ভারতের লোকসভার সংসদ সদস্য চিত্রনায়িকা নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে ২৪ কোটি রুপির প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি সংস্থার মাধ্যমে কলকাতার নিউ টাউনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আবাসন বা ফ্ল্যাট বিক্রির প্রকল্পে তিনি প্রতারণা করেছেন।
এই ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর বিজেপি অবিলম্বে নুসরাতকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের দাবি তুলেছে। এই অভিযোগে ইতিমধ্যে আলিপুর আদালতে নুসরাত জাহানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। অবশ্য আলিপুর থানা এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আলিপুরের জেলা ও দায়রা জজ এই প্রতারণার মামলা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ইডির কাছে অভিযোগও জানানো হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চিত্রনায়িকা নুসরাত জাহান ছিলেন ‘কলকাতা মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকাচার প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি আবাসন প্রকল্প সংস্থার পরিচালক। এই সংস্থার তিনজন পরিচালকের মধ্যে তিনি অন্যতম এবং তাঁর সুনাম বা গুডউইলকে সম্পদ করে এই সংস্থা মাঠে নামে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে। বলা হয়, এই প্রকল্প গড়া হবে কলকাতার রাজারহাটের নিউ টাউনে। এই লক্ষ্যে নুসরাত জাহানরা ৪২৯ জন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মজীবীদের কাছ থকে ৫ লাখ ৫৫ হাজার রুপি করে অগ্রিম অর্থ নেন। অর্থের পরিমাণ ২৪ কোটিরও বেশি। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা তুলে দেন নুসরাত জাহানের ওই সংস্থায়।
কথা ছিল তিন বছরের মধ্যে সবাইকে তিন রুমের একটি করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা এখনো সেই ফ্ল্যাট পাননি। এর আগে একই অভিযোগে কলকাতার গড়িয়াহাট থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। মামলা হলেও ফ্ল্যাট কিংবা অর্থ কোনোটাই পাননি তাঁরা। উল্টো অভিযোগ উঠেছে, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁদের নাকি হুমকি দেওয়া হয়েছে। তাই এবার ইডির দপ্তরে হাজির হয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। অভিযোগকারী ব্যক্তিদের দাবি, তাঁদের এই টাকা দিয়ে নিজের জন্য ফ্ল্যাট কিনেছেন অভিনেত্রী। বিষয়টি তদন্ত করতে ইডির কাছে আবেদন করেছেন তাঁরা। আর এরপরই প্রকাশ পায় এই ঘটনা। পাশাপাশি স্থানীয় সংবাদপত্রেও প্রকাশ হয় নুসরাতের দুর্নীতির খবর।
নুসরাত জাহান ২ আগস্ট কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দেন। তিনি দাবি করেন, ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। শেয়ার হোল্ডারও নন। ২০১৭ সালে তিনি ওই সংস্থা ছাড়েন। তবে স্বীকার করেন এই সংস্থা থেকে তিনি ১ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৮৫ রুপি ঋণ নিয়েছিলেন বাড়ি কেনার জন্য এবং তা সুদে-আসলে ১ কাটি ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৫ রুপি ২০১৭ সালের মে মাসে শোধ করে দেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন।
এই দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দেন বিজেপি নেতা ও রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তিনি দাবি তোলেন, তৃণমূল সংসদ সদস্য নুসরাত জাহানের এই দুর্নীতির তদন্ত হোক ইডির মাধ্যমে।