আপনার কী মত?
একসময় লোকে বলত, আমাকে নাকি হাবাগোবা চরিত্রে ভালো মানায়। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সিনেমার পর দু–তিন বছর আমি নেতিবাচক চরিত্র ছাড়া কাজের প্রস্তাবই পাইনি। এখানে অভিনেতা হিসেবে বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে ঝালাই করার, প্রমাণ করার সুযোগ কম।
বাংলাদেশের নাটক ও সিনেমা কেমন লাগছে?
নাটক আর চলচ্চিত্র দুটোই একটা পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এই সময় আমাদের উঠে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ, আকাশ মুক্ত। আমাদের প্রতিযোগিতার কোনো সীমানা নেই। আর প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার কোনো বিকল্প নেই।
নাটকের প্রযোজকদের সংগঠনের সভাপতি হিসেবে আপনি কী দায়িত্ব পালন করেছেন?
আমি সংগঠনটাকে একটা ‘প্রফেশনাল লুক’ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের সুবিধা–অসুবিধা, চাওয়া–পাওয়া নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিং করেছি। আসলে প্রযোজকের জায়গাটা তো আর আগের মতো নেই। এককভাবে এখানে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সবাই মিলে একে এগিয়ে নিতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে।