আজও বাঙালির মনে চির অমলিন সুচিত্রা সেনের হাসি। তাঁর সম্পর্কে আজও মানুষের নানা কৌতূহল। বাংলা ছবির সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় মহানায়িকা তিনিই। তাঁর সঙ্গে তুলনা করা যায় না কারও। আজ এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর জন্মদিন।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল, সেদিন বাংলাদেশের পাবনার করুণাময় ও ইন্দিরা দাশগুপ্তর সংসারে যোগ হলো নতুন মেয়ে সদস্য। মেয়ের নাম রাখা হলো কৃষ্ণা। কৃষ্ণার পিতামহ জগবন্ধু দাশগুপ্ত সাধ করে আরেকটি নাম রাখলেন, রমা। কিন্তু কে জানত পাবনায় বেড়ে ওঠা সেই রমা দাশগুপ্ত একদিন এই নামকে ছাড়িয়ে সুচিত্রা সেন নামে এপার-ওপার উভয় বাংলা দাপিয়ে বেড়াবেন। নিজের প্রতিভা দিয়ে জয় করে নেবেন সবার মন। পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে গেলেও নিজের প্রতিভা ছড়িয়ে দিয়েছেন এপারেও।
জন্মদিনে সুচিত্রা সেনের জীবনের ১০টি উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরা হলো এখানে।
সুচিত্রার বাংলা সিনেমায় অভিষেক নাটকীয় হলেও হিন্দি সিনেমার অভিষেক ছিল সাফল্যে ভরা। বলিউডে প্রথম ছবি ‘দেবদাস’। এই ছবিতে পার্বতী চরিত্রে স্মরণীয় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান সুচিত্রা সেন।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারজয়ী প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী ছিলেন সুচিত্রা সেন। ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির জন্য এই স্বীকৃতি পান তিনি। ভারত সরকার ১৯৭২ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মাননা দেয়।
বলিউডে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ অবলম্বনে বেশ কয়েকটি কাজ হয়েছে। এগুলোয় পাবর্তী বা পারু চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনেকে। তবে হিন্দি ছবিতে প্রথম এ চরিত্রে দেখা গেছে সুচিত্রা সেনকে।
সুচিত্রা সেনের ‘আন্ধি’ গুজরাটে মুক্তির পর ২০ সপ্তাহ নিষিদ্ধ ছিল। কারণ, তিনি যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া থাকার কারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর গুজরাটের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয় ছবিটি।
চলচ্চিত্র থেকে সরে দাঁড়ানোর পর স্বেচ্ছায় অন্তরালে চলে যান সুচিত্রা সেন। এর পর থেকে বেশির ভাগ সময় রামকৃষ্ণ মিশনে কেটেছে তাঁর। নির্জন ও নিভৃত জীবন যাপন করায় হলিউড কিংবদন্তি গ্রেটা গার্বোর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর মিল খুঁজেছেন অনেকে।
উত্তমকুমারের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের জুটি বাংলা ছবির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে প্রথমবার এক ফ্রেমে দেখা যায় তাঁদের। তাঁরা একসঙ্গে প্রায় ৩০টি ছবিতে অভিনয় করেন।
অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায় ‘চৌধুরানী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ব্যস্ততার জন্য সময় দিতে না পারায় কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন সুচিত্রা সেন। পরে চলচ্চিত্রটি নির্মাণই করেননি সত্যজিৎ। সুচিত্রা সেন অভিনীত বাংলা সিনেমার সংখ্যা ৫২, পাশাপাশি ৭টি হিন্দি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন।
‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবিতে যৌনকর্মী পান্নাবাই ও তাঁর কন্যা আইনজীবী সুপর্ণার দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন।
সুচিত্রা সেনই একমাত্র ভারতীয় অভিনয়শিল্পী, যিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পুরস্কারটি পাওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী নয়াদিল্লিতে যেতে হতো তাঁকে। কিন্তু তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি।
১৯৫২ সালে নির্মিত সুচিত্রা সেনের প্রথম বাংলা ছবি ‘শেষ কোথায়’ কখনো মুক্তি পায়নি।