‘যেটা আমাদের নিজের মতো’, ‘হলফনামার হরফ গুনে’, ‘কেন হাতের মুঠোয়’, ‘গল্পটা সে রকম’, ‘শাখাপ্রশাখার প্রভাব নিয়ে’, ‘বসার ঘরে, ‘সবাই খারাপ’, ‘ঝোলমাখা ঠোঁটে’, ‘আলো কি আটকানো’, ‘যুগলবন্দী মন’, ‘জামার বোতাম’, ‘কামড় মানে কামড়ানো’—কয়েকটি গানের শিরোনাম। ‘এক নির্ঝরের গান’ প্রকল্পের নতুন উদ্যোগে রয়েছে এসব গান। ৯ পর্বে প্রকাশিত হবে গানগুলো। প্রতি পর্বে ৭টি করে মোট ৬৩টি গান রয়েছে। গানগুলো গেয়েছেন দেশের ৫৪ সংগীতশিল্পী। সব কটি গানের কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন এনামুল করিম নির্ঝর। ৮ জুন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গাওয়া ‘যেটা আমাদের নিজের মতন’ গানটি দিয়ে প্রথম পর্বের প্রকাশনা শুরু হবে।
পেশায় স্থপতি হলেও এনামুল করিম নির্ঝর তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র। তাঁর আলোচিত ছবির নাম আহা!। তিনি গান লেখেন, সুরও করেন। আহা! ছবিতে তাঁর লেখা ‘লুকোচুরি গল্প’ গানটি এখনো দারুণ জনপ্রিয়। নতুন এই প্রকল্প প্রসঙ্গে নির্ঝর বলেন, ‘প্রতিটি গানে আলাদা আলাদা গল্প আছে। যিনি শুনবেন, তিনি চোখ বুজলে একটি ছবি দেখতে পাবেন।’ দুই বছর ধরে নতুন প্রকল্পের কাজ চলছিল।
৬৩টি গান তৈরি ও প্রকাশের তাগিদ প্রসঙ্গে নির্ঝর বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হলো, তখন আমার যেটা মনে হলো, বাংলাদেশে এই যে নানান ধরনের উদ্যোগ হয়, শিল্প–সাহিত্যের ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন থাকে না। এগুলোর কোনো উদ্দেশ্যও চোখে পড়ে না। মনে হয়, কতগুলো টাকা আছে, তা খরচ করে ফেলা। সেখান থেকে আমার নিজের সঙ্গে নিজের একটা প্রতিজ্ঞা ছিল, ভিন্ন রকম কিছু একটা করব। যেহেতু যুদ্ধ করিনি, কতগুলো প্রতিষ্ঠান বানিয়ে দিয়ে যাব, যেগুলোর আসলে কোনো মালিক থাকবে না। এগুলো নিজের মতো করে একটা ট্রাস্টি বোর্ড দিয়ে চলবে অথবা পদ্ধতিগতভাবে চলবে আরকি। সেই ভাবনা থেকে আমরা ৯ বছরে বড় নামে একটি উদ্যোগের কথা ভেবেছি, এরই প্রথম প্রকল্প হচ্ছে এটা। পরে ৯টি সিনেমা হবে।’
নির্ঝর আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, মৌলিক গান যদি তৈরি না হয়, তাহলে সময়টাকে তেমন বোঝা যায় না। আমি গান লিখে সুর করে দিচ্ছি, এটা আমার বিনিয়োগ। যদি এক হাজার গান বানাই, তাহলে একটি প্রতিষ্ঠানের ভিত তো তৈরি হবে। এ উদ্যোগ তারই একটা ধাপ।’
কোন বিষয়গুলো উঠে এসেছে আপনার এসব গানে—এমন প্রশ্নে নির্ঝর বলেন, ‘গানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যে সম্পর্ক, সেটা হচ্ছে অনুভূতির সম্পর্ক। আমার গানে অনুভূতি উঠে এসেছে। সময় তুলে ধরা হয়েছে। আমরা এখন একক অস্তিত্বের বিষয়টা বেশি উপলব্ধি করছি। এবারের প্রকল্পে নানা বয়সের শিল্পীরা আছেন। বন্যা (রেজওয়ানা চৌধুরী) আপা যেমন আছেন, শিশুদের জন্যও গান বানিয়েছি। তরুণেরাও গেয়েছে।’
কথায়–কথায় নির্ঝর বলেন, ‘আমাদের অনুষ্ঠানে কিন্তু কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। তবে সিএসআর অংশীদার আছে। স্পনসর থাকলে তো তারা নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। আমাদের সঙ্গে যেকোনো অংশীদারই থাকবে, তবে সে তার দায়িত্ব পালন করবে, আমরাও আমাদের দায়িত্ব পালন করব। আমি গান লিখে সুর করছি, এটা আমার দায়িত্ব, পয়সা নিচ্ছি না। সে টাকা দিচ্ছে, তার সামাজিক দায়িত্ব। যে সংগীত পরিচালনা করছে, সে তার মতো করে কাজ করছে। গান যারা গাইছে, তারাও তাদের মতো কাজ করছে। একটা টিম তো আছে। আর সবাই যে পারস্পরিক হয়ে উঠছে, এটাই চেয়েছি।’
কথায় কথায় নির্ঝর এও বলেন, ‘এখানে বন্যাদি (রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা) আছে, অর্ণব আছে, বাপ্পাদা আছে, কোনালও আছে—সব বয়সীই আছে মোটামুটি। আমি যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেছিমাত্র। আমি নই, আমরা বিষয়টাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছি। সমষ্টিগত ব্যাপারটা ফিরিয়ে আনতে চাইছি।’