সৈয়দ আব্দুল হাদী ও ফেরদৌসী রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণের বিষয়টিকে দুই সতীর্থের দুর্লভ মুহূর্ত বলছেন
সৈয়দ আব্দুল হাদী ও ফেরদৌসী রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণের বিষয়টিকে দুই সতীর্থের দুর্লভ মুহূর্ত বলছেন

দুই সতীর্থ, দুর্লভ মুহূর্ত

সময়টা পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকের। একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তাঁরা দুজন। সৈয়দ আব্দুল হাদী বাংলায়, ফেরদৌসী রহমান সমাজবিজ্ঞানে। এরপর একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মঞ্চে অনেক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একই মঞ্চে একসঙ্গে কখনো সম্মাননা গ্রহণ করা হয়নি তাঁদের। গতকাল বুধবার এই দুই শিল্পীর জীবনে তা ঘটেছে নজরুলসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফিরোজা বেগমের নামে প্রবর্তিত ‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক’ অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণ করতে এসে। সৈয়দ আব্দুল হাদী ও ফেরদৌসী রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণের বিষয়টিকে দুই সতীর্থের দুর্লভ মুহূর্ত বলছেন।

‘ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক’ অনুষ্ঠানে সৈয়দ আব্দুল হাদী ও ফেরদৌসী রহমান

ফেরদৌসী রহমান জানালেন, একই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গান গাইতে গিয়ে তাঁদের পরিচয়। আস্তে আস্তে সেই পরিচয়ে দুজনের সঙ্গে একটা চমৎকার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কটা বেশ মজার। বিশ্ববিদ্যালয়–জীবনের প্রথম থেকেই আমরা কেউ কাউকে নাম ধরে ডাকি না। ও আমাকে দিদি বলে, আমি দাদা বলি। ওর বয়স কত আমি জানি না, আমার বয়স অবশ্য ও জানে (হাসি)। ছোট হবে না বড় হবে, আই ডোন্ট নো। আমরা একসঙ্গে পড়েছি, গান করেছি—এটাই বড় কথা। একটা দীর্ঘ সময় পার করে আজ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই মঞ্চ থেকে দুই সতীর্থ সম্মানিত হয়েছি—এটা একেবারে নতুন ব্যাপার। এমনটা আগে কখনোই ঘটেনি। করোনার কারণে এবার তো দুই বছরের পুরস্কার একসঙ্গে দেওয়া হলো, তাই দুই সতীর্থ, দুই সহপাঠীর দুর্লভ মুহূর্ত তৈরি হলো।’

ফেরদৌসী রহমান

ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছ থেকে ফেরদৌসী রহমান ও সৈয়দ আব্দুল হাদী এই স্বর্ণপদক ও পুরস্কার গ্রহণ করেন। করোনার কারণে গত দুই বছর এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করতে না পারায় এ বছর একই সঙ্গে দুজন গুণী শিল্পীকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই গুণী দুজন সংগীতশিল্পীকে ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।

সৈয়দ আব্দুল হাদী

নজরুলসংগীতকে মানুষের মনের আঙিনায় পৌঁছে দিতে আজীবন সাধনা করে গেছেন ফিরোজা বেগম। বরেণ্য এই শিল্পী ও তাঁর সংগীতকে স্মরণীয় করে রাখতে এসিআই ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ফিরোজা বেগম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর দেশের একজন বরেণ্য সংগীতশিল্পীকে স্বর্ণপদক প্রদান করে আসছে। এর আগে সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, ফরিদা পারভীন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার মতো শিল্পীরা এ পুরস্কার পেয়েছেন।
সতীর্থ ফেরদৌসী রহমানের মতো একই মঞ্চে পুরস্কৃত হয়ে আনন্দিত বরেণ্য শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীও। তিনি বললেন, ‘জীবনের এই অধ্যায়ে এসে আনন্দের উৎসগুলো খুব সংকুচিত হয়ে আসে। খুব দুর্লভ হয়। তবে এমন এক মুহূর্তে আজকের পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে, যা অনেক আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। আজকে যে পদক নিচ্ছি, এটা অবশ্যই আনন্দের। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই পদকটি গ্রহণের মধ্য দিয়ে ফিরোজা বেগমের মতো একজন শিল্পীকে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছি। আরেকটি আনন্দ হচ্ছে, আমি ও ফেরদৌসী—আমরা দুজন সতীর্থ। আজকে একই মঞ্চে এসে পদক গ্রহণ করছি, এটি আনন্দের।’

ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের সহোদর ও এসিআই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা তাঁর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি অতীত রোমন্থন করে সংগীতের প্রতি শিল্পী ফিরোজা বেগমের নিষ্ঠা, ত্যাগ এবং চর্চার কিছু স্মৃতি তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সংগীতাঙ্গনের আরও অনেকে। এঁদের মধ্যে খুরশীদ আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, ফরিদা পারভীন, নকীব খান, শামা ইসলাম, হামিন আহমেদ, শাফিন আহমেদ প্রমুখ। ফিরোজা বেগম ট্রাস্ট ফান্ড থেকে খ্যাতিমান শিল্পী ছাড়াও প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সর্বোচ্চ সিজিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক ও ২০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।