‘একটা নাটক দেখতে বসছি! দুইটা দৃশ্য শেষ হতেই বিজ্ঞাপন বিরতি! সেই দুই দৃশ্যের দ্বিগুণ সময় ধরে চলল বিজ্ঞাপন! এসবের কোনো মানে আছে? যত ভালো মানের নাটকই হোক, বিজ্ঞাপনের অত্যাচার চলতে থাকলে, কেউই নাটক দেখবে না!’ ফেসবুকে কথাগুলো লিখেছেন অভিনয়শিল্পী শবনম ফারিয়া।
এ রকম অভিযোগ আছে আরও অনেক পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীর। টেলিভিশন দর্শকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ঈদের দিন নির্মাতা শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘প্রিয় দর্শক, দুঃখিত। টিভিতে আসলেই নাটক দেখার কোনো মজা নাই।’ অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের কারণে নিজের নাটক দেখতে পারেননি একজন হৃদয়হীনা নাটকের নির্মাতা। এ প্রসঙ্গে শিহাব শাহীন বলেন, নাটকের মধ্যে চ্যানেলগুলো যেভাবে বিজ্ঞাপন দেয়, সেটা সহ্য করে নাটক দেখাটা মুশকিল। ফলে চ্যানেল থেকে দর্শকেরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। চ্যানেলের পিঠও দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের রাস্তা তাদেরই বের করতে হবে।
মিস শিউলি নামে একটি নাটক বানিয়েছেন আশফাক নিপুণ। মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের কারণে তাঁর পরিচিত অনেকেই নাটকটি দেখতে পারেননি। তিনি বলেন, জি বাংলার ‘সারেগামাপা’ কিন্তু ইউটিউবে হিট হয়নি, লোকে টেলিভিশনে দেখে বলেই হয়েছে।
টিভিতে দুটি নাটক দেখতেই হবে। ঠিক করে রেখেছিলেন শবনম ফারিয়া। কারণ ‘শুনেছিলাম, ২২ শে এপ্রিল ও একজন হৃদয়হীনা নাটক দুটি ইউটিউবে দেওয়া হবে না। বিজ্ঞাপনের আধিক্যে নাটক দুটি আর দেখা হয়নি’, জানালেন তিনি।
ঈদের ছুটিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেট দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পরদিন রাতে টেলিভিশনে নাটক দেখার চেষ্টা করেছেন পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। ধৈর্য রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখনো টেলিভিশনে নাটক দেখতে চায়। তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে। বিজ্ঞাপনদাতা ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে, তারা অনুষ্ঠান আদৌ দেখাতে চায় কি না। চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি, দরকার হয় আপনারা বিজ্ঞাপনের সংখ্যা কমিয়ে মূল্য বাড়িয়ে দিন।’
এই ঈদেও চ্যানেলগুলোয় ছিল মোশাররফ করিমের ২০টিরও বেশি নাটক। তিনিও একমত হলেন, বিজ্ঞাপনের কারণে দর্শক নিরবচ্ছিন্নভাবে নাটক দেখতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে এমন কথা শুনে আসছি। পরিচালকের কাজ নাটক বানানো, অভিনয়শিল্পীর কাজ অভিনয় করা। দর্শকদের সামনে ঠিকঠাকমতো উপস্থাপনের দায়িত্ব চ্যানেলের। দর্শক কখন বিরক্ত হবেন, কখন হবেন না—এটা তাদের বুঝতে হবে। মুনাফা করতে গিয়ে টিভি নাটককে গলা টিপে যেন মেরে না ফেলে।’
চ্যানেল আই, বাংলাভিশন ও এনটিভিতে মোস্তফা কামাল রাজের তিনটি নাটক প্রচারিত হয়েছে। টিভিতে নাটক দেখতে বসে তিনিও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘জাহিদ হাসান ভাই, আমি, সিয়ামসহ কয়েকজন মিলে ২২ শে এপ্রিল নাটকটি দেখতে বসেছিলাম। বিজ্ঞাপনের চাপে কেউ কেউ ধৈর্যহারা হয়ে যান। আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, শিহাব শাহীন, আশফাক নিপুণ ও মিজানুর রহমান আরিয়ানের নাটক দেখব। আমার মনে হয়, বিজ্ঞাপনের মূল্য বাড়িয়ে সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে।’
টিভি নাটক নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অভিনয়শিল্পী সাবিলা নূর বলেন, ‘ভক্তদের কাছে শুনেছি, বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় তাঁরা আমার নাটক দেখে শেষ করতে পারেননি। পরে ইউটিউবে দেখে নেবেন। এমন কথা শুনলে খুব কষ্ট লাগে।’
বাংলাভিশনের ঈদ আয়োজন নিয়ে অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান তারেক আখন্দ বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার কিন্তু সার্বিকভাবে নাটকের স্লটে বিজ্ঞাপন কম ছিল। খেলার কারণে বিজ্ঞাপন–অনুষ্ঠানের সময় কম ছিল। বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে খুঁজতে হবে এই অভিযোগ থেকে উত্তরণের পথ।
বিজ্ঞাপনের আধিক্য নিয়ে জানতে চাইলে এ নিয়ে কথা বলতেই রাজি হননি আরটিভির অনুষ্ঠান প্রধান দেওয়ান শামসুর রাকিব। জানিয়েছেন, বিষয়টি বিপণন বিভাগের।