কোথাও কেউ নেই নাটকে ‘বদি’ চরিত্রের অভিনেতা ছিলেন আবদুল কাদের। প্রতিপক্ষের হাতে তিনি মার না খেলে বাঙালির জানাই হতো না যে ‘মাইরের মধ্যে ভাইটামিন আছে।’ ‘ভাইটামিন’ থাকুক বা না থাকুক, তাঁর অভিনয় ছিল বিশ্বাসযোগ্য। সেই থেকেই তিনি বাংলা নাটকের দর্শকদের ভালোবাসার পাত্র। দুঃখের মধ্যেও টেলিভিশনে তাঁর মুখ বাঙালিকে আনন্দ দিত।
প্রয়াত আবদুল কাদেরের দুটি জীবন, দুটিই সফল। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে প্রধান নির্বাহীর পদে বসেছিলেন তিনি। অন্যদিকে মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন, সিনেমায় অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছিলেন দর্শকের হৃদয়ে। যদিও তিনি কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে। আর অভিনয় শুরু করেছিলেন স্কুলজীবন থেকে। স্কুলে তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের অমল।
বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন গঠিত হওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ১৫টি নাট্য সংগঠন নিয়ে ১৯৭৯ সালে গ্রুপ থিয়েটার উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর বেইলি রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত হয়েছিল এটি। উৎসবের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন আবদুল কাদের (ডানে) ও আসাদুজ্জামান নূর (বাঁয়ে) এবং আহ্বায়ক ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। নাটকের দল থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনায় এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, মেরাজ ফকিরের মা ইত্যাদি।
১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালে সেলিম আল দীনের লেখা ও নাসির উদ্দীন ইউসুফের নির্দেশনায় জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন নাটকে অভিনয় করে আন্তহল নাট্য প্রতিযোগিতায় পেয়েছিলেন পুরস্কার। তিনি ছিলেন মুহসীন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক, ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি থিয়েটারের সদস্য এবং তিনি দলটির চার বছর যুগ্ম সম্পাদক ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ধারাবাহিক কোথাও কেউ নেই-এর ‘বদি’ (বাঁয়ে) চরিত্রে তুমুল জনপ্রিয় হন আবদুল কাদের। টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক মাটির কোলে, নক্ষত্রের রাত, শীর্ষবিন্দু, সবুজ সাথী, কুসুম কুসুম ভালোবাসা, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, আমাদের ছোট নদী, দুলাভাই ইত্যাদি।
টেলিভিশনে তাঁর প্রথম ধারাবাহিক এসো গল্পের দেশে। মাটির কোলে, নক্ষত্রের রাত, শীর্ষবিন্দু, সবুজ সাথী, তিন টেক্কা, যুবরাজ, আগুন লাগা সন্ধ্যা, প্যাকেজ সংবাদ, কুসুম কুসুম ভালোবাসা, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, আমাদের ছোট নদী, দুলাভাই, অজ্ঞান পার্টি, বহুরূপী, এক জনমে, খান বাহাদুরের তিন ছেলেসহ দুই হাজারের বেশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী ছিলেন তিনি।
থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনার এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, তোমরাই, স্পর্ধা, দুই বোন উল্লেখযোগ্য।
জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’-এর ‘মামা-ভাগ্নে’ পর্বের মামা চরিত্রে অভিনয় করতেন আবদুল কাদের। ইত্যাদির উপস্থাপক ও পরিকল্পক হানিফ সংকেত জানিয়েছেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। দর্শকের কাছেও প্রিয় ছিল ‘মামা’ চরিত্রটি। গত ৩০ অক্টোবর প্রচারিত ‘ইত্যাদি’ ছিল এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে তাঁর জীবনের শেষ অংশগ্রহণ।