ফেসবুকে গত শুক্রবার যে স্ট্যাটাসটা দিয়েছিলেন পরিচালক অনিমেষ আইচ, তা ছিল খুবই হতাশাজনক। তিনি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, বই, নাটক, যাত্রা, সার্কাস, বাউলগানসহ নানা কিছু নিয়েই তাঁর হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কেউই এখন প্রতিবাদ নিয়ে এগিয়ে আসে না। পরবর্তী প্রজন্ম আগের প্রজন্মকে নিয়ে যেন হাসাহাসি না করে, সে রকম একটি আক্ষেপও রেখে যান তিনি। তাঁর লেখায় তিনি বলেন, ভিউ লাইক শেয়ার ইত্যাদির দিকেই মানুষ এখন তাদের উন্মাদনা দেখাচ্ছে। এর বাইরে নয়।
প্রথম আলো বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে, যখন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও কথাগুলোর প্রতি সমর্থন জানান। তিনি মন্তব্য করেন, ‘এই কথাগুলো বলার সাহস আমাদের সবার থাকা উচিত। চুপ করে থেকে আমরা কোথায় যাচ্ছি, কেউ জানি না।’
শনিবার দুপুরের দিকে যখন অনিমেষ আইচের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়, তখন তিনি একটি নাটকের মহড়ায় ছিলেন। এত হতাশ কেন, সে কথা জানতে চাইলে অনিমেষ বলেন, ‘আসলে পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ গুণগত পরিবর্তনের দায় নিচ্ছে না। এই সুযোগে সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা কমে গেছে এবং সে শূন্যতা ভরাট করেছে সংস্কৃতিহীন কিছু মানুষ।’
গ্রামে-শহরে সবখানেই প্রকৃত সংস্কৃতিচর্চা কমে গেছে, এ নিয়ে খুবই বিচলিত অনিমেষ আইচ, এমনকি তিনি আক্ষেপ করে লিখেছেন, প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে পরিবর্তন আনার জন্য কিছু করা যায় কি না।
নাটকে বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই পরিচালক। ‘এখন অনেক ক্ষেত্রেই নাটকের নামে চলছে “ফাতরামি”। নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে নিয়েই ঘুরেফিরে নাটক হচ্ছে। নাটকের গুণগত মান হিসাব করে বাজেট হয় না। একটা নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যেই কাজ করতে হয় এবং কখনো কখনো শুধু যাঁরা নাটকের জন্য টাকা দিচ্ছেন, তাঁদের ইচ্ছা অনুসারে অভিনয়শিল্পীদের নিতে হয়।’ বলেন অনিমেষ।
এ রকম হতাশাজনক অবস্থায় অনিমেষ বেছে নিয়েছেন ছোটদের জন্য বোকা ভূত নামে একটি ধারাবাহিক নাটক। নাটকটি তিনি লিখেছেন এবং পরিচালনাও করছেন। নাটকটি দুরন্ত টিভির জন্য নির্মিত হচ্ছে।
একটি যৌথ পরিবার নিয়ে নাটকটির গল্প। বাংলাদেশের টিভি নাটক থেকে নায়ক-নায়িকা ও তাঁদের বন্ধু ছাড়া অন্য সব চরিত্র যখন উধাও হয়ে যাচ্ছে, তখন এই শিশুতোষ নাটকের মাধ্যমে আবার মা-বাবা, চাচা-চাচিরা ফিরে আসবে। একটা সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে রোজ রোজসহ শিশুদের নানা ধরনের নাটক পরিবেশিত হতো। অনিমেষের এই নাটক শিশুদের সে রকম আনন্দ দেওয়ার একটি আয়োজন। একটি মূর্তি খুঁজে পায় পরিবারের কোনো সদস্য এবং তার ভেতর থেকে একটা ভূত বেরিয়ে আসে। ভূতটা বোকা ভূত, যে ভয় পায়। নাটকে মোটা চাচা, পাতলা চাচারা মিলে বেশ একটা হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে, তবে শুধু হাসি নয়, নানা ধরনের ঘটনা দিয়ে এই নাটকের প্রথম মৌসুমের ৩০টি পর্ব তৈরি হচ্ছে। ১২ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকটি দেখা যাবে দুরন্ত টিভির পর্দায়।
অনিমেষকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে আশার জায়গা কি আছে?’
অনিমেষ বলেন, ‘যদি কাজ করার পরিবেশ ফিরে আসে, তাহলে আমরা দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতে পারব।’
আমিরুল হক, ফারুক আহমেদ, রোকেয়া প্রাচী, আজিজুল হাকিমরা রয়েছেন এই নাটকে। আছেন আশনা হাবিব ভাবনা, মৌসুমী নাগ। আর আছে অনেক শিশু অভিনয়শিল্পী।
ফেসবুক স্ট্যাটাসটি এই নাটকের মাধ্যমে নাকচ করে দেওয়া যায় কি না, সে প্রশ্ন করাতে একটা রহস্যময় হাসি উপহার দেন অনিমেষ। সে হাসিতে হয়তো লেখা আছে, পরিবেশ পেলে ভালো কিছু করা সম্ভব।