বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আজ ‘গানে গানে সায়ান’ শীর্ষক আয়োজনে গাইবেন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। প্রায় দুই বছর পর একক কোনো শো নিয়ে আসছেন এই শিল্পী। গত মঙ্গলবার ধানমন্ডির বাসায় তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মকফুল হোসেন
‘গানে গানে সায়ান’ নিয়ে পরিকল্পনা কী?
সায়ান: অনেক দিন পর সলো (একক) শো করছি। আয়োজন করছে আজব কারখানা। শ্রোতার সামনে আসার উত্তেজনা তো থাকেই। আমি গানের মানুষ। দর্শকের সামনে দাঁড়ানো আনন্দের জায়গা; সুরে কিংবা বেসুরে—যেভাবেই হোক না কেন। আরেকটা বিষয়, যে সময়টা আমরা পার করলাম, সে সময়ের ছাপটা তো গানের মধ্যে থাকবে। সবকিছু নিয়েই গাইব।
সময়ের ছাপ কীভাবে থাকবে?
সায়ান: গানের মধ্য দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখি। মানুষ হিসেবে যেসব বিষয় বিশ্বাস করি, ধারণ করি ও প্রচার করি; সেগুলো তো গানে থাকবেই। পাশাপাশি রাজনৈতিক গান নিয়ে আলাদা সেগমেন্ট থাকবে। ২০০১ সালে বাংলাদেশে ফিরে ‘জনতার বেয়াদবি’ গানটা করেছিলাম। শ্রোতারা সেটাকে ‘দুই নেত্রীর গান’ বলে। গানটা যতটা দুই নেত্রীর গান, তার চেয়ে বেশি জনতার গান। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল, একটি জাগ্রত বাংলাদেশ দেখব। আমি তাঁদের (রাজনীতিবিদ) ভোট দেব, তবে তাঁদের আজীবনের আনুগত্য দেব না। এ রকম একটা ভাবনা থেকে একধরনের স্যাটায়ার করে ‘জনতার বেয়াদবি’ গেয়েছিলাম।
গত ২৩ বছরে অনেক রাজনীতির গান করেছি। একটা আসরে সব গাইতে পারব না। তবে সেখান থেকে নির্বাচিত সাত থেকে আটটি গান থাকবে। পুরোনো গানের পাশাপাশি মুগ্ধ-সাঈদরা পর্যন্ত আসবে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, শিল্পী হিসেবে, মেয়ে হিসেবে যা দেখেছি, সেটাই গানে গানে এনেছি।
বিদেশে একক শো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, দেশেও অনেকে করছেন। প্রায় দুই বছর পর কোনো একক শো করছেন। এত দিন পর কেন?
সায়ান: আগে বলি, কেন হয়নি। আমি শিল্পী, আমি গান গাইতে চাই। যেকোনো মূল্যে গাইতে চাই। গানে আমার রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে। আমি যে গান করি, সেই গান যদি গাইতে না পারি, তাহলে কীভাবে শো করব। জুলাইয়ে অনেক শিল্পীর যত রাজনৈতিক গান হয়েছে, আগে এতটা হয়নি। সেদিন এক শিল্পীর সঙ্গে দেখা হলো, শাস্ত্রীয় সংগীত ও নজরুলগীতি করেন। উনি বললেন, ‘আপা, এখন তো নজরুলগীতির চেয়ে রাজনৈতিক গান বেশি শুনতে চায় মানুষ।’
কথাটা শুনে খুব অবাক হলাম। শাস্ত্রীয় সংগীত এত কষ্ট করে চর্চা করে, শিল্পীরা সেটা করে খেতে পারে না। নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত করা খুবই কঠিন; এসব গান তা-ও তো চর্চা হয়। সব ধরনের গান ধারণের মানসিকতা আমাদের গানের বাজারের ছিল না। সেটা ভেঙেচুরে হান্নান, সেজানের মতো স্বাধীন শিল্পীরা র্যাপ দিয়ে আন্দোলন করেছে। র্যাপ তো দেশে দুর্লভ ধারা। ওরা নিজেরাই বাজার তৈরি করে নিল, আমি ওদের সালাম জানাই। অনেক গানের চেয়ে র্যাপ শক্তিশালী। শুধু হান্নান ও সেজান নয়, অনেকেই র্যাপ গান করেছে। র্যাপ সংগীতের ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ। কিন্তু বাজার তৈরি করা কঠিন, এখন বাজারটা তৈরি হচ্ছে।
আমি একা একা গান করি, ইনস্ট্রুমেন্টও আলাদা। বাজারে খাওয়ানোর মতো কিছু ছিল না। যে কারণে অনেকে আগ্রহী হতো না, তারপরও আমি করেছি। তবে বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে আমার সমস্যা ছিল। আমি তো গান গাইতেই চাইব। তবে যখন শর্ত আরোপ করা হয়, এই দুটো গান বাদ দিয়ে কিছু ‘নিরাপদ’ গান করেন, তখন সে অনুযায়ী কাজ করা তো আপস হয়ে গেল। ফলে নিয়মিত শো করিনি। এই জায়গাগুলোয় গান করা হয়ে ওঠেনি কখনো।
এত দিন ধরে সামাজিকভাবে র্যাপ গানের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। সেই র্যাপ গানই আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল। ৮ থেকে ৮০—সবার মুখে মুখে ‘আওয়াজ উডা’, ‘কথা ক’ ফিরেছে। অনেকে বলছেন, আন্দোলন থেকেই র্যাপ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠল...
সায়ান: এই আন্দোলনে র্যাপ গানের গ্রহণযোগ্যতা তো অবশ্যই তৈরি হলো। যে র্যাপ গানগুলো আমরা পেলাম, সেগুলো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। অথচ আমাদের গানের বাজার বলে আসছে, আমরা রাজনৈতিক গান করি না। রাজনীতিটা আমাদের জীবনের খাঁজে খাঁজে রয়েছে। আমরা এত টাকা কেজি যে আলু খাই, আলুটা অরাজনৈতিক ব্যাপার নয়। এটাকে ধারণ করার জন্য আমাদের বোঝাপড়া দরকার। নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথ যে গান করে এসেছেন কিংবা উপন্যাস লিখেছেন, সেটা কি অরাজনৈতিক ছিল? ঘরে বাইরে, গোরা—কোনটা অরাজনৈতিক? ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব ভাষায় রাজনীতি ছিল। আর নজরুলের কথা কী বলব।
আমরা যেটা পারিনি, আমি যেটা পরিনি, র্যাপাররা সেই জায়গাটা খুলে দিয়েছে। আমার জন্য ওরা জায়গা বানিয়ে দিয়েছে। পারশাও (মাহজাবীন) একটা গান গাইল। রীতিমতো প্লেব্যাক গায়িকাদের মতো, বাজারে যে ধরনের মানুষ শুনতে চায়, ও তো তেমন শিল্পী। কিন্তু সে এই গান গাইল নিজে লিখে। সেজান ও হান্নান ‘কথা ক’ ও ‘আওয়াজ উডা’ গানে সময়টাকে ধরেছে। ওই সময় কাজটা কে করেছে? ওদের বীরের মতো আগমন ঘটেছে। আমি ওদের ভীষণভাবে শ্রদ্ধা করি। ওরা নিজের ভাষায় গেয়েছে। ওদের প্রাণের তাগিদ থেকে গেয়েছে। ওদের গান শুনে সারা দেশের মানুষ নিজেদের খুঁজে পেয়েছে।
ওরা কিন্তু টাকাপয়সার জন্য গান করেনি। তখন একটা যুদ্ধ চলছিল, সেই সময়টাকে ধরে ওরা গান করেছে। ওরা ঝুঁকি নিয়েছে। পারশা ঝুঁকি নিয়েছে। হান্নান তো জেলেই গেল। সেজানরা ঝুঁকি নিয়েছে। এটা একধরনের যুদ্ধ ছিল। আমি ওদের শ্রদ্ধা করি।
আন্দোলনে র্যাপ গানের বাইরে মোহিনী চৌধুরীর ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’, নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধক গানসহ আপনার গানও তরুণদের উজ্জীবিত করেছে। আন্দোলনের পর গানের বাজার কতটা বদলাল?
সায়ান: বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাসে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বাচ্চারা নেটফ্লিক্স বাদ দিয়ে ইতিহাসভিত্তিক শো দেখছে। তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে আলোচনা শুনছে। বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথা শুনতে চাইছে। এক ধাক্কায় দেশের মানুষ রাজনীতি ও ইতিহাসের প্রতি আকৃষ্ট হলো। জীবনের এত বড় একটা ক্ষেত্রকে বাদ দিয়ে ‘আমি তোমাকে চাই’, ‘আমি তোমাকে চাই না’—এসবের বাইরেও পৃথিবী আছে। এটা বিরাট শিফট।
গানের বাজারের পরিবর্তন ঘটছে। শিল্পী নিজেরা জায়গা করে নিয়েছে। বাজার শিল্পীকে অনুসরণ করছে। ফুল-পাখির বাইরে এসে জীবনের কথা বলার জন্য গান অনেক বড় মাধ্যম। এই অভিজ্ঞতাটা আমাদের সাহায্য করছে।
লেবেল কিংবা প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী থাকলে তো শিল্পীদের এতটা সোচ্চার হওয়া কঠিন ছিল। ইউটিউব, স্পটিফাইয়ের মতো স্বাধীন প্ল্যাটফর্মগুলো কতটা ভূমিকা রাখল?
সায়ান: এটা একটা বিরাট পরীক্ষা। আমি তো আজ থেকে গান করছি না। কিন্তু প্রথম অ্যালবাম কোনো লেবেল থেকে বের হয়নি। তবে প্রথম সাত বছর আমি লেবেলের সঙ্গে ছিলাম। আমার গানের চরিত্র রাজনৈতিক বলে আমি এই কথা শুনেছি, এসবে হবে না, একটু অন্য রকম গান আনো; যেগুলো মানুষ খাবে। তবে আমি গানের রাজনৈতিক চরিত্রকে বাদ দেব না। তারপরও লেবেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয়নি, সেটা বলব না। লেবেলগুলো রোমান্টিক গানের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে ‘দুই নেত্রীর গান’ প্রকাশ করতে চায়নি।
স্বাধীন প্ল্যাটফর্মে প্রচুর গান হচ্ছে, এটা সত্য কথা। যার হয়তো গান করার কথা নয়, সে–ও গান করছে। গলায় সুর নেই, সে রকম অনেকেই গাইছে। তবে যে সত্যিই গ্রহণযোগ্য, তাকে দিনের শেষে দেখতে পাচ্ছেন না? কাজেই স্বাধীন প্ল্যাটফর্মগুলো মারাত্মক জায়গা। এবার তো মিম দিয়ে একটা বিপ্লব হয়ে গেল। প্রত্যেকে ছোট্ট মিম বানিয়ে ক্ষমতাকে ডিসমিস (খারিজ) করে দিচ্ছে।
ডিবি হারুনের ঘটনাকে ১০ মিনিটের মধ্যে নাটিকা বানিয়ে উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। ক্ষমতার সঙ্গে জনতার সংলাপ হচ্ছে। ফেসবুককে যে যতই গালি দিক না কেন, দেখলাম তো, শেষ পর্যন্ত ফেসবুককে বন্ধ করতে হলো। ছুরি দিয়ে আপেল কাটবেন, নাকি মানুষ খুন করবেন, সেটা আপনার ব্যাপার।
আপনি বরাবরই মানুষের আন্দোলনের পক্ষে থাকেন। ছাত্র–জনতার আন্দোলনেও ছিলেন। আন্দোলনের সময়টা কেমন ছিল?
সায়ান: ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের সঙ্গে খুব একটা সম্পৃক্ত ছিলাম না। তবে আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ৮ জুলাইয়ের দিকে ‘স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি’ গান পেজে পোস্ট করেছিলাম। তখনো কথা বলিনি। যেই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা, সেদিন কথা বলতে বাধ্য হলাম। শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে। ওদের হাসপাতালে নেওয়া হলো, হাসপাতালে গিয়ে ছাত্রলীগ ওদের পেটাল। তখনো আমি বাইরে যাইনি।
আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর আমরা বের হলাম। তখন ছয়-সাতজন মারা গেছে। টিএসসিতে তাদের গায়েবানা জানাজা হওয়ার কথা, জানাজায় মানুষকে আসতে দেবে না। আমরা দেখি, টিএসসিতে জলকামান বসানো। কোনো জমায়েত হতে দেবে না। কিন্তু মানুষ মারা গেছে। কোনো অবস্থাতেই ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো যায় না। প্রতিদিন তো যেতে পারি না, আমি রাজপথের মানুষ নই। আমি শিল্পী। কিন্তু তখন রাজপথে থাকব না তো কোথায় থাকব?
তখন তো এক দফার কথা মাথায় আসেনি। এক দফা আমার দাবি ছিল না। আমার দাবি ছিল, নির্বাচনের মাধ্যমে আমি ভোট দেব। গ্রহণযোগ্য ভোট দিয়ে আমি তাঁকে পরাজিত করব। আমি অনুভব করেছি, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ এ মুহূর্তে ওনাকে (শেখ হাসিনা) চায় না। এটাই আমার পথ ছিল। আমার পথ বন্দুকের নয়, আমার পথ মানুষকে আক্রমণের নয়; আমার পথ ভোটের। তুমি আমাকে ভোট দিতে দিচ্ছ না, আমি কী করব? ভোটের অধিকার আমার থেকে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে রাজপথে থাকব না তো কোথায় থাকব? আমার তো কোনো অস্ত্রও নেই। মানুষ কোন পর্যায়ে গেলে সশস্ত্র বিপ্লবের দিকে চলে যায়, সেটার একটা ধাপ অনুভব করলাম। বাচ্চারা লাঠি নিয়ে বের হলো। কারণ, ওদের লাঠি ছাড়া আর কিছু নেই।
তখন সাংবাদিকেরা জিজ্ঞাসা করেছিল, আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমি ছাত্রদের পক্ষের। তার আগে পেজে আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়েছি। তখন আমাদের সামনে হুমকি আসছিল। আমরা একা ছিলাম না, কয়েকজন মিলে একসঙ্গে ছিলাম।
হালের শ্রোতাদের মধ্যে বড় একটা অংশ জেন–জি। শিল্পী হিসেবে গান করার সময় আপনি আলাদা করে জেন–জি শ্রোতাদের কথা ভাবেন?
সায়ান: ব্যক্তিগতভাবে বলি, আমার আসলে এটা মাথায় থাকে না। আমার কোনো টার্গেট অডিয়েন্স নেই। একটা ঘটনা আমার ভেতরে ঘটে, সেই ঘটনা প্রেম কিংবা রাজনৈতিকও হতে পারে। সেটা গানে তুলে আনি। একটা গল্প বলি, ২০০১ সালে করেছি ‘দুই নেত্রীর গান’। ওই সময়ে আমার বয়স ২৬ বছর। ওই সময় কাউকে মাথায় রেখে গানটা করিনি। তখন জেন–জিদের অনেকের জন্মও হয়নি। ওরা গানটাকে পছন্দ করছে। এখনো ওরা ‘আমিই বাংলাদেশ’ শুনছে। সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার দরকার ছিল আমার ভাবনা প্রকাশ করা। ওরা টার্গেটে ছিল না, ওরা রিলেট করেছে পরে। জেন–জিদের সঙ্গে গানে গানে আমার দেখা হতে পারে, না–ও পারে। অডিয়েন্সের বয়স কিংবা অডিয়েন্সের মনোরঞ্জন আমার মাথায় থাকে না।
ওদের আমি সম্মান করি, ওদের সঙ্গে একটা যোগাযোগ হওয়ার দরকার। কিন্তু তার মতো করে বলার জন্য ভাষা নির্বাচন করি না। হান্নান, সেজানরা নিজের ভাষায় গান করেছে। আমাদের তো বুঝতে অসুবিধা হলো না। আমি তো চাইলেই ভাটিয়ালি গান গাইতে পারব না। আমি নাগরিক মানুষ, আমার একটা ভাষা আছে। সেটার মধ্য দিয়ে অনুভূতিকে প্রকাশ করব। কিন্তু আমি হান্নানদের ভাষা বুঝি, কথা বুঝি। ওরা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ওদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসকে কেমন দেখলেন?
সায়ান: এক. জীবনে কখনো আফসোস করব না, এই পতনের উদ্দেশ্যে আমিও অনেকের সঙ্গে এই লড়াইয়ে শামিল ছিলাম। কোনো দিন আফসোস করব না। ওটা অনিবার্য ছিল, ওটা হতোই। দুই. কোনো দিন বলব না, আগেই ভালো ছিলাম। তিন. ব্যক্তির পতনের পরে কিংবা ক্ষমতাসীন কিছু মানুষের পতনের পর আস্তে আস্তে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের সামগ্রিক কাঠামোর মধ্যে পচনটা ধরেছে। আপনাকে বলা হচ্ছে আপনি ক্যানসার থেকে মুক্ত, কিন্তু পুরো সিস্টেম ক্যানসারমুক্ত নয়।
আহতদের ট্রিটমেন্ট নিয়ে যা হলো, সেটা আমাদের আহত করেছে। একদল মানুষ ফুর্তিতে নেমে গেল। তখনো বাচ্চারা কাতরাচ্ছে, কারও হাত নেই, পা নেই। সারা জীবনের জন্য শোকের। ওদের পাশে থাকা দরকার ছিল, সেটা সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার ছিল। এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে নৈতিক কর্তব্য। আমাদের একটা শোকের দিন দরকার ছিল। এত বড় ঘটনা, এত মানুষ মারা গেল। ওরা তো কেউ রাজনীতি করতেও আসেনি, ওদের খেলাধুলা, ডিবেট করার কথা ছিল। ওরা রাজপথে নেমে গেল। এটা বিরল ঘটনা।
আমি এখনো অবাক হয়ে ভাবি, এতটা নিষ্পাপ হলে, অদলীয় হলেই এমন অভ্যুত্থান সম্ভব। অনেকে বলে, এটা সিআইএর কাজ, তমুকের কাজ। আমার হাসি পায়। মানুষ সবাইকে বিশ্বাস করতে রাজি কিন্তু নিজের জনতাকে বিশ্বাস করবে না। জনগণ এটা করতে পারে, এটা বিশ্বাস করবে না। মানুষকে ছোট করা, মানুষকে শক্তিহীন ভাবার প্রবণতাকে থামাতে হবে। আস্তে আস্তে আমাদের রাজনৈতিক পাটাতনের দিকে যেতেই হবে। সংস্কারের অবশ্যই দরকার। আমাদের পরতে পরতে অবিশ্বাস। দেশ আবারও বিভাজিত। সেখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে।
আমি খুব খুশি, সেটা বলছি না। সবাইকে পরিশ্রম করে এগিয়ে নিতে হবে। ১০০ দিনে অস্থির হয়ে গেলে হবে না। নির্মাণের যাত্রায় সময় দিতে হবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দরকার। বেঁচে থাকার জন্য প্রস্তুতি আরও কঠিন। দেশ গড়ে বেঁচে থাকতে হবে।
আপনার চাওয়ার বাংলাদেশ কেমন?
সায়ান: বাংলাদেশের মানুষ নিজেকে শক্তিশালী মনে করবে। মানুষের কর্তৃত্বের বোধ থাকবে। একজন কৃষক, শ্রমিক, তার কখনো মনে হবে না, আমার কোনো দাম নেই। শ্রমিক চম্পা খাতুনের কথা বলি। বকেয়া বেতন চেয়ে লড়াই করে মরে গেল। ওই মেয়েটার কথা বৈষম্যের নেতারা তো বলেননি। শ্রমিকের ভৃত্যসুলভ আচরণ থাকবে না। শ্রমিকের কর্তৃত্বের বোধ থাকবে। আমি এই বাংলাদেশ দেখতে চাই। গণতন্ত্রের অধিকার চাই।