অরুণ থেকে উত্তম, ছবিতে এক মহানায়কের গল্প

নিরন্তর সাধনা ছিল তাঁর। ছিল অসাধারণ প্রতিভা, কর্মদক্ষতা আর চেষ্টা। সুদর্শন চেহারা, অভিনয়ের সৃজনক্ষমতা আর কঠোর শ্রমের গুণে পৌঁছে গেছেন লক্ষ্যে। তিনি উত্তমকুমার। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তির অভিনেতা। মহানায়ক হিসেবে যাঁর খ্যাতি আকাশছোঁয়া। আজ ৩ সেপ্টম্বর এই মহানায়কের জন্মদিন। জন্মদিনে কথা ও ছবিতে স্মরণ করি তাঁকে।

উত্তমকুমারের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। উত্তর কলকাতার আহিরিটোলায়, মামাবাড়িতে ভূমিষ্ঠ হন তিনি।
অবশ্য জীবনের শুরুতে তিনি উত্তমকুমার নন। অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার গিরিশ মুখার্জি রোডের বাসিন্দা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায়ের বড় ছেলে।
১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাস করলেন। ১৯৪৫ সালে বিকম স্ট্যান্ডার্ড পাস করে ভর্তি হলেন কলেজে। কিন্তু কলেজে পড়া আর বেশি দূর এগোল না। টানাপোড়েনের সংসার। চলল চাকরির সন্ধান।
উত্তমকুমার ছিলেন একাধারে অভিনেতা, সুরকার, প্রযোজক ও পরিচালক। তাঁর চলচ্চিত্রজীবন ৩০ বছরের। এই সময়টাতে তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর বিপরীতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ৩৫ জন অভিনেত্রী।
সুচিত্রা সেনের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ২৯টি ছবিতে। সর্বাধিক ৩২টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে।
চলচ্চিত্র ছাড়াও অভিনয় করেছেন মঞ্চে ও যাত্রায়। এ ছাড়া পরিচালনা করেছেন পাঁচটি ছবি, সুরারোপ করেছেন দুটিতে, প্রযোজনা করেছেন সাতটি ছবি।
নিজের অভিনয় সম্পর্কে উত্তমকুমারের মন্তব্য, ‘ধরাবাঁধা ছকে অথবা সাজানো কণ্ঠে অভিনয় করার ইচ্ছা আমার কোনো দিনই ছিল না। আমি তাই নিজস্ব ধারায় সহজ অভিনয় করতাম। আমরা যেমন করে কথা বলি, রাগ করি, ঠিক তেমনি সহজ অভিনয়। অভিনয় নয়, ভাবেই চরিত্র রূপায়ণ।’
অনেকেরই হয়তো জানা নেই, প্রথম জীবনে গানের টিউশনিও করেছেন উত্তমকুমার। ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ ছবিটি তৈরি হওয়ার আগে যে উদ্যমে নিজের চেষ্টায় এমপি স্টুডিওর ভেতরে ঘোড়ায় চড়া শিখে পরিচালক নরেশ মিত্রকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন উত্তমকুমার, তা থেকেই বোঝা যায়, একজন পরিপূর্ণ অভিনেতা হয়ে ওঠার জন্য তিনি কতখানি আন্তরিক ছিলেন।
ঘোড়ায় চড়ার মতোই চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তিনি পিয়ানো বাজানো শিখেছিলেন। অসাধারণ হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন।
গায়কের ভূমিকায় তাঁর অসামান্য অভিনয়ের স্বাক্ষর রয়েছে সুবীর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘শাপমোচন’ ‘সুরের পরশে’, ‘দেয়া নেয়া’, ‘সোনার খাঁচা’সহ আরও বেশ কিছু ছবিতে।
সুপ্রিয়া দেবীরই স্মৃতিচারণায় জানা যায়, পড়ার প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল উত্তমকুমারের। শেক্‌সপিয়ার পড়তেন। প্রতি রোববার ইংলিশ পড়তে যেতেন।
১৯৬৫-৮০—এ কয় বছর নিয়মিত ইংরেজি রপ্ত করার চেষ্টা করে গেছেন। ভীষণ আক্ষেপ ছিল ইংরেজি মিডিয়ামে না পড়ায় ইংরেজি বলাটা রপ্ত হয়নি বলে।