দুজনেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তবে আলাদা ইন্ডাস্ট্রির। পর্দায় একে অন্যকে দেখেই পরিচয়। বলছি দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান ও মালয়লাম অভিনেত্রী পদ্মাপ্রিয়া জানকিরামনের কথা। এই দুই অভিনেত্রীকে এবার একসঙ্গে দেখা যাবে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘ডিয়ার মা’ সিনেমাতে। গতকাল বুধবার থেকে সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়েছে। প্রথম তাঁদের দেখা হওয়ার ঘটনা ছিল বেশ মজার।
জয়াকে তখনো চিনতেন না পদ্মাপ্রিয়া। ‘কড়ক সিং’ সিনেমায় জয়ার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন। সিনেমা শেষ করেই পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীকে ফোন করেছিলেন পদ্মাপ্রিয়া। সেই অভিজ্ঞতা জয়ার সঙ্গে ভাগাভাগি করলেন। জয়ার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর পদ্মাপ্রিয়া বলেন, ‘তোমার অভিনয় থেকে চোখ সরছিল না আমার। আমি পঙ্কজ ত্রিপাঠীর ভক্ত। মালয়ালম ছবিতে কাজ করার সুবাদে পার্বতীকে বহুদিন চিনি। কিন্তু তোমাকে দেখে আমি দাদাকে (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) ফোন করে জানতে চাই, এই নারী কে?’
জয়া কিন্তু তাঁকে ঠিকই চিনতেন। তাই পদ্মাপ্রিয়ার কথা শেষ না হতেই জয়া বলেন, ‘তুমি জানো “অপরাজিতা তুমি”তে তোমার ওই চরিত্র আমাকে আবিষ্ট করে রাখত, মনে হতো ওই চরিত্রকে গিয়ে আলিঙ্গন করি।’
‘অপরাজিতা তুমি’ সিনেমায় ‘কুহু’ রূপে পদ্মপ্রিয়াকে দেখা গিয়েছিল। এক যুগ আগের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত অভিনীত সেই সিনেমা প্রশংসিত হয়েছিল। সেই সিনেমার পরিচালকও ছিলেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী।
প্রথমবার তাঁরা একসঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করছেন, সেটাও দুজনের কাছে অন্য রকম পাওয়া। জয়া তো বলেই দিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে কাজ করব, ভেবেই কী ভালো লাগছে!’ অন্যদিকে পদ্মাপ্রিয়াও সরাসরি বলে দিলেন, ‘আমি কী বলব জানি না! স্বপ্ন সত্যি? আমরা তো অভিনেতা; আমাদের অন্য অভিনেতাকে নিয়ে আবেগ থাকে। তার পর চরিত্র আসে।’
‘ডিয়ার মা’ নিয়ে তাঁদের কথা হয়। উঠে আসে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সিনেমার নারী চরিত্রের কথা। এই পরিচালক সিনেমায় নানাভাবে নারীদের কথা তুলে ধরেছেন। সেই আলোচনায় জায়গা করে নেয় দুজনের পরিবারের কথা, মায়ের কথা, তাঁদের পছন্দ–অপছন্দের কথা।
পদ্মাপ্রিয়া বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক, আবেগ—এগুলো কিন্তু প্রজন্মের নিরিখে খুব বেশি বদলায় না। আগে আমরা মায়ের সঙ্গে পার্কে যেতাম, এখন শপিং মলে যাই। আমার মায়ের সঙ্গে খুব জটিল সম্পর্ক। কিন্তু খুব স্বচ্ছ, সৎ। আমার বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন। আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছি। মা স্কুলে পড়াতেন। আমাদের দেখাশোনার দায়িত্ব অবশ্য মায়ের ওপর ছিল। বাবা ইচ্ছা থাকলেও সময় দিতে পারতেন না। তিরিশের কোঠার শেষ দিকে এসে আমি মাকে একজন নারী হিসেবে বুঝতে শুরু করি।’
জয়াও এ সময় তাঁর পরিবার ও মা-বাবা সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে ঝগড়া ও ভালোবাসার সম্পর্ক। মা বন্ধু। মা-ও বড় হয়েছেন, আমিও সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়েছি। আমার বয়সের মায়ের ছবি দেখে চমকে যাই। যেন হুবহু আমি। মনে হয় বয়সের কারণে মায়ের পায়ে ব্যথা হচ্ছে, তা হলে আমারও কি ওই বয়সে এ রকম হবে? মা খুব গাছ ভালোবাসে, আমিও তা–ই। আমি কিন্তু চাষ করি। এটা সকলে জানেন না।’ পরে পদ্মাপ্রিয়া জানান, তিনি আসলে কৃষিকাজ পছন্দ করেন। চাষ করতে তাঁরও ভালো লাগে। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর সিনেমা মানেই আড্ডা ও কাজ। সেটা যে জমে উঠেছে, সেটা নিমেষেই বলা যায়। তবে দুই অভিনেত্রীকে পর্দায় কীভাবে দেখা যাবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন