‘আপনার জন্যই রক অ্যান্ড রোল সংগীতে আমার তারকা হওয়া সম্ভব হয়েছে,’ ১৯৭০ সালে জেরি লি লুইসের পায়ে চুমু খেতে গিয়ে বলেছিলেন জন লেনন। গত শুক্রবার মারা গেছেন রক অ্যান্ড রোল সংগীতের অন্যতম এই পথিকৃৎ। শুরুর সময়ের সঙ্গীসাথিরা আগেই চলে গেছেন। বাকি ছিলেন কেবল তিনি। লুইসও এবার চলে গেলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপিতে বার্ধক্যের কারণে ৮৭ বছর বয়সে মারা গেলেন এই সংগীতশিল্পী ও পিয়ানোবাদক।
রক অ্যান্ড রোলকে সংগীতের আলাদা ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে যে কয়েকজনের ভূমিকা অনস্বীকার্য, লুইস তাঁদের অন্যতম। অসাধারণ গায়কি, দুর্দান্ত পিয়ানো বাজানো আর মঞ্চে প্রাণবন্ত উপস্থিতি, এই তিনের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল তাঁর খ্যাতি। ‘গ্রেট বলস অব ফায়ার’-এর মতো ক্ল্যাসিক উপহার দেওয়া এই শিল্পী ভক্তদের কাছে ছিলেন ‘দ্য কিলার’।
গানের বাইরে নানা বিতর্কের জন্যও জীবনভর বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন লুইস। বিশেষ করে সাতবার বিয়ে করার জন্য সমালোচিত হয়েছেন বিস্তর। এই বিতর্কে সবচেয়ে বড় জায়গাজুড়ে আছে চাচাতো বোন মায়রা গ্যাল ব্রাউনের সঙ্গে বিয়ে। মাত্র ১৩ বছর বয়সী মায়রাকে বিয়ের পর লন্ডনের কনসার্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। তাঁর রক অ্যান্ড রোল ক্যারিয়ার কার্যত থমকে যায়। পরে কান্ট্রি মিউজিকে খ্যাতি পান লুইস। ১৩ বছর বয়সী একজনকে বিয়ে করায় পরে অবশ্য অনুতাপও করেছেন লুইস।
১৯৩৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানাতে লুইসের জন্ম। ৪ বছর বয়স থেকে সংগীতে আগ্রহী। লুইসের যখন ৯ বছর বয়স, তাঁকে পিয়ানো কিনে দিতে পারিবারিক খামার বন্ধক রাখেন তাঁর মা-বাবা। বড় হয়ে লুইসের নিয়তি হয়তো সেখানেই লেখা হয়ে যায়। লুইস ছিলেন আরেক কিংবদন্তি শিল্পী এলভিস প্রিসলির বন্ধু, বড় প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে। ১৯৫৬ সালে টেনেসিতে সান রেকর্ডের সঙ্গে যুক্ত হন লুইস। একই বছর লুইস, প্রিসলি ও জনি ক্যাশ একত্র হন ‘মিলিয়ন ডলার কোয়ারটেট’-এ। মুক্তির পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি পায় এই ‘জ্যাম সেশন’। মনে করা হয়, ‘মিলিয়ন ডলার কোয়ারটেট’তেই সুপ্ত ছিল রক অ্যান্ড রোলের বীজ।
১৯৫৯ সালে ‘দ্য কিলার’ তকমা পান লুইস। এর আগে মুক্তি পায় তাঁর কালজয়ী গান ‘গ্রেট বলস অব ফায়ার’। সর্বকালের সবচেয়ে বিক্রি হওয়া সিঙ্গেলের একটি এটি। অনেক আগেই সংগীতে কিংবদন্তির মর্যাদা পেয়েছেন, হয়েছেন পরের কয়েক প্রজন্মের প্রেরণা। তাঁর মৃত্যুতে এলটন জন টুইট করে লিখেছেন, ‘লুইস ছাড়া আজকে আমি যা, তা হতে পারতাম না।’
সংগীতে অবদানের জন্য ২০০৫ সালে গ্র্যামিতে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। তাঁর বহুবিবাহ, পানাসক্তি নিয়ে নানা বিতর্ক হলেও এক সাক্ষাৎকারে লুইস বলেছিলেন, ‘আমি চাই, আমাকে কেবল গানের জন্যই মনে রাখা হোক।’