অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গান শোনালেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা। ১৬ আগস্ট স্বামী সংগীত পরিচালক মইনুল হাসান খানের সঙ্গে সিডনিতে পৌঁছান তিনি। দুই দিন সিডনি ভ্রমণ করে ১৯ আগস্ট সিডনির ক্যাসুলা পাওয়ার হাউস আর্টস সেন্টারে সংগীতসন্ধ্যার আসরে আসেন বাংলা গানের জনপ্রিয় এই গায়িকা। তাঁর গানে অনুষ্ঠান শেষেও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ছিলেন সিডনির প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এরপর দেখা হয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের। বছরের পর বছর কনকচাঁপার গাওয়া গানে পর্দায় ঠোঁট মিলিয়েছেন শাবনূর। ‘এমন একটা দিন নাই’, ‘আমার হৃদয় একটা আয়না’, ‘সাগরের মতোই গভীর’, ‘এক দিন তোমাকে না দেখলে’, ‘একদিকে পৃথিবী’সহ কনকচাঁপার জনপ্রিয় অজস্র গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন শাবনূর। বাংলা সিনেমার সোনালি যুগে কনকচাঁপা ও শাবনূর জুটির পরিচালক–চাহিদা আর দর্শকপ্রিয়তা ছিল শীর্ষে। কনকচাঁপা সংগীত অঙ্গনের সঙ্গে এখনো যুক্ত থাকলেও অভিনয় থেকে দীর্ঘ বছর বিরতিতে আছেন শাবনূর। তাই বহু বছর পর বিদেশের মাটিতে দুজন দেখা করতে পেরে উল্লাস প্রকাশ করেন। ২০ আগস্ট একসঙ্গে আড্ডা দেন দুজন। ভক্তদের উদ্দেশে শাবনূর তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে লাইভেও আসেন কিছুটা সময়।
শাবনূর বলেন, ‘কনক আপুর সিডনিতে গানের শো ছিল, আমার মা আর বোন গিয়েছিলেন, বিশেষ কাজে আটকে আমি যেতে পারিনি, আফসোস। তবে আমার মা আর বোন বাসায় এসে বলছেন, অনেক দিন কানজুড়ানো গান শোনা হয় না তাঁদের, কনক আপুর শো ভীষণ উপভোগ করেছেন, পুরো অনুষ্ঠানটাই নাকি অনেক সুন্দর হয়েছে। আর আমি আগেও বলেছি, আমরা হলাম দুই দেহে এক প্রাণ। ওনার গাওয়া কত গান আমি উপস্থাপন করেছি, আমার সাফল্যের একটা বড় অংশে আছেন কনক আপু। এমনিতে আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে দেখা কম হয়, এখন দেশ থেকে এত দূরে এসে দেখা করতে পারলাম, খুব আনন্দিত আমি।’
সিডনিতে আসার আগেই শাবনূরের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা করেছিলেন জানিয়ে কনকচাঁপা বলেন, ‘আমার গানগুলো বেঁচে উঠত শাবনূরের ঠোঁটে। মানুষ অনেক গান শাবনূরের গান হিসেবেই চেনেন। আমি কণ্ঠশিল্পী, আমার গান শুনে মানুষ আনন্দ পায়—এটাই আমার সার্থকতা। সিডনির গানের অনুষ্ঠানটি খুব ভালো লেগেছে আমার। আর আমি অস্ট্রেলিয়ায় আগেও এসেছি, শাবনূরও যায় বাংলাদেশে, কিন্তু দেখা করা হয়ে ওঠে না। এবার দুজনের ছন্দ মিলেছে, দেখা হয়েছে আমাদের। শাবনূরের জন্য শুভকামনা।’
সিডনিতে ‘হারানো সুর’ শীর্ষক সংগীতসন্ধ্যাটির আয়োজন করেছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরের ধারা। অনুষ্ঠান শুরু হয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার কিছু পর। এ সময় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ কানায় কানায় ভরে ওঠে প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শক–শ্রোতায়। অনুষ্ঠানের শুরু হয় সিডনির সরোদশিল্পী তানিম হায়াত খান ও তবলাবাদক অভিজিৎ দানের অভূতপূর্ব পরিবেশনায়। এরপর সংগীত পরিবেশন করেন সিডনির পরিচিত সংগীত জুটি শিল্পী মামুন হাসান খান ও সৃজনী ঘোষ। দর্শকদের করতালিতে তাঁদের পরিবেশনা সমাপ্তির পর মঞ্চে আসেন কনকচাঁপা।
এরপর তাঁর একের পর এক জনপ্রিয় বাংলা গান দর্শকদের মাতিয়ে তোলে। রাত ১২টা নাগাদ অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনায় শিল্পী থেকে দর্শক—সবাই অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন সংগীত পরিচালক মইনুল হাসান খানের ‘যেই দেশেতে শহীদ মিনার’ গানে। এ ছাড়া কামরুল আহম্মদের মোহিত করা বাঁশির সুর এবং সাঈদুর রহমানের গিটারের পরিবেশনা প্রশংসিত হয়। তা ছাড়া বেজ গিটারে ছিলেন আসাদুজ্জামান খালিদ ও অক্টোপ্যাডে তাপস কর।
অনুষ্ঠান শেষে সতেজ হয়ে বাসায় ফেরার কথা জানালেন দর্শক সিডনির বাসিন্দা চিকিৎসক ওয়াহিদা পারভীন। তাঁর ভাষায়, ‘বাংলা গানের পোকা আমি। আর সেখানে আমার প্রিয় একজন সংগীতশিল্পী কনকচাঁপার গান বিদেশের মাটিতে সরাসরি শুনে এলাম। এত ভালো লেগেছে যে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আয়োজকদের ধন্যবাদ এমন একটি সুন্দর সংগীতানুষ্ঠান আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।’
বাদ্যযন্ত্র থেকে আবহ—সবকিছুতেই মুগ্ধ হওয়ার কথা জানিয়েছেন সিডনির বাসিন্দা লেখক আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানের শুরুতেই যখন সরোদ বাজল আর শেষে বাঁশি, এর মাঝখানে সংগীতজ্ঞদের গান—সব মিলিয়ে এখনো একটা মোহে আছি। বাংলা গান, কনকচাঁপা, বাংলা সংগীত—এর চেয়ে মধুর কিছু হতে পারে না।’