prothomalo-bangla
গান

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের জানা–অজানা গল্প

বিনোদন ডেস্ক
সাধারণ মানুষের জন্য গান করতেন তিনি। শৈশব থেকে জীবনের শেষ গান পর্যন্ত নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে গান করে গেছেন। সংগীতকে ভালোবেসে নিজেকে উজাড় করেছেন গানে। একের পর এক মানুষের কাছ থেকে শিখেছেন জীবনবোধের শিক্ষা, সেগুলো তুলে ধরেছেন গানে। সেই সংগীতশিল্পীর প্রয়াণে শোকবিহ্বল দুই বাংলার শ্রোতারা। আজ শনিবার থেমে গেল প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ পথচলা। ছবিতে দেখে নিতে পারেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ৮৩ বছর।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলায়। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক, মা বাণী মুখোপাধ্যায় গৃহিণী। দেশ বিভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গের চুঁচুড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে ওঠেন প্রতুল। ছবি: রতন বসু মজুমদার
প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলায়। বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক, মা বাণী মুখোপাধ্যায় গৃহিণী। দেশ বিভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গের চুঁচুড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে ওঠেন প্রতুল। ছবি: রতন বসু মজুমদার
সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাবেন, এটা কখনোই ভাবেননি। তিনি মনে করতেন, গান করার জন্য যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেই প্রক্রিয়ায় যাওয়াটা কঠিন। কারণ, তাঁদের তখন দারিদ্র্যর মধ্যে বেড়ে উঠতে হয়েছে। স্কুলে যেতে খালি পায়ে। তবে শৈশবে বেশির ভাগ সময় গানের চর্চার পাশে থাকতেন তিনি।
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
শৈশব থেকেই স্কুলে কোনো আয়োজন থাকলে গান করতে তাঁর ডাক পড়ত। সবার প্রশংসা পেয়েছেন শৈশব থেকেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে গানের চর্চায় বড় হয়েছেন। এর মধ্যে বাবার কাছেও গান শিখেছেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমাদের সারা পৃথিবীজুড়ে সংগীত ছিল, পাখির ডাক থেকে শুরু করে যে ভিখারি সকাল বেলা কীর্তন গাইত, কেউ শ্যামাসংগীত গাইত, বাবার সঙ্গে বসে একজন বেহালা বাজাতেন এবং গাইতেন—তাঁরাই আমাকে সংগীতে এনেছেন। তাঁদের গলা, গানগুলো আমি গলায় তুলেছি।’
মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি কবি মঙ্গল চরণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি ধান কাটার গান গাই’ কবিতায় প্রথম গানরূপে সুর দেন এবং সেই সময়েই গানে প্রথম কণ্ঠ দেওয়া। ১৯৯৪ সালে সেই একই গান রেকর্ডিং করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্কুলের গণ্ডি পেরোলেও তখন তিনি হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন না। যে কারণে তাঁকে বলা হতো, আড্ডার আর্টিস্ট। হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন না বলে অনেকেই নাকও সিটকাতেন। এগুলো নিয়ে মন খারাপ হতো।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি অনুরোধের আসরের মতো গুণী শিল্পীদের গান গেয়ে শোনাতেন। কারণ, সব রকম শিল্পীর গানই তিনি পছন্দ করতেন। এ জন্য তাঁকে বাড়ি থেকে অনেক দূরে রেডিও শুনতে যেতে হতো। গান শুনেই মনে রাখতে পারতেন। তিনি জানতেন, যে গান একবার শুনছেন, সেটা আর দ্বিতীয়বার শোনার সুযোগ পাবেন না।
স্কুলে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তখন নাটকের প্রয়োজনে যেসব গান ব্যবহার করা হতো, সেসব গানে কণ্ঠ দিতেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। সেই থেকে গানের সঙ্গে যুক্ত। সবার সামনে গান করে জড়তা ভাঙে। পরে আর কখনোই কারও সামনে গান করতে সমস্যায় পড়েননি। আশির দশক থেকে মঞ্চে গান করা শুরু করেন।
একসময় তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে জীবন শুরু করেন, কিছুদিন অধ্যাপনাও করেছেন, পাশাপাশি গান করতে থাকেন। বামপন্থী চর্চার মধ্যে বড় হওয়া এই গায়ককে অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। তিনি একদিন ব্যাংকে বসেই ১৯৯৩ সালে লিখে ফেলেন, ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানটি, বাংলা সালটি ছিল ১৪০০।
শৈশবে হ্যাংলা–পাতলা থাকার কারণে শুনতে হয়েছে, তাঁকে দিয়ে গান হবে না। সেই অবহেলার পাত্র হয়ে ওঠেন মুখ্য গায়কদের একজন গণসংগীত শিল্পী। তিনি মনে করতেন, ‘মানুষের জন্য, মানুষের গান, মানুষের পক্ষের গান।’ নব্বইয়ের দশক থেকে গানে শ্রোতাদের কাছে পরিচিতি পেতে শুরু করেন।
৯. তাঁর প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’। এই অ্যালবাম ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায়। পরবর্তী সময়ে তিনি ‘যেতে হবে’, ‘ওঠো হে, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’, ‘তোমাকে দেখেছিলাম’, স্বপনপুরে’, ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’, ‘হযবরল’, ‘দুই কানুর উপাখ্যান’, ‘আঁধার নামে’সহ একাধিক জনপ্রিয় গানের অ্যালবাম উপহার দেন।
ব্যক্তিজীবন নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘একজন মানুষ যখন সৃষ্টি করে, তখন তাকে কিছুক্ষণ একা হয়ে থাকতে হয়। কিন্তু সেই একা হয়ে থাকার ফলে সেই সৃষ্টি যখন সমস্ত মানুষের সম্পত্তি হয়ে যায়, তখন মনে হয়, এই কিছুক্ষণ একা থাকাটা সার্থক হয়েছে।’ জীবন নিয়ে তিনি সব সময় খুশি ছিলেন। সেটা তাঁর হাসিই বলে দিত। এই গায়কের আজ প্রয়াণ হয়েছে। ৮৩ বছর বয়সে তিনি আজ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন।
Also read:মারা গেছেন ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়
আরও পড়ুন