ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণা মামলায় পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সংসদ সদস্য ও অভিনেত্রী নুসরাত জাহানকে তলব করে ভারতের আর্থিক দুর্নীতি-সংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪৩ মিনিটে কলকাতার ইডির কার্যালয়ে হাজির হন এ অভিনেত্রী। সেখানে সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। ইডি দপ্তর থেকে বেরোনো স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নুসরাত বলেন, ‘ইডির সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছি।’
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৭ মিনিট নাগাদ সাদা রঙের নীলবাতি লাগানো গাড়িতে করে বাড়ি থেকে বের হন নুসরাত। সকাল ১০টা ৪৩ মিনিটে সল্ট লেকের সিজিও কমপ্লেক্সে; অর্থাৎ কলকাতায় ইডির দপ্তরে পৌঁছান নুসরাত। হাতে বেশ কিছু নথি নিয়ে ইডি দপ্তরে ঢোকেন এ অভিনেত্রী। এই প্রতারণাকাণ্ডে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বসিরহাটের তৃণমূল সংসদ সদস্য। তদন্তে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী।
নুসরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, একটি সংস্থার মাধ্যমে কলকাতার নিউটাউনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আবাসন বা ফ্ল্যাট বিক্রির প্রকল্পে তিনি প্রতারণা করেছেন। এই ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর বিজেপি অবিলম্বে নুসরাতকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের দাবি তুলেছে। এই অভিযোগে ইতিমধ্যে আলিপুর আদালতে নুসরাত জাহানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, চিত্রনায়িকা নুসরাত জাহান ছিলেন কলকাতা মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি আবাসন প্রকল্প সংস্থার পরিচালক। এই সংস্থার তিনজন পরিচালকের মধ্যে তিনি অন্যতম এবং তাঁর সুনাম বা গুডউইলকে সম্পদ করে এই সংস্থা মাঠে নামে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে।
বলা হয়, এই প্রকল্প গড়া হবে কলকাতার রাজারহাটের নিউটাউনে। এই লক্ষ্যে নুসরাত জাহানরা ৪২৯ জন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মজীবীদের কাছ থকে ৫ লাখ ৫৫ হাজার রুপি করে অগ্রিম অর্থ নেন।
অর্থের পরিমাণ ২৪ কোটিরও বেশি। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা তুলে দেন নুসরাত জাহানের ওই সংস্থায়। কথা ছিল, তিন বছরের মধ্যে সবাইকে তিন রুমের একটি করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা এখনো সেই ফ্ল্যাট পাননি।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন কলকাতা পুলিশ এবং ইডির গোয়েন্দারা। নুসরাত জাহান ২ আগস্ট কলকাতা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দেন। তিনি দাবি করেন, ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।
শেয়ারহোল্ডারও নন। ২০১৭ সালে তিনি ওই সংস্থা ছাড়েন। তবে স্বীকার করেন, এই সংস্থা থেকে তিনি ১ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৮৫ রুপি ঋণ নিয়েছিলেন বাড়ি কেনার জন্য এবং তা সুদে-আসলে ১ কাটি ৪০ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৫ রুপি ২০১৭ সালের মে মাসে শোধ করে দেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন।