প্রায় দুই মাস পর আগের মতো নিয়মিত হচ্ছেন নাটকের শুটিংয়ে। দেশের এই সংস্কারের সময় মানসম্পন্ন কাজ করতে চান। দীর্ঘদিন ধরে এই চেষ্টা করলেও বেশ কিছু কারণে কোণঠাসা হয়ে আছেন বলে আক্ষেপ করলেন ছোট পর্দার অভিনেতা আরশ খান। এই অভিনেতা বলেন, ‘আমি অযোগ্য না যে ব্যবহার করা যায় না। অপশন না থাকায় আগে কিছু ভুল কাজ করেছি। এখন আমি মানসম্পন্ন গল্পেই কাজ করব।’
আজ বৃহস্পতিবার এই অভিনেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন বেশির ভাগ কাজই গল্পপ্রধান। গল্প, চরিত্রকে প্রাধান্য দিয়েই অভিনয় করছি। কিন্তু কিছু মানুষ এমনভাবে পেছনে লাগে, তখন সবকিছু সহ্যের বাইরে চলে যায়। এরা আমার ক্যারিয়ারে নানাভাবে ক্ষতি করছে।’
কী ধরনের ক্ষতি করছে—জানতে চাইলে আরশ বলেন, ‘এখন আমার সঙ্গে এ সময়ের ভালো কোনো অভিনেত্রী কাজ করলে পরে অন্য কিছু প্রধান চরিত্রের শিল্পীরা তাঁর সঙ্গে ইচ্ছা করে কাজ করতে চান না। মাঝে দেখা যায়, সেই সহ–অভিনেত্রী বাধ্য হয়েই আমার সঙ্গে আর কাজ করতে চান না। এটা তাঁরা করেন আমাকে চাপে ফেলতে। এখন আবার অনেকেই বলেন আমার সঙ্গে তাসনুভা তিশা কেন এত অভিনয় করেন। তাকেও হয়তো বাধা দেয়। কিন্তু আমার জানামতে, তাসনুভা এগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। তার মধ্যে সেই প্রফেশনালিজমটা আছে। কারণ, সে ভালো কাজ করতে চায়।’
বর্তমানে গল্পপ্রধান চরিত্রের খোঁজ করলেও আগে তাঁকে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে বেশির ভাগ কমেডি নাটকে দেখা গেছে। এটা স্বীকার করে তিনি জানালেন, তখন তিনি কিছু ভুল করেছেন। সেটা তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুতে। একদিকে তাঁর মা অসুস্থ ছিলেন। নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হতো। এ জন্য তাঁকে নিয়মিত কাজ করতে হতো। অন্যদিকে ভিউকে টার্গেট করে কাজ করার কারণে সেই একই রকমের গল্পে তাঁকে বারবার দেখা যেত। চাইলেও গল্পপ্রধান চরিত্রের জন্য প্রযোজকেরা তাঁকে বাছাই করতেন না।
আরশ বলেন, ‘আমি ছিলাম নিরুপায়। ভিউ হবে এমন কমেডি, রোমান্টিক গল্পেই প্রযোজকেরা আমাকে ডাকতেন। আমি অনেক অনুরোধ করেছি, ভাই একটা ভালো গল্পে আমাকে নেন। কিন্তু নেয়নি। এখন গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করলে ভিউ হবে না। তাহলে তো আমার ক্যারিয়ারই চলে যাবে। কিন্তু আমাকে তো টিকে থাকতে হবে। যে কারণে জেনেশুনেই অপছন্দের গল্পে অভিনয় করে গেছি। এটা না হলে আমাকে অভিনয় ছেড়ে দিতে হতো। আর কোনো অপশন ছিল না। আর ভালো পরিচালকের দেখা সেই সময়ে তেমন একটা হয়নি।’
ক্যারিয়ারে বারবার বঞ্চিত হওয়ার আক্ষেপের যেন শেষ নেই। সময়ের ভালো আরও অনেক নির্মাতার সঙ্গে তাঁর কাজ করাটা এখনো হয়ে ওঠেনি। এখানেও একটা সিন্ডিকেটের মধ্যে পড়েছেন বলে জানান তিনি। ‘দেখুন আমি ১২ বছরের মতো থিয়েটারের সঙ্গে ছিলাম। আমার পরিবারের সঙ্গে অভিনয়ের যোগসূত্র আরও আগের। আমার পছন্দের সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ। আমার পছন্দের পরিচালক সত্যজিৎ রায়। অভিনয়ের প্রতি আমার ভালোবাসাটা আছে। আমি গল্প, চরিত্র বুঝি। যখন ছাড় দিয়ে কাজ করেছি, তখন শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করেছি। অপেক্ষা করেছি ভালো দিনের।’
আরশের সেই স্ট্রাগল এখনো চলছে। এর মধ্যে প্রাপ্তি, তাঁর ভক্ত তৈরি হয়েছে। ভক্তরা তাঁর কাজ দেখতে চান। এগুলোকেই ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তি বলে মনে করেন। ‘আমি সব ধরনের গল্পে অভিনয় করতে চাই। সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাই। যাঁরা আমাকে ডাকেন না, তাঁদের বলতে চাই, আমি কিন্তু অযোগ্য না। আমার সেই ডেডিকেশনটা আছে। চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের ভরসা করতে পারেন, সেই আশ্বাস দিচ্ছি। আর যাঁরা ডাকবেন না ধরেই নিয়েছেন, তাঁদের যেন কোনো দিনও আর ডাকতে না হয়। এতে আমি থেমে থাকব না। আমার মতো করেই আমি কাজ করে যাব। নিজেকে কীভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে তৈরি করা যায়, সেই পথেই আমি হেঁটে যাব।’ বলেন আরশ।
সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার আরশ খান অভিনীত ‘জোনাকিরা এই শহরে আর জ্বলে না’ ও ‘বিনি সুতোর প্রেম’ ইউটিউবে প্রচার হয়েছে। নাটকে তাঁর সহশিল্পী তাসনুভা তিশা।
অন্যদিকে রাইসুল তমাল পরিচালিত ‘জোনাকিরা এই শহরে আর জ্বলে না’ ’ নাটকে তাঁর সঙ্গে জুটি হয়েছেন তানিয়া বৃষ্টি।