নাটক–সিনেমার শুটিংবাড়িগুলোয় অশ্লীলতা রোধে নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। পুবাইলের শুটিংবাড়িগুলোয় গভীর রাতে পুলিশি তল্লাশি এখন নিয়মিত ঘটনা। পুলিশ বলছে, অভিযোগের ভিত্তিতে শুটিংবাড়িগুলোয় চলছে এই অভিযান।
এ বিষয়ে জানতে ডিরেক্টর’স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলীক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অবগত। থানার ওসির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। কিছু অরুচিকর মানুষ নাটক–সিনেমার শুটিংয়ের নাম করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য রুচিহীন ভিডিও বানাচ্ছেন, অসামাজিক কিছু কাজেও ব্যবহার হচ্ছে শুটিংবাড়ি। যে কারণে আসল নাটক, সিনেমার মানুষের বদনাম হচ্ছে।’
এস এ হক বলেন, ‘শিল্পের মানুষকে অন্য চোখে দেখেছেন শুটিংগ্রামের অনেকে। এসব ভুঁইফোড় নির্মাতাকে শক্ত হাতে দমন করা উচিত। তাদের প্রশ্রয় না দিতেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
পুবাইলে দুই ডজনের মতো শুটিংবাড়ি আছে। এসব শুটিংহাউসের মালিক, পুবাইলে শুটিং করেন এমন নির্মাতা এবং অভিনেতা ও গ্রামবাসীর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, নাটক, সিনেমা, মিউজিক ভিডিও, শর্টফিল্মের নাম করে একশ্রেণির অরুচিকর মানুষ অনেক দিন ধরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য অশ্লীল বা আপত্তিকর ভিডিও বানিয়ে আসছিলেন। অনেকে শুটিংবাড়িকে বানিয়ে ফেলছিলেন ডেটিং স্পট। টাকার বিনিময়ে সেখানে বহিরাগত মানুষ সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে ঘুরতে যেতেন। অনেকে আবার নেশা করার জন্য বেছে নিতেন বেশ কয়েকটি শুটিংবাড়ি। ছয় থেকে সাত বছর ধরে শুটিংবাড়িতে বিভিন্ন রকম কাজ হয়ে আসছিল। এ জন্য অনেকবার সালিস-বিচারও হয়েছে বলে জানান ‘শাহিনের বাড়ি শুটিং হাউস’–এর মালিক শাহিনুর রহমান।
সিনেমাসংশ্লিষ্ট সবার দাবি, যারা এসব কাজ করত, তারা কেউই সিনেমা বা নাটকের মানুষ নয়। তবে অপকর্ম যারা করে, তাদের অনেকেই নিজেদের সিনেমার লোক প্রমাণ করার জন্য মাইক্রোবাসের সামনে ভুয়া বিএফডিসির লোগো বা শুটিংয়ের কাজে নিয়োজিত লিখে গাড়ির সামনে লাগিয়ে রেখে শুটিং হাউসের কাছে থেকে সুবিধা নিচ্ছিল।
অভিনয়শিল্পীদের কয়েকজন জানান, শুটিংয়ে প্রায়ই কাজ শেষ করতে রাত ১২ থেকে ১টা বেজে যায়। পরের দিন একই জায়গায় শুটিং থাকলে সকাল ৯ থেকে ১০টার মধ্যে ঢাকা থেকে পুবাইলের এই গ্রামে আসাটা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। সে জন্য অনেক সময় কিছু শিল্পী এবং পুরো শুটিং টিমই শুটিংবাড়িতেই থেকে যায়।
অভিনেতা মোশাররফ করিম বলেন, ‘শুটিংয়ের প্রয়োজনে অনেক সময় পুবাইলে রাতে থাকতে হয়। দেখা যায়, টানা পুবাইলে শুটিং আছে, তখন পুবাইলে থাকি। তবে বেশির ভাগ ঢাকায় চলে আসার চেষ্টা করি।’
শুটিংয়ের প্রয়োজনে থাকাকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই, বললেন অভিনেতা এবং নির্মাতা শামীম জামান। তাঁর বেশির ভাগ নাটকের শুটিং হয় পুবাইলে। অনেক সময় তিনিও থাকেন পুবাইল। শামীম জামান বলেন, ‘প্রতি রাতেই পুলিশ শুটিংবাড়িতে আসে। অনেক সময় পুলিশ নানা রকম তথ্য নেয়। কারা আছে জিজ্ঞাসা করে। এটা নিরাপত্তার জন্য হলে ভালো, প্রশংসনীয়। অন্যথায় প্রতি রাতে পুলিশের এই অভিযান শিল্পের ওপর হামলার শামিল।’
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে পুবাইলে শুটিংবাড়ি চালান হারুনর রশিদ। তাঁর শুটিংবাড়ির নাম ‘হারুনের বাড়ি’। তিনিই এই বাড়ির মালিক। তিনি নিজেও একজন অভিযোগকারী। পুলিশের কাছে অভিযোগ করা সম্পর্কে হারুন বলেন, ‘কিছু শুটিংবাড়ি বাদে বেশির ভাগ শুটিংবাড়িতে নাটক, সিনেমা, মিউজিক ভিডিও নির্মাণের নামে এবং শুটিংয়ের ফাঁকে অসামাজিক কাজকর্ম হতো। এই কাজগুলো প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীসহ অনেক অভিযোগ করেছে।’ পুলিশের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক সময় আসল শুটিংয়ের লোক হয়রানি হয় বলে জানান হারুনর রশিদ।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ শুটিংবাড়িগুলোর দিকে নিয়মিত নজরে রাখছে। এ বিষয়ে জানতে পুবাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘বিভিন্ন শুটিং হাউসে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে, যেটা এলাকাবাসীর মাধ্যমে আমরা জেনেছি। সেগুলো যেন না ঘটে সে জন্য একটা রুটিন চেকের ব্যবস্থা করি আমরা। এখানে যারা সত্যিকারের শুটিংয়ের মানুষ, তারা কোনো হয়রানির শিকার হবে না।’
ডিরেক্টর’স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলীক বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য শুটিংবাড়িগুলোয় ডিরেক্টর’স গিল্ডের সদস্যের বাইরের নির্মাতাদের বাড়ি ভাড়া না দেওয়ার জন্য অনেক দিন থেকে আমরা চাপ দিয়ে আসছি। একইভাবে ডিরেক্টর’স গিল্ডের কেউ হয়রানির শিকার হলে আমাদের জানালে সহায়তা করার ব্যবস্থা করা হবে।’