যাঁরা টিকিট কেটে অনুষ্ঠান দেখতে এসেছেন, তাঁদের সামনে পারফর্ম করার মজাটাই আলাদা: অনুপম রায়

ঢাকায় গাইছেন অনুপম
ছবি : প্রথম আলো

ঢাকায় আসছেন কলকাতার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী অনুপম রায়। মাসখানেক আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেড়াচ্ছে। কনসার্টে গাইবে হাতিরপুল সেশনস, মেঘদল, তালপাতার সেপাই, অনুপম রায় ও শায়ান চৌধুরী অর্ণব। বারবার চোখ আটকে যাচ্ছিল অনুপম রায়ের নামের পাশে। ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’, ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’, ‘প্রেম হোক কি বিরহ’ কিংবা ‘বন্ধু চল’—অনুপম রায়ের গানের কথাগুলো যেন জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। নিজেই গান লেখেন তিনি, সুর করেনও; মোহনীয় কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ করেন শ্রোতাদের।

পছন্দের এই গায়ককে তাই আর একটু কাছে থেকে জানার ইচ্ছাটা অনেক পুরোনো। বাংলাদেশে অনুপম রায় আসবেন শুনেই খোঁজ নিতে শুরু করলাম কীভাবে আর একটু বেশি জানা যায় তাঁকে, গানের বাইরের মানুষটাই আরেকটু চেনা যায়।

অনুপম রায়ের সঙ্গে সারা ফ্যায়রুজ যাইমা

গত বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা কনভেনশন হলে পাওয়া গেল তাঁর দেখা। মুখে মিষ্টি হাসিটা ধরে রেখেই গাইলেন তাঁর ৮টি জনপ্রিয় গান। শেষ হতেই ছুটে গেলাম ব্যাক স্টেজে। দেখা পাওয়া গেল না তাঁর, কনসার্ট শেষে দ্রুত বেরিয়ে গেছেন। তবে হাল ছাড়া যাবে না, আয়োজকদের মধ্যে দুজন বন্ধুকে খুঁজে পেলাম; আবদার করলাম, ‘সাক্ষাৎকার চাই।’ দুজনই আলাদাভাবে জানাল, পরদিন (গত শুক্রবার) সকাল ৯টা–১০টার মধ্যে হয়তোবা তাঁকে পাওয়া যেতে পারে। তিনি আছেন রাজধানীর বনানীর এক হোটেলে।

পরদিন বেলা ১১টায় হোটেল লবিতে আয়োজকদের একজন জানালেন, ঘুম থেকে উঠেছেন অনুপম। বেলা দুইটায় ফিরতি ফ্লাইট, তাই একবারে ব্যাগ গুছিয়েই নামবেন তিনি। ১২টা ১৫ মিনিটে লবিতে পাওয়া গেল অনুপম রায়কে। তাঁর ম্যানেজারের কড়া নির্দেশ পাঁচ মিনিটের বেশি সময় দেওয়া যাবে না।

লবিতে আসামাত্র কীভাবে যেন সেলফি তোলার একটা ছোটখাটো ভিড় জমে গেল, এর মধ্যেই এগিয়ে গেলাম, আগে থেকেই জানতেন প্রথম আলো থেকে সাক্ষাৎকার নিতে এসেছি। নিজের পরিচয় দিয়ে শুরু করলাম।

প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলছেন অনুপম রায়। ছবি : প্রথম আলো

শুভ সকাল। একটু এদিকটায় আসবেন।
(মিষ্টি হেসে) অবশ্যই, কোন দিকটায়?

হোটেল লবির আরেক পাশে তুলনামূলক ভিড় কম একটা জায়গা ঠিক করে রাখা ছিল, ক্যামেরার সামনে বসলাম দুজনই। ক্যামেরার ফোকাস ঠিক করতে করতেই দুই-তিনটা ছবি তুলে নিলাম। চাইলেও বেশি সময় দেওয়ার উপায় নেই। দুইটায় ফ্লাইট।
ক্যামেরার পেছন থেকে আওয়াজ এল, ‘সব ঠিক আমরা শুরু করতে পারি।’ শুরু হলো আলাপচারিতা—

কেমন আছেন, বাংলাদেশে এসে কেমন লাগছে?
ভীষণ ভালো লাগছে, প্রতিবারের মতো এবারও ভালো লাগছে।  

কেমন ছিল গতকালের অভিজ্ঞতা?
খুব ভালো লাগল। আসলে আমরা অনেক সময় আসি বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবের বিভিন্ন জায়গায় করপোরেট ইভেন্টে পারফর্ম করি। যখন আমার আসল শ্রোতা যাঁরা টিকিট কেটে অনুষ্ঠান দেখতে এসেছেন, তাঁদের সামনে পারফর্ম করার মজাটাই আলাদা। সেখানে সবাই গান জানে, আমার সঙ্গে গাইছে, এত মানুষ একসঙ্গে গাইছে—তুলনাহীন অভিজ্ঞতা।

সম্প্রতি বাংলাদেশের লেখক সাদাত হোসাইনের লেখা একটি গান গেয়েছেন বেলাল খানের সুরে, আপনি তো সাধারণত নিজের লেখা, সুরে গান করেন।
গানটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সাধারণত নিজের লেখা সুরেই গান হয়। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম হয়—অন্যরা লেখেন, সুর করে আমাকে গাইতে অনুরোধ করেন; এটি সে রকম একটি গান। রেকর্ড কিন্তু অনেক দিন আগেই হয়েছে, অপেক্ষায় আছি কবে রিলিজ করবে, গানটার প্রতি আমার একটা বিশেষ ভালোবাসা আছে।

যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তখনকার গানের আড্ডার কোনো গল্প আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন?  
যাদবপুরে গানের একটা আবহাওয়া আছে। আমার মনে হয়, বেশির ভাগ ইউনিভার্সিটিতেই থাকে; ওই যে বয়সটা ১৮ থেকে ২২, ওই সময়টাতে পৃথিবীটা চোখের সামনে খুলে যাচ্ছে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন পথ বেছে নেয়, আমি নিয়েছিলাম সংগীত। গান আমাকে আনন্দ দিত, সংগীতের মাধ্যমে স্বাধীনতা উপভোগ করতাম। তখন গান তৈরির চেষ্টা করছি কিন্তু লজ্জায় বন্ধুদের শোনাতে পারি না। কে কী রকম ভাবে, প্রতিক্রিয়া দেখাবে, বুঝতে পারি না। পড়াশোনায় খুব ফাঁকি হতো, গান-বাজনা, খেলাধুলা এগুলোই বেশি হতো।

শুনেছি, আপনার মা-বাবা নাকি আপনাকে খুব মজার একটা নামে ডাকতেন—‘ম্যাগনেট’।
এটা পুরোপুরি বাবার কাজ আরকি (হাসতে হাসতে)। বাবা মূলত ম্যাগনেট বলে ডাকতেন, সেখান থেকে মা–সহ পাড়ায় অনেকেই ডাকত। তবে খুব লজ্জিত হয়ে পড়ি যখন বাবা প্রকাশ্যে হঠাৎ ম্যাগনেট বলে ডাকেন। কিন্তু কী করা যাবে, নাম তো মানুষের সঙ্গে থেকে যায়।

প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলছেন অনুপম রায়। ছবি : প্রথম আলো

বাংলাদেশের শ্রোতা–দর্শকদের উদ্দেশে যদি কিছু বলতে চান।
বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই যে গভীর ভালোবাসা...প্রতিবার আসা হয় চট্টগ্রাম হোক বা ঢাকা—অভিভূত হই। আবার কবে আসব, সেটার অপেক্ষা করতে থাকি। সবাই ভালো থাকবেন।