ভারতীয় সংগীতজগতে নক্ষত্রের পতন। গজলশিল্পী পঙ্কজ উদাস মারা গেছেন। ‘বড়ে দিনো কে বাদ...চিঠঠি আয়ি চিঠঠি আয়ি হ্যায়...’-এর সেই মনকাড়া গজলের কণ্ঠ থেমে গেল চিরদিনের মতো। আজ সোমবার পঙ্কজ উদাসের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের জানাচ্ছি, পদ্মশ্রী পঙ্কজ উদাস ২০২৪-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন..। গায়কের কন্যা নায়াব উদাস ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে বাবার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন। মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বেলা ১১টা নাগাদ মৃত্যু হয় শিল্পীর। দীর্ঘদিন ধরে গায়ক নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছিলেন।’
রাজকোটের কাছে অবস্থিত চারখাদি নামের একটি ছোট্ট শহরে ১৯৫১ সালের ১৭ মে পঙ্কজ উদাসের জন্ম। জমিদার পরিবারের ছেলে তিনি। বাবা কেশুভাই উদাস সরকারি চাকরিজীবী হলেও দিলরুবা বাজাতেন। ছোট থেকেই সংগীতের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা তাঁর। ছেলেকে রাজকোটের সংগীত একাডেমিতে ভর্তি করান পঙ্কজ উদাসের বাবা। শুরুতে তবলার তালিম নিলেও পরবর্তী সময়ে গুলাম কাদির খান সাহেবের কাছে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। পরে মুম্বাইয়ে এসে গোয়ালিয়ার ঘরানার শিল্পী নবরঙ্গ নাগপুরকরের কাছে সংগীতশিক্ষা শুরু করেন। মূলত গজলের গায়ক হিসেবে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। ১৯৮০ সালে ‘আহাত’ শিরোনামের গজল অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে তিনি তাঁর সংগীত দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বলিউডের সংগীতজগতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠেন। সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ১৯৮৬ সালের মুক্তি পাওয়া ছবি ‘নাম’-এর ‘বড়ে দিনো কে বাদ/ হাম বে বসনে কো ইয়াদ...’ সংগীতপ্রেমী অগণিত শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছে, এখনো এ গানের জনপ্রিয়তা আছে।
‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’ গানটি পঙ্কজ উদাসকে রাতারাতি সংগীতপ্রেমী উপমহাদেশীয় শ্রোতার মনে পাকাপাকি জায়গা করে দেয়। এরপর তাঁর সংগীতজীবনে একটির পর একটি গজলের অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। লাইভ কনসার্টে অংশ নিয়েছেন।
‘চান্দি জ্যায়সা রং’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিলকর রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি প্যায়ার করো’, ‘নিকলো না বেনাকাব’—পঙ্কজ উদাসের গাওয়া অসাধারণ সব গজল আজও শ্রোতাদের মনের রসদ। ‘নশা’, ‘পয়মানা’, ‘হসরত’, ‘হামসফর’-এর মতো বেশ কয়েকটি বিখ্যাত অ্যালবামও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। বাংলা ‘যায়রে চলে যায়’, ‘তুমি খাঁচা হলে আমি হব পাখি’, ‘কত স্বপ্ন দেখেছি, কত ছবি এঁকেছি’, ‘তোমার চোখেতে ধরা’ ইত্যাদি গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর সংগীতপ্রেমীদের কাছে ‘গজল কিং’ পঙ্কজ উদাস।
পঙ্কজ উদাসের পরিবারের পক্ষ থেকে এই বিবৃতি জানার পর বলিউডের দুনিয়া থেকে প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান গায়ক সোনু নিগম। সোনু নিগম তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘আমার ছেলেবেলার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে আজ হারিয়ে ফেললাম...। শ্রীপঙ্কজ উদাসজি, আপনাকে আমি মিস করব সারা জীবন...। আজ আপনার প্রয়াণের খবর পেয়ে আমার হৃদয় কাঁদছে...আমাদের গানের জগতে আপনার আবির্ভাবের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ...ওম শান্তি...।’
সংগীতজগতে অবদানের জন্য অজস্র সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন প্রয়াত শিল্পী। ২০০৬ সালে ভারত সরকারের তরফে চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন গায়ক।