ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘চলো বাংলাদেশ’ কনসার্টে ওয়ারফেজ
ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘চলো বাংলাদেশ’ কনসার্টে ওয়ারফেজ

ভরা কার্তিকে জমজমাট কনসার্ট

এই কার্তিকে ছাতিম ফুলের মাদকতা ছড়ানো সন্ধ্যায় রক ও পপ গানের কথা–সুরের উন্মাদনায় ভাসছেন সংগীত অনুরাগীরা; রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে শীতকালে কনসার্ট নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন আয়োজকেরা।

পশ্চিমে কনসার্ট জমে গ্রীষ্মে, বাংলাদেশে শীতে। হুড়মুড়িয়ে শীত (পৌষ ও মাঘ) নামার আগেই কার্তিকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কনসার্টের হিড়িক পড়েছে। ঢাকার আর্মি স্টেডিয়াম, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি), আলোকি, কেআইবি কমপ্লেক্সে কান পাতলেই ভেসে আসে গিটারের টুংটাং, ড্রামসের দ্রিম দ্রিম আর রক গানের উন্মাতাল সুর।
রক সংগীত গবেষক গৌতম কে শুভ গতকাল প্রথম আলোকে জানান, শীতকালকে (ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) কনসার্টের ভরা মৌসুম বলা হলেও হেমন্তকাল থেকেই (কার্তিক ও অগ্রহায়ণ) কনসার্ট বাড়তে থাকে। এই কার্তিকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বহু কনসার্ট হয়েছে।

‘দ্য নাইট অব প্রীতম হাসান’-এ ফেরদৌস ওয়াহিদ
এই কার্তিকে ঢাকায় ‘চলো বাংলাদেশ কনসার্ট’, ‘দ্য নাইট অব প্রীতম হাসান’, ‘রক ইন দ্য সিটি’ কনসার্টে রক ও পপ গানে অনুরণন তুলেছেন ঢাকার ব্যান্ড ও শিল্পীরা।

এসব কনসার্টে ওয়ারফেজ, আর্টসেল, শিরোনামহীন, ক্রিপটিক ফেইটের মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডকে পাওয়া গেছে। ঢাকায় ‘চলো বাংলাদেশ কনসার্ট’, ‘দ্য নাইট অব প্রীতম হাসান’, ‘রক ইন দ্য সিটি’ কনসার্টে রক ও পপ গানে অনুরণন তুলেছেন ঢাকার ব্যান্ড ও শিল্পীরা। বেশির ভাগ কনসার্টেই শ্রোতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল, হালকা শীতের সন্ধ্যায় গানের তালে নাচতেও দেখা গেছে শ্রোতাদের।
এর বাইরে দেড় সপ্তাহ আগে গুলশানে পেন্টাগন ব্যান্ডের তিন দশক পূর্তির আয়োজন ছিল। সপ্তাহ দুয়েক আগে রক ব্যান্ড সাবকনশাসের রজতজয়ন্তীতে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত কনসার্টেও শ্রোতাদের সরব উপস্থিতি ছিল।

কার্তিকের শেষ সপ্তাহেও ঢাকায় বেশ কয়েকটি কনসার্ট রয়েছে, এর মধ্যে আজ শুক্রবার রয়েছে তিন কনসার্ট। আর্মি স্টেডিয়ামে ‘কোক স্টুডিও বাংলা লাইভ’ কনসার্টে গাইবেন মমতাজ বেগম, বাপ্পা মজুমদার, ফুয়াদ আল মুক্তাদির, শায়ান চৌধুরী অর্ণব, পান্থ কানাই, ইমন চৌধুরী, ঋতু রাজ, নন্দিতা, সুনিধি নায়েক, আরমীন মুসা, ঈশান, প্রীতম হাসানসহ প্রায় শতাধিক শিল্পী।
খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে ‘নচিকেতা লাইভ ইন ঢাকা উইথ জয় শাহরিয়ার’ কনসার্টে গাইবেন ভারতীয় সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী।
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে ‘আইবিএ রক নাইট’ কনসার্টে নেমেসিস, সোনার বাংলা সার্কাসসহ চারটি ব্যান্ড গাইবে। গত শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘হায়েনা এক্সপ্রেস এক্সপেরিয়েন্স’-এ পাওয়া গেছে সোনার বাংলা সার্কাসকে।

‘হায়েনা এক্সপ্রেস এক্সপেরিয়েন্স’-এ পাওয়া গেছে সোনার বাংলা সার্কাসকে

কার্তিক মাসজুড়ে ঢাকার বাইরে সিলেট, বগুড়া, নরসিংদী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কনসার্টের খবর মিলেছে। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) তেমন কোনো কনসার্টের খবর মেলেনি। ২৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে ‘টু গাজা ফ্রম ঢাকা’ কনসার্টের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

নভেম্বর মাসেই দু–তিনটি কনসার্টে আমাদের গান করার কথা ছিল, তবে হরতাল ও অবরোধের জন্য সেগুলো বাতিল হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক আয়োজক

ভরা মৌসুমে ভাটার শঙ্কা
দেশের কনসার্টের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মৌসুম শীতকাল। পৌষ ও মাঘ মাসের জন্য অপেক্ষায় থাকেন কনসার্ট আয়োজকেরা। দুই মাসেই সবচেয়ে বেশি কনসার্ট করেন তাঁরা, তবে এবার কনসার্টের ভরা মৌসুমে ভাটার শঙ্কা করছেন তাঁরা।
আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অস্থিরতার (হরতাল, অবরোধ) মধ্যে নভেম্বরের শেষ ভাগে ও ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি কনসার্ট বাতিল করেছেন আয়োজকেরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যান্ডের দলনেতা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নভেম্বর মাসেই দু–তিনটি কনসার্টে আমাদের গান করার কথা ছিল, তবে হরতাল ও অবরোধের জন্য সেগুলো বাতিল হয়েছে।’

স্কাই ট্র্যাকার লিমিটেড, দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্স, ব্যান্ডমিথ এক্সপেরিয়েন্টাল, সিক্সবেজ কমিউনিকেশন, ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশনস, এডভেন্টর কমিউনিকেশনসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঢাকায় নিয়মিত কনসার্ট আয়োজন করে।

স্কাই ট্র্যাকার লিমিটেড, দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্স, ব্যান্ডমিথ এক্সপেরিয়েন্টাল, সিক্সবেজ কমিউনিকেশন, ট্রিপল টাইম কমিউনিকেশনস, এডভেন্টর কমিউনিকেশনসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঢাকায় নিয়মিত কনসার্ট আয়োজন করে।
নির্বাচনের আগে কনসার্টের অনুমতি মিলবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন আয়োজকেরা। অনুমতি পেলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে শ্রোতাদের খরা থাকবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আয়োজক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নভেম্বরের পর থেকে নির্বাচনের আগপর্যন্ত আর কোনো বড় কনসার্ট হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।’
অথচ গত বছরও শীতকালে (ডিসেম্বর ও জানুয়ারি) সবচেয়ে বেশি কনসার্ট হয়েছে। গত বছর ভালো ব্যবসা করলেও এবার লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন আয়োজকেরা।