করোনার এই দুঃসময়ে ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নিজ অঙ্গনের স্বল্প আয়ের শিল্পী ও কলাকুশলীদের দিকে। নগদ অর্থ ও পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে সহকর্মীদের বাড়িতে। এ অঙ্গনে কর্মরত স্বল্প আয়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছে তারা।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত এই দুঃসময়কে মোকাবিলা করতে সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা একটি তহবিল গঠন করেছি। খুদে বার্তার মাধ্যমে সংগঠনের সদস্যদের সেই তহবিলে অর্থসহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আরেকটি পক্ষকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে, যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং যাঁদের সহযোগিতা দরকার, এ রকম শিল্পী ও কলাকুশলীদের কাছে। সংগঠনের সদস্যরা সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের তহবিলে আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। যেটুকু সহযোগিতা পেয়েছি, তা নিয়েই স্বল্প আয়ের ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। যাঁদের সহায়তা প্রয়োজন, তাঁরা খুদে বার্তার মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাঁদের তালিকা করে বাড়িতে গিয়ে উপহারস্বরূপ নগদ অর্থ ও জরুরি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি।’
১০ দিন ধরে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে অভিনয়শিল্পী সংঘ। এ কাজের জন্য লুৎফর রহমান জর্জ, রওনক হাসান, শামীমা ইসলাম তুষ্টি, প্রাণ রায়, বন্যা মির্জা, মুনিরা ইউসুফ মেমী, আনিসুর রহমান মিলন, নুর এ আলম নয়ন, রাশেদ মামুন অপু, সুজাত শিমুল, জাকিয়া বারি মম, নাদিয়া আহমেদ ও শেখ মেরাজকে নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে সংগঠনটি। সংঘের আইন ও কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক শামীমা ইসলাম তুষ্টি বলেন, এই দুঃসময়ে শিল্পীদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছে দেশের স্বনামধন্য দুটি প্রতিষ্ঠান ‘স্বপ্ন’ ও ‘মীনা বাজার’। স্বপ্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর প্রতি মাসে ২০ জন শিল্পীকে মাসিক ৫ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ টাকার পণ্যসুবিধা দেবে। অন্যদিকে মীনা বাজার ১০ জন শিল্পীকে মাসিক ৩ হাজার টাকা করে ৩ মাসে মোট ১ লাখ টাকার পণ্যসুবিধা দেবে।
সংগঠনটির সভাপতি শহিদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির শুরুতেই আমরা সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করেছি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গত ২২ মার্চ থেকে আমরা সব ধরনের শুটিং কার্যক্রম বন্ধ করে শিল্পীদের বাসায় লকডাউন করে দিয়েছি। তাতে শিল্পীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের তালিকা চেয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে তালিকা করে পাঠিয়েছি। আশা করছি সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।’
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কীভাবে নিজেদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন, জানতে চাইলে সংগঠনের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুজাত শিমুল বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই ভিডিও কনফারেন্সে সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। সিদ্ধান্তগুলো সংগঠনের ফেসবুক পেজ এবং খুদে বার্তার মাধ্যমে সদস্যদের জানাচ্ছি। এ ছাড়া সদস্যদের যেকোনো সুবিধা-অসুবিধার কথা সংগঠনকে জানানোর জন্য কয়েকটি নির্ধারিত ফোন নম্বর ব্যবহার করা হচ্ছে।’
৮ এপ্রিল সহকর্মী শিল্পী-কলাকুশলীদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা হিসেবে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বিলি করেছে অভিনয়শিল্পী সংঘ। পরদিন একটি পিকআপ ভ্যানে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের বাড়িতে গিয়ে নগদ অর্থ ও জরুরি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। সংঘের সভাপতি শহিদুজ্জামান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে একরকম তাড়াহুড়ো করেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা।
তাঁরা জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সংগঠনের পাশাপাশি বিনোদন অঙ্গনের কর্মীদের দায়িত্ব সরকারের ওপরও বর্তায়। তাঁদের আশা, পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে সবাই মিলে একসঙ্গে এই বিপদ কাটিয়ে উঠবেন।