‘অতি উত্তম’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: ফেসবুক থেকে
‘অতি উত্তম’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: ফেসবুক থেকে

চার দশক পর ‘ফিরলেন’ উত্তমকুমার

সিনেমাটির ঘোষণাতেই ছিল চমক। নাম যেহেতু অতি উত্তম; সবাই ধরেই নিয়েছিলেন সিনেমাটির সঙ্গে প্রয়াত নায়ক উত্তমকুমারের যোগ থাকবেই। তবে ক্রমে সিনেমাটির টিজার ও ট্রেলার প্রকাশ্যে আসার পর স্পষ্ট হলো, মহানায়ক সিনেমাটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত সিনেমাটি শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে।

১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মহানায়কের মহাপ্রস্থান। মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই অকালপ্রয়াণ। ২৪ জুলাই তারিখটা বাঙালির কাছে উত্তম স্মরণের দিন। তবে এবার গল্পটা অন্য। ৪২ বছর পর ২২ মার্চ ২০২৪ আবার মুক্তি পেতে চলেছে পর্দায় উত্তম কুমারের ছবি ‘অতি উত্তম’। ছবিতে অভিনয় করেছেন স্বয়ং উত্তমকুমার! মুক্তির আগে কলকাতায় উত্তমকুমারের ভুবনভোলানো হাসির হোর্ডিং, ছবি আর পোস্টার থেকে ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন অনেকেই। ছবিতে আবার আছেন তাঁর নিজের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব করলেন পরিচালক?

২০২১ সালে উত্তম কুমারের জন্মদিনে এই ছবির পোস্টার প্রকাশ করেছিলেন সৃজিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টার শেয়ার করে তিনি লিখেছিলেন, চার বছরের গবেষণা, উত্তম কুমারের ৬২টি ছবি বারবার দেখে, প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে ও ভিএফএক্স-বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অগণিত বৈঠকের পর ছবিটি তৈরি করতে যাচ্ছেন তিনি।

‘অতি উত্তম’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: ফেসবুক থেকে

ভারতের অনলাইন গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা জানিয়েছে, ছবিটিতে উত্তম কুমারের চরিত্রে তাঁকেই দেখা যাবে। ছবির গল্প আবর্তিত হবে কৃষ্ণেন্দু ও সোহিনীকে ঘিরে। তাঁদের প্রেমের অনেকটাই জুড়ে আছেন উত্তম কুমার। কৃষ্ণেন্দুর চরিত্রে অভিনয় করবেন অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। রোশনি ভট্টাচার্য থাকবেন সোহিনীর চরিত্রে। উত্তম কুমারের নাতির চরিত্রে থাকছেন গৌরব চট্টোপাধ্যায়।

এই গল্পের চরিত্র কৃষ্ণেন্দু আদতে একজন গবেষক। তাঁর গবেষণার বিষয় হলেন উত্তম কুমার। কিন্তু এদিকে গবেষকের প্রেমজীবনে আবির্ভাব হয় সমস্যার। সেই সমস্যা সমাধান করার জন্যই তিনি শরণ নেন বাংলা ও বাঙালির রোমান্টিক নায়ক উত্তম কুমারের। কীভাবে? সেটাই দেখা যাবে ছবিতে। ছবিতে ভিএফএক্সের মাধ্যমে অভিনয় করতে দেখা যাবে উত্তমকুমারকে। উত্তমকুমারের করা চরিত্র বা ছবির ফুটেজ কেটে কেটে এখানে তাঁর চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে।

সিনেমার পোস্টার। ফেসবুক থেকে

এর আগে এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক ছবিটি নিয়ে বলেন, ‘বাংলা, ভারত তো বটেই, গোটা বিশ্বেও বোধ হয় এমন ছবি এর আগে তৈরি হয়নি বলেই মনে করি। ঘুরে ঘুরে সব ক্লিপিংয়ের স্বত্ব জোগাড় করতে হয়েছে।’

সিনেমা মুক্তি উপলক্ষে গতকাল আনন্দবাজার পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণে নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ছবিটি নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সৃজিত বলেন, ‘মূল সমস্যাটা প্রযুক্তিগত। কিন্তু ঠিক করেছিলাম লড়ে যাব। বিভিন্ন সময় ও বয়সের উত্তম কুমারের সংলাপ, হাঁটাচলা, অভিব্যক্তি থেকে শুরু করে সবকিছু ফুটিয়ে তোলা সহজ ছিল না। চিত্রনাট্যটা আমাকে ৫২ বার লিখতে হয়েছে। এ ছাড়া অডিও নিয়ে ঝামেলা ছিল। সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি উত্তমকুমারের কণ্ঠস্বর অপূর্ব নকল করতে পারেন, তাঁকে দিয়ে প্রথম অডিও ট্র্যাকটা করিয়েছিলাম। পরে এআই প্রযুক্তি আসায় তাঁর গলার ওপরে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও মসৃণ করা হয়েছে পুরোটা।’ উত্তমকুমার মানেই বাঙালির আলাদা আবেগ। তবে পরিচালক জানান, তিনি সিনেমাটি তৈরি করেছেন নিজস্ব ভালো লাগার জায়গা থেকে ও দর্শকের কথা ভেবে।