শেষ রক্ষা হলো না। ‘হ্যাশট্যাগ মুভ আউট মালিক’ শিরোনামে ভারতের সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার এবং প্রযোজক সোনা মহাপাত্র যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তার কাছে হার মানতে বাধ্য হন অনু মালিক। সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন চ্যানেলের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১১’-এর বিচারকের আসন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন বলিউডের এই জনপ্রিয় সুরকার, সংগীত পরিচালক ও সংগীতশিল্পী।
‘ইন্ডিয়ান আইডল ১১’ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র খবরটি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ডটকমকে নিশ্চিত করেছে। এই সূত্র বলেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনেক দিন থেকেই অনু মালিককে ঘিরে প্রতিবাদ আর নানা নেতিবাচক খবর হচ্ছে। তাঁর ওপর এর প্রভাব পড়েছে। তিনি এই অনুষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে অনু মালিক জানিয়েছেন, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাই এই রিয়েলিটি শোতে আর বিচারকের আসনে বসতে চান না। কর্তৃপক্ষ তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। এখন অনু মালিকের পরিবর্তে বিকল্প আরেকজন বিচারক নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে।
এই খবরে দারুণ খুশি সোনা মহাপাত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১১-এর বিচারকের আসন থেকে অনু মালিককে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করার জন্য এই আন্দোলনে যাঁরা আমাকে সমর্থন করেছেন, আমার পাশে থেকেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদের সচেতনতার কারণেই অনু মালিক ও তাঁর মতো বিকৃত রুচির মানুষজন আর কারও ক্ষতি করতে পারবেন না।’
বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে সোনা মহাপাত্র বলেছেন, ‘আমি স্বচ্ছতা আর ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছি। এই জয় সবার। যে মহিলারা তাঁর হাতে নিগৃহীত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের জয়। আমরা কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকব আর এমনটা চলতেই থাকবে, তা হতে দেব না। তাঁকে কেউ টিভির পর্দায় দেখতে চায় না। যখন তাঁর মতো একজন কুৎসিত মনের মানুষকে টিভির পর্দায় দেখে, তখন দর্শক বিরক্ত হন, তাঁরা বাধ্য হয়ে এই অনুষ্ঠান দেখা থেকে বিরত থাকেন। সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ অনেক দেরিতে হলেও তা বুঝতে পেরেছে। তাঁকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
সম্প্রতি নারী ও শিশুকল্যাণ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে চিঠি লেখেন সোনা মহাপাত্র। তারপর সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেয় জাতীয় মহিলা কমিশন।
এর আগে অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করে সোনা মহাপাত্র বলেছেন, লোকটি বিকৃত মানসিকতার। আর বলিউডের আরেক সংগীতশিল্পী শ্বেতা পণ্ডিত বলেছেন, ‘২০০১ সালে আমার বয়স ছিল ১৫। স্টুডিওতে গান কণ্ঠে তোলার সময় অনু মালিক আমাকে কিস করার জন্য চাপ দেন।’
এরপর ১৫ বছর আগের একটি ঘটনা সামনে এনে টুইটারে সংগীতশিল্পী নেহা ভাসিন লিখেছেন, ‘স্টুডিওতে আমার গানের একটি সিডি তাঁকে দিতে গিয়েছিলাম। তখন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আমার সামনে সোফায় শুয়ে তিনি যে ধরনের কথা বলছিলেন, তাতে আমি অস্বস্তি বোধ করেছিলাম। তিনি আমার চোখ নিয়ে আপত্তিকর নানা মন্তব্য করেন। তখন তাঁর সামনে থেকে রীতিমতো আমাকে পালাতে হয়েছিল।’
অনু মালিক দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁর সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য, তাঁর কাজকে কলঙ্কিত করার জন্য এবং তাঁর আয়রোজগার বন্ধ করার জন্য কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তা করছে। ১৪ নভেম্বর টুইটারে লেখা সেই বিবৃতিতে আরও লিখেছেন, তিনি দুই কন্যাসন্তানের বাবা। তিনি এ ধরনের অপরাধ করতে পারেন না। নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ দাবি করে অনু মালিক লিখেছেন, ‘আমি জানি না আর কত অপবাদ বা নোংরামি আমাকে বা আমার পরিবারকে সহ্য করতে হবে। আমার দুই মেয়ের ওপর প্রবল মানসিক চাপ পড়ছে।’
তাঁর এই পোস্ট দেখে খেপে যান সোনা মহাপাত্র। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘টিভি চ্যানেলের এ ধরনের অনুষ্ঠানে বিচারকের আসনে বসার কোনো অধিকার আপনার নেই। আপনি কোনো রোল মডেল নন। আপনি সরে দাঁড়ান। অবশ্যই কোনো যৌন-নেশামুক্তি কেন্দ্রে যান। কোনো মানসিক চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিন।’ তিনি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, অনু মালিকের কাছ থেকে এই মেয়েরা কিছুই শিখতে পারবে না।
‘পিঙ্কভিলা’ গত বছরের ২১ অক্টোবর জানিয়েছে, যৌন হেনস্তার অভিযোগ ওঠার পর অনু মালিককে ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১০’ প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় অনুষ্ঠানটির আয়োজক সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তখন জানানো হয়, অনু মালিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতার কোনো কাজের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ‘ইন্ডিয়ান আইডল ১১’ প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতার অন্য দুজন বিচারক নেহা কাক্কর ও বিশাল দাদলানি।