লেখালেখির পাশাপাশি কালেভাদ্রে অভিনয়ে দেখা যায় চিত্রনাট্যকার বৃন্দাবন দাসকে। পরিচালকেরা তাঁকে বাধ্য করেই ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে দেন। অনুরোধের ঢেঁকি গিলতেই তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, অভিনয় করেন। সে হিসেবে তাঁকে বলা যায় শৌখিন অভিনেতা। একাধিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছ থেকে এখনো প্রশংসা পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। দর্শক মন জয় করতে পারলেও তিনি অভিনয় দিয়ে মন জয় করতে পারেননি অভিনেত্রী স্ত্রী শাহনাজ খুশি ও সন্তানদের। তাঁদের ভাষায়, অভিনয়ের কিছুই হয় না বৃন্দাবন দাসের। তিনি পাস মার্ক পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
দীর্ঘদিন পরে আবারও ক্যামেরার সমানে দাঁড়িয়েছেন বৃন্দাবন দাস। নাটকটি তাঁর নিজেরই লেখা। এই ঈদ ধারাবাহিকের নাম ‘কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন’। পরিচালনা করেছেন দীপু হাজরা।
এবারও তাঁকে বাধ্য হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়েছে। বৃন্দাবন দাস জানান, নাটকটিতে তাঁর চরিত্রে অভিনয়শিল্পী ফজলুর রহমান বাবুর অভিনয় করার কথা ছিল। এই অভিনেতা একটি চলচ্চিত্রের কাজে ব্যস্ত। বৃন্দাবন দাস জানান, নানাভাবে চেষ্টা করেও তিনি বাবুর সঙ্গে শিডিউল মেলাতে পরেননি।
পরে ভেবেছিলেন অন্য কাউকে দিয়ে শুটিং করাবেন, কিন্তু তেমন কাউকে না পাওয়া গেলে নির্মাতা দীপু হাজরা তাঁকে বাধ্য করেন অভিনয়ে। নাটকে এই চিত্রনাট্যকারকে তাঁর স্ত্রী শাহনাজ খুশির সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যাবে। বৃন্দাবন বলেন, ‘আমাকে অভিনয় টানে না। লেখালেখির কাজটা মনোযোগ দিয়ে করতে চাই। এতে অনেক সময় লেগে যায়। দ্বিতীয়ত, অভিনয়ের চেয়ে লেখাটা আমার অধিক পছন্দের। একটা করতে গেলে অন্যটায় ক্ষতি হয়। তা ছাড়া অভিনয়টা আমার হয় না। সেই কারণে দু–একটা নাটকে অভিনয় করি। কোনোটাই আমার মনমতো অভিনয় করতে পারি না।’
বৃন্দাবন দাস বাইরে বের হলে এখনো দর্শক তাঁকে সালাহউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় ‘সার্ভিস হোল্ডার’ নাটকে অভিনয়ের জন্য প্রশংসা করেন। এটি বৃন্দাবনের লেখা। যদিও নাটকটিতে তাঁর অভিনয় নিজের কাছেই পছন্দসহ হয়নি। কারণ, তাঁর কাছে মনে হয়, তিনি যেভাবে লিখেছেন, সেভাবে অভিনয় করতে পারেননি। এই চিত্রনাট্যকারের অভিনয় নিয়ে সমালোচনা করা মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি তাঁর অভিনয় বিন্দুমাত্রও পছন্দ করেন না। স্ত্রীর চোখে তিনি একজন অযোগ্য অভিনেতা।
একই কথা বলেন তাঁর দুই ছেলে সৌম্য ও দিব্য। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী অভিনেত্রী, সেই কারণে সে বলে আমার কোনো অভিনয়ই হয় না। আমিও তার কথা মেনে নিই। কারণ, আমি অভিনেতা হতে চাই না। তবে স্ত্রী ও সন্তানেরা সবাই আমার লেখা খুবই পছন্দ করে।’ এই দম্পতি পর্দায়ও স্বামী–স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তিনি জানান, এবারও দৃশ্যধারণের সময় স্ত্রী তাঁর অভিনয়ের নানা রকম খুঁত ধরে শুধরে দিয়েছেন। তাঁর ধারণা, শাহনাজ তাঁর সামনে অভিনয়ের প্রশংসা না করলেও মনে মনে ঠিকই পছন্দ করেন। এটা তিনি বুঝতে পারেন। স্ত্রী চান তিনি লেখালেখি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকবেন। এসব কারণে তাঁরা সমালোচনা করেন।
বৃন্দাবন দাস গত বছর ‘প্রতিবেশীকে ভালোবাসো’ নামের একটি সাত খণ্ডের নাটকে অভিনয় করেছিলেন। প্রথম তিনি মুক্ত নাটক দিয়ে অভিনয় অঙ্গনে পা রাখেন। নব্বইয়ের দশকে নিজের লেখা প্রথম নাটকে তিনি অভিনয় করেছিলেন। এটি পরিচালনা করেছিলেন সাইদুল আনাম টুটুল। বৃন্দাবন দাস জানালেন, ঈদের জন্য তাঁর লেখা তিনটি ধারাবাহিক ও পাঁচটির মতো এক খণ্ডের নাটক লেখা নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা।