বয়স মাত্র ২৫ বছর। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার বাসিন্দা পল্লবী নিজেকে প্রমাণ করতে গিয়েছিলেন কলকাতা শহরে। সাড়া দিয়েছিলেন রুপালি পর্দার হাতছানিতে। অল্প দিনেই নাম করেছিলেন। ধারাবাহিক নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘আমি সিরাজের বেগম’ ধারাবাহিকে সিরাজের স্ত্রী লুৎফার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এই চরিত্রের জন্য তিনি জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন। তার আগে ‘রেশম ঝাঁপি’ ধারাবাহিকেও তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছিল। ‘কুঞ্জছায়া’ নামে একটি ধারাবাহিকেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। বর্তমানে পল্লবী অভিনয় করছিলেন ‘মন মানে না’ ধারাবাহিকে। সেখানে তিনি নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। সেই পল্লবী আজ রোববার হঠাৎ করেই পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। রোববার সকালে কলকাতা শহরের গড়ফার ফ্ল্যাট থেকে পল্লবীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। বিছানার চাদর দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইতিমধ্যেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছে পুলিশ। কিন্তু তরুণ প্রাণবন্ত অভিনেত্রী পল্লবী দের এমন মৃত্যু কেন হলো? এমন প্রশ্নের মধ্যেই উঠে আসছে তাঁকে নিয়ে আরও জল্পনা। প্রশ্ন উঠছে, সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরেই কি এই মৃত্যু?
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আগে তিনি থাকতেন হাওড়া এলাকায়। বাড়িতে মা-বাবা ও এক ভাই। পল্লবীর ফেসবুক প্রোফাইল বলছে, ২০২১ সালের ১৯ জুলাই তাঁর সম্পর্কের স্ট্যাটাস ছিল ‘ইন আ রিলেশনশিপ’। সেই স্ট্যাটাসে অনেকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন।
দেড় মাস ধরে তাঁর প্রেমিক সাগ্নিক চক্রবর্তীর সঙ্গে গড়ফা এলাকায় থাকতেন পল্লবী। সকালে কোনো কারণে বাইরে গিয়েছিলেন সাগ্নিক। ফিরে দেখেন দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতেই তিনি পল্লবীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। এরপরই পুলিশে খবর দেন তিনি।
২০১৩ সালে ফেসবুকে যোগ দেন পল্লবী। গড়ফায় তাঁর দেহ উদ্ধার হলেও ফেসবুকে দেওয়া তাঁর অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী তিনি হাওড়ার বাসিন্দা। সাঁতরাগাছি ভানুমতী গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরিও করেন। এরপর কলকাতার সব বিনোদন টিভি চ্যানেলেই কাজ করেছেন বলে উল্লেখ আছে ফেসবুকে।
এই অভিনেত্রীর ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগই পোস্টই নিজের কাজ সম্পর্কে। শুটিংয়ের ঝলক থেকে ধারাবাহিকের বিভিন্ন দৃশ্যের ছবিও পোস্ট করেছেন। সহ-অভিনেতা, সহ-অভিনেত্রীদের সঙ্গে বেশ কিছু ছবিও পোস্ট করেছিলেন গত ফেব্রুয়ারিতেই। ২৩ ফেব্রুয়ারি জন্মদিন ছিল পল্লবীর।
মৃত্যুর আঠারো ঘণ্টা আগেও তিনি প্রেমিক সাগ্নিকের সঙ্গে সপ্তাহের শেষ দিন (ভারতে রোববার ছুটির দিন) কাটানোর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ছবি অনুযায়ী সপ্তাহের শেষ দিনে ছুটির মেজাজে কলকাতা শহর ঘোরাঘুরির পাশাপাশি তাঁরা রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়াও করেছিলেন।
শনিবার রাতেও দক্ষিণ কলকাতার রাস্তায় মোমো খেয়েছেন তিনি। রাতের কলকাতার নানা ছবি পোস্ট করেছেন। কিন্তু তারপরই এমন কী ঘটল? মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
পল্লবীর পরিবারের দাবি, আত্মহত্যা নয়, খুন করা হয়েছে তাদের মেয়েকে। যদিও নির্দিষ্ট কোনো নাম তাঁরা বলতে চাননি। অপেক্ষা করছেন ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য।
আরেকটি সূত্র বলছে, শনিবার ও রোববার তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়েছিল। তবে কী নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত ঘরের ভেতর থেকে কোনো সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে গড়ফা থানায় মৃত অভিনেত্রী পল্লবী দের প্রেমিককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, রোববার সকালে সিগারেট খেতে বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ি ফিরে দেখেন দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তিনি পল্লবীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। তিনিই পুলিশে খবর দেন।