জয়ার নতুন যাত্রা, প্রথমবার মা চরিত্রে

জয়া আহসান
শিল্পীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

পরিচালনা, প্রযোজনা ও চিত্রনাট্য—চলচ্চিত্রের তিন মাধ্যমে পদচারণ অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর। ভারতীয় এই পরিচালক সর্বশেষ বানিয়েছেন কড়ক সিং নামে হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র, যে ছবিতে অভিনয় করেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র বানিয়েও ছবিপ্রেমীদের মন জয় করা এই পরিচালক এক দশক বাংলা ভাষার ছবি বানানো থেকে দূরে ছিলেন। আবার তিনি বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন জয়াকে। আগামী মে মাস থেকে ‘ডিয়ার মা’ নামের এই ছবির শুটিং শুরু হচ্ছে। কলকাতা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে আলাপে প্রথম আলোকে তেমনটাই জানালেন জয়া আহসান।

জয়া আহসান

‘অনুরণন’, ‘অন্তহীন’, ‘অপরাজিতা তুমি’, ‘বুনো হাঁস’, ‘পিঙ্ক’ এবং ‘কড়ক সিং’ ছবিগুলোর জন্য অনিরুদ্ধ রায় প্রশংসিত হয়েছেন। এর মধ্যে বুনো হাঁস ছবিটি ছিল তাঁর বানানো সর্বশেষ বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র। এই ছবির শুটিংয়ের জন্য প্রধান অভিনয়শিল্পী চিত্রনায়ক দেবসহ বাংলাদেশে এসেছিলেন পরিচালক। কয়েক দিন কাজ শেষে তাঁরা ফিরে যান। এরপর অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী, যাঁকে চলচ্চিত্র অঙ্গনের সবাই টনিদা নামে চেনেন, সেই তিনি আবার বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্র বানাচ্ছেন। যেটির প্রধান চরিত্রের অংশ হতে পেরে বাংলাদেশের জয়া বেশ আনন্দিত।

জয়া আহসানের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, বেশ কিছুদিনের পরিচয় হলেও বাংলা ভাষায় ছবি করার জন্য তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু ব্যাটে–বলে হয়ে উঠছিল না। এর মধ্যে হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র কড়ক সিং আগে শুরু হয়। মুক্তিও পায়। জয়া বললেন, ‘টনিদার সঙ্গে ছবি করব বলে অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম। আমিও অপেক্ষা করছিলাম, কখন ডাকবেন তিনি। কিন্তু মাঝে হিন্দি ছবিটা চলে এল। আমরাও সেটা করে ফেললাম। এই বাংলা ছবিটা যখন তৈরি হলো, আমাকে শোনালেন, তখন ভাবলাম, তিনি বেশ কিছুদিন আগে থেকেই এমনটা ভাবছেন। আমাদের বেশ কিছুদিন ধরে কথাবার্তা চলছিল। অবশেষে সব চূড়ান্ত হলো।’

জয়া আহসান

‘ডিয়ার মা’ ছবিটি খুব ভালো একটি ভাবনা নিয়ে তৈরি হচ্ছে বলে জানালেন জয়া আহসান। তাঁর মতে, ছবিতে গুণী অভিনয়শিল্পীরা কাজ করছেন। গল্পটা প্রসঙ্গে জয়া বললেন, ‘এটা সম্পর্কের গল্প। টনিদা তো মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের গল্প বলেন, তেমনই একটা গল্প। মা, মায়ের সন্তান, সম্পর্ক, পরিবার—এগুলো নিয়ে এগোবে ছবিটি। ছবিতে আমার চরিত্রটিও একজন মায়ের। বলতে গেলে প্রথমবারের মতো মায়ের কোনো চরিত্রে অভিনয় করব।’

মে মাসে ছবিটির শুটিং শুরু হবে। তার আগে চলছে প্রস্তুতি। গতকাল কলকাতা থেকে জয়া জানালেন, তিনি ‘ডিয়ার মা’ ছবিটির কর্মশালায় আছেন। বললেন, ‘টনিদা তো তাঁর ছবির জন্য কর্মশালা করান। স্ক্রিপ্ট রিডিং সেশনও চলছে। শিল্পীদেরও ডাকেন, যেমন হয় আরকি একটা ছবিতে। আমাদের এই ছবি নিয়ে সেভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আরেকটা কথা হচ্ছে, স্ক্রিপ্টটাই এমনভাবে তৈরি, যা চরিত্র হয়ে ওঠার প্রস্তুতিটা সহজ করে দেয়। এই ছবির ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে।’

জয়া আহসান

বাংলা ভাষায় বানানো অনিরুদ্ধ রায়ের ছবি বুনো হাঁস ১০ বছর আগে মুক্তি পায়। এরপর হিন্দি ভাষায় পিঙ্ক ও কড়ক সিং বানান। এদিকে ১০ বছর পর এই পরিচালকের বাংলা ভাষার ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে পারাটাকে বড় পাওয়া মনে করছেন জয়া আহসান। জয়া বললেন, ‘আমরা তাঁকে যে ধরনের ছবিতে দেখি, তিনি যেসব ছবি বানিয়েছেন, খেয়াল করলে দেখা যাবে, ঠিক বাংলা ছবির অ্যাপ্রোচে হয় না। সর্বজনীন একটা গ্রহণযোগ্যতা থাকে। সেই ‘অপরাজিতা তুমি’, ‘অন্তহীন’, ‘অনুরণন’। এই ছবিতেও একটা মজার বিষয় হচ্ছে, সমস্ত আর্টিস্টই হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। আমি ঢাকা থেকে, চন্দন রায় সান্যাল বোম্বে, অনুভব ফতেহপুরী দিল্লি এবং পদ্মা প্রিয় দক্ষিণি ছবির। কোনো শিল্পী বাংলার প্রতিষ্ঠিত শিল্পী নয়।’

কলকাতায় ‘ডিয়ার মা’ ছবির আগামী মাসে শুটিং শুরু। সেখানকার প্রেক্ষাগৃহ এখনো প্রদর্শিত হচ্ছে জয়া অভিনীত ভূতপরী। সৌকর্য ঘোষাল পরিচালিত ছবিটি এরই মধ্যে প্রদর্শনের ৭৫ দিন পেরিয়ে গেছে। এই যাত্রা নিয়ে উচ্ছ্বসিত জয়া। কেক কেটে করলেন উদ্‌যাপনও। পাশেই ছিলেন সিনেমার সহযাত্রীরা। জয়ার কেক কাটা এবং খাওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে। ২৮ এপ্রিল থেকে সিনেমাটি দেখা যাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আড্ডাটাইমসে। কারও মতে, বাংলার রূপকথার ভূতের মতো করেই ‘ভূতপরী’ ছবিতে ধরা দিয়েছেন জয়া। ভূতপরী যেন এক মন কেমন করা ভূতের গল্প! কারণ, বনলতা ভূতটা অন্য ভূতের মতো নয়। স্নিগ্ধ, সুন্দর-ঠিক পরীর মতো। লাল শাড়ি-গয়না পরে ঘুরে বেড়ায় পথে–প্রান্তরে, বাড়িতে। সবাইকে ভয় দেখায়। কিন্তু ক্ষতি করতে পারে না।

‘ভূতপরী’র পাশাপাশি বাংলাদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে দেখা যাচ্ছে জয়া আহসানের আরেকটি সিনেমা পেয়ারার সুবাস। এই ছবিও প্রশংসিত হয়েছে। ভারতে জয়া অভিনীত সিনেমার সংখ্যা যত বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে জনপ্রিয়তাও। ২০১৩ সালে আবর্ত দিয়ে কলকাতার চলচ্চিত্রে নাম লিখিয়েছেন জয়া। এরপর ভূতের গল্প, রাজকাহিনী, ঈগলের চোখ, ভালবাসার গল্প এবং বিসর্জন, ক্রিসক্রস থেকে শুরু করে হালের ভূতপরী, বলিউডের কড়ক সিং দিয়ে বোঝাই যাচ্ছে দুই বাংলার একজন অনন্য শিল্পীর নাম জয়া আহসান। পুরস্কার তো আছেই।