বহু জল ঘোলা হয়েছিল কাঞ্চন মল্লিক ও শ্রীময়ী চট্টরাজের বিয়েকে কেন্দ্র করে। অভিনেতার তৃতীয় বিয়েকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। সাবেক স্ত্রী পিঙ্কির সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রচুর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ও হয়েছে। তবে সেসব এখন পুরোনো। বর্তমানে স্বামী কাঞ্চনকে নিয়ে সুখেই আছেন শ্রীময়ী চট্টরাজ। বিয়ের সাত মাস পেরিয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেও দাম্পত্য এবং প্রথম দিকের প্রেম নিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি খুলেছেন অভিনেত্রী।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন দাম্পত্য ও সম্পর্ক নিয়ে বহু অজানা তথ্যও। শ্রীময়ী লিখেছেন, ‘সময় শান্ত নয়। কেউ ভালো নেই। মন ভালো নেই। আর জি কর-কাণ্ডে বিচার চেয়ে পথে নেমেছে শহরবাসী। সামাজিক মাধ্যম হোক কিংবা টিভি—সব জায়গাতেই বিদ্রোহের ছবি। “বিচার চাই” স্লোগান দেখতে দেখতে ক্লান্তি আসছিল। সেই অস্থিরতার মধ্যেই ভালোবাসার উদ্যাপন করলাম না হয়, ইচ্ছে হলো। আমাদের বিয়ের সাত মাস কেটেছে সবে। কিন্তু আমাদের চেনাজানা তো দীর্ঘদিনের। সেই প্রথম চেনার সময় এত ভয় ছিল না, নিরাপত্তার অভাব বোধ হতো না। কেউ যখন–তখন যেকোনো ছবি প্রকাশ্যে এনে দেবে, এমন দুর্ভাবনাও ছিল না।’
কাঞ্চন মল্লিকের স্ত্রী শ্রীময়ী ফিরে যান প্রায় এক যুগ আগে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রায় ১২ বছর আগে যখন কাঞ্চনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, তখন সবে মাধ্যমিক দিয়েছি। কথা হতো, আজ আমার ভূগোল পরীক্ষা ছিল, নাকি ইতিহাস পরীক্ষা ছিল, সেসব নিয়ে। তখন দামি ফোনও ছিল না। দেখাসাক্ষাৎ হতো কাজের জায়গায়। তবে আমরা যে খুব বেশি একসঙ্গে কাজ করেছি, তেমনটাও তো নয়। অপেক্ষা করে থাকতাম দুর্গাপূজার জন্য। সেই সময় একটা দিন বিশেষভাবে দেখা হতো কাঞ্চনের বন্ধুর বাড়িতেই। কাঞ্চনদের একটা গ্রুপ ছিল, ইন্ডাস্ট্রির অনেক বন্ধুই ছিল তাতে। খরাজ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে আড্ডা বসত। প্রথম দিন থেকে আমাদের সম্পর্কের সাক্ষী খরাজদা। সেই সব দিন বড্ড মনে পড়ে। এখন এই সামাজিক মাধ্যমের অতি সক্রিয়তার যুগে সেসব যেন কোথায় হারিয়ে গেল। প্রেমের সূচনা পর্বে কখনো ভয় পাইনি কিংবা প্রেম জাহির করার প্রয়োজনও বোধ করিনি। গানবাজনা, আড্ডা—এসব নিয়েই দিন কেটেছে। অনেক বেশি সুরক্ষিত মনে করতাম। কিন্তু এখন মানুষের প্রতিবাদ থেকে দৈনন্দিন খুঁটিনাটি—সবকিছুর একটাই জায়গা, সামাজিক মাধ্যম।’
কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে সম্পর্ক ও ভাঙাগড়া নিয়েও মন্তব্য করেন অভিনেত্রী। লিখেছেন, ‘বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত, সম্পর্ক শুরুর দিনগুলোতে যেমন ঢাকঢোল পেটাইনি, তেমনি এই সম্পর্কে যদি কোনো দিন ইতি টানতে হয়, তাহলে সেটাও হবে সৌজন্য বজায় রেখেই। হতেই পারে ১০ বছর বাদে আমরা হয়তো একসঙ্গে থাকতে পারলাম না। তখন আমি আমার অন্দরমহলের কথা নিশ্চয় রাস্তায় ছড়িয়ে দেব না! কাঞ্চনের আগের বিয়ের ক্ষেত্রে তো সেই কুৎসা হলো। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। বিষয়টা ব্যক্তিগত রাখা যেত। সেটা নিয়ে রাস্তায় নামার দরকার ছিল না। পরে একটা বিবৃতি দিলেই তো মিটে যেত। অনেকটা উত্থান-পতন, বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে এই সম্পর্কটা পরিণতি পেয়েছে। আমি চাই, আমাদের এই বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক।’
শ্রীময়ী আরও বলেন, ‘এই সময় হয়তো প্রেম উদ্যাপনের সঠিক সময় নয়। শহরের পরিস্থিতি নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন। আর জি কর-কাণ্ডে নিহত তরুণী চিকিৎসকের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। আমরা সবাই বিচার চাইছি। নারীরা পথে নেমেছেন। তবে একটা প্রশ্ন করতে চাই। শুধু শারীরিক নির্যাতনই কি সব? মানসিক নির্যাতনের বিচার কে করবে? আমাদের বিয়ের সাত মাস কেটে গেছে। কিন্তু ক্রমাগত যে কুৎসিত মন্তব্য আসে সামাজিক মাধ্যমে, সেটাও তো নির্যাতনই। বলতে পারি মানসিক অত্যচার। এরও বিহিত হওয়া দরকার।’