মনে আছে সেই শাহানার কথা। একটু গম্ভীর, কিছুটা রাগী, কথা কম বলা সেই মেয়েটা। হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটক প্রচারের পর তিনি দর্শকদের কাছে রাতারাতি ‘শাহানা’ হয়ে যান। এখনো ভক্তরা শিল্পী সরকার অপুকে ‘শাহানা’ নামেই ডাকেন। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। অভিনয় ও ক্যারিয়ার নিয়ে কানাডা থেকে কথা বললেন তিনি
শুভ জন্মদিন, কেমন আছেন?
ধন্যবাদ। ভালো আছি।
এবার দিনটা কীভাবে কাটাচ্ছেন?
এবার একটু বিশেষ। আমি দেশে নেই। কানাডায় বড় ছেলের বাসায় আসছি। জন্মদিন নিয়ে আমার কখনোই কোনো বাড়তি আগ্রহ থাকে না। এখন বয়স হয়ে গেছে। তবে দেখছি, ফেসবুকে অনেক সহকর্মী পরিচিতজনেরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এই সম্মান ভালোবাসা পাওয়াটা আনন্দের।
কবে কানাডায় গিয়েছেন?
গত ১১ মার্চ এসেছি। ঈদের পর দেশে ফিরব।
সম্প্রতি আপনার অভিনীত ‘গুণিন’, ‘নিখোঁজ’ মুক্তি পেয়েছে, চরিত্রগুলো নিয়ে আপনি কতটা খুশি?
দুটিই চরকিতে প্রচারিত হয়েছে। শুধু ‘গুণিন’ আগে সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল। দুটিই একদম আলাদা চরিত্র। যাঁরা দেখেছেন, প্রশংসা করেছেন। তবে চরিত্রগুলোর গভীরতা অনেক। খুবই পছন্দের চরিত্র।
আপনার অভিনীত সেরা চরিত্র কোনটি?
আমাকে এখনো সবাই ‘এইসব দিনরাত্রি’র শাহানা নামেই ডাকেন। তবে একটিমাত্র নাটকে আমি আনোয়ারা নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম, সেই নাটকের কারণেও কেউ কেউ ওই নামে ডাকেন।
শাহানা চরিত্রটি আপনাকে তুমুল জনপ্রিয়তা দিল, তারপর আপনার নাটকে উপস্থিতি কমে গেল কেন?
আমি ইচ্ছা করেই তখন কাজ করিনি। পরে হাতে গোনা চারটি প্যাকেজ নাটকে কাজ করেছিলাম। তখন সন্ধ্যায় বিটিভিতে গিয়ে অভিনয় করতাম, রাত ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতাম। কিন্তু খণ্ড নাটকের সকাল থেকে রাত ১২ কখনো ১টা পর্যন্ত নিয়মিত শুটিং হতো। শুটিং শেষে বাড়িতে ফিরতে অনেক দেরি হতো। তখন আমার বাচ্চারা ছোট ছিল। আমি চেয়েছিলাম, তারা আমাকে পুরো সময় পাশে পাক। তা না হলে হয়তো ওরা আমার মূল্যবোধ পাবে না। পরে অভিনয়ের পাশাপাশি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি।
একেবারেই অভিনয় ছেড়ে দিলেন?
সেটাই করলাম। তখন আমি ছেলেদের জন্য টানা ১৭ বছর কাজ করিনি। তখন আমি একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি। আর বাচ্চাদের বড় করতে শুরু করি। তবে ওই সময়ে অনেক নাটক লিখেছি।
কখনো কি মনে হয়েছে, হয়তো সংসার, অভিনয় একসঙ্গে করে গেলে ক্যারিয়ারে আরও ভালো জায়গায় থাকতেন?
আমার কাছে এটা মনে হয় না। কারণ, আমি কখনই উচ্চাভিলাষী ছিলাম না। অভিনয় ছেড়ে সন্তানদের সময় দেওয়া, শিক্ষকতা পেশায় খুশি ছিলাম। অভিনয় করে যেতেই হবে, সেখানে ভালো কিছু করতে মরিয়া এমনটা আমার মধ্যে ছিল না। পরে মনে হয়েছে, বাচ্চারা বড় হয়েছে, তখন ফিরেছি। ২০১২ সাল থেকে। পরে ২৭ বছর চাকরি করে শিক্ষকতা পেশা থেকেও ইচ্ছায় অবসর নিয়েছি। এখন অভিনয় করি। যা পেয়েছি, যা করেছি, তা–ই নিয়েই খুশি।
মঞ্চ থেকে প্রথম টেলিভিশনের অভিনয়ের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে?
আমার টেলিভিশনে প্রথম অভিষেক হয় আতিকুল হক চৌধুরী পরিচালিত ‘সুখের উপমা’ নাটকে। আমার সহশিল্পী ছিলেন আফজাল হোসেন। সেই বছর নাটকটি একটি পুরস্কারে সেরা হয়েছিল। তখনো আমি মঞ্চ করি কিন্তু মঞ্চে ওঠার সুযোগ পাইনি।
প্রথম নাটক কতটা পরিচিতি দিয়েছিল?
নাটকটা প্রচারের পর ইউনিভার্সিটিতে হাঁটতেই পারিনি। পেছনে থেকে ছেলেরা আমার সংলাপ মুখস্থ বলছিল। আসলে তখন একটি নাটক করলেই জনপ্রিয় হওয়া যেত। তখন সহজেই সারা দেশের দর্শক চিনে ফেলত। এ জন্য আমি-আমরা ভাগ্যবান। এখন বেশ কিছু ভালো কাজ করলেও সহজে দর্শকদের কাছে পৌঁছানো কঠিন।
ক্যারিয়ারে কোনো আফসোস আছে?
আমার কোনো আফসোস নেই। প্রচুর কাজ করছি। এখনো অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। কেউ কেউ বলেন, এখন নাটকের মান খারাপ। আমি মনে করি, খারাপ–ভালো সব সময়ই ছিল। কিন্তু তখন একটা চ্যানেল ছিল। আমরাও ছোট ছিলাম, যা দেখতাম, ভালো লাগত। আর মাঝে যে ১৭ বছর কাজ করিনি। তখন সন্তানদের মানুষ করতে চেয়েছি, পেরেছি।
আপনার অভিনীত শাহানা চরিত্রটি অনেক জনপ্রিয়, চরিত্রটি নিয়ে কোনো মজার ঘটনা আছে?
আমি এখনো ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকের শাহানা হয়েই আছি। মোস্তাফিজুর রহমান ভাই আমার অভিনয় দেখে এই নাটকে কাস্টিং করান। পরে তো ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। যেখানেই যেতাম, শাহানাকে নিয়ে কথা হতো। একবার বগুড়ায় গেলাম এক মঞ্চনাটক করতে। একটি বাড়িতে আমাদের আমন্ত্রণ ছিল। খাওয়াদাওয়া শেষে সেই বাড়ির একজন বলল, ‘আমার মা আপনার সঙ্গে কথা বলবে।’ সেই ভদ্র মহিলা পর্দা করেন। আমি তাঁর রুমে গেলাম। তিনি বললেন, ‘শাহানা বসো। তুমি ওই ম্যাজিশিয়ানকে (যুবরাজ খান) ভুলে যাও। এখন বিয়ে করেছে। সংসার করো। তার সঙ্গে আর যোগাযোগ রেখো না। জামাইয়ের সঙ্গে এমনটা করো না, বিয়ে করেছ, আগের কথা ভুলে যাও।’ তখন গল্পে রাইসুল ইসলাম আসাদের সঙ্গে বিয়ে হয়। আমি অবাক হয়েছিলাম, তিনি আমাকে ‘এইসব দিনরাত্রি’র শাহানা মনে করেছিলেন। দর্শকদের কাছে সত্যিকারের একজন হয়ে উঠেছিলাম, এটাই আমার সার্থকতা।