বাংলাদেশের কপিরাইট আইনের ৭৮ ধারায় উল্লেখ আছে, গীতিকার কিংবা সুরকারের অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের ওয়েলকাম টিউনে, টেলিভিশনে, বেতারে কিংবা ইউটিউবে তাঁদের গান প্রচার করা যাবে না। বাউল শাহ আবদুল করিমের মৃত্যুর পর পরিবারের অনুমতি ছাড়া তাঁর গান বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে অনেকে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ কামালেও কানাকড়ি পায়নি তাঁর পরিবার।
বিষয়টি আমলে নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে আবদুল করিমের ৪৭২টি গানের মেধাস্বত্ব নিবন্ধন করে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস। গানগুলো পরে ‘shahabdulkarim.com’ নামের ওয়েবসাইটে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কপিরাইট অফিসের সাবেক রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে গান সংরক্ষণের জন্য ওয়েবসাইট উন্নয়নসহ কারিগরি সহায়তা দিয়েছে জেডএম স্টুডিও।
প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার, সংগীতশিল্পী জুয়েল মোর্শেদ জানান, এখন কেউ করিমের গান করতে চাইলে কিংবা কোথাও বাণিজ্যিকভাবে পরিবেশন করতে চাইলে তাঁর পরিবারের অনুমতি নিতে হচ্ছে। তাঁর সুর কিংবা গান ইউটিউব, ফেসবুকে ব্যবহার করলে আইন অনুযায়ী গানের গীতিকার ও সুরকার হিসেবে স্বত্ব বাবদ প্রাপ্য অর্থ আবদুল করিমের পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে। গত ৮ মাসে ১৫ লাখের বেশি টাকা তাঁর পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।
সেই টাকা কোথা থেকে ও কীভাবে জমা হচ্ছে, তার ধারণা দিয়ে জুয়েল জানান, ‘কনটেন্ট আইডি সিস্টেমে’ আবদুল করিমের গানের কথা ও সুর ধারণ করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া কোনো ইউটিউব চ্যানেলে, ফেসবুকে করিমের সুর ও কথা পেলে তা শনাক্ত করে। পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই গান থেকে স্বত্ব বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আবদুল করিমের পরিবারের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে।
আবদুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল বলেন, ‘কপিরাইট অফিস থেকে প্রতি মাসে প্রাপ্য অর্থ পেয়েছি। মোট কত পেয়েছি, সেই হিসাব এ মাসেই কপিরাইট অফিস জানাবে।’ কপিরাইট অফিস জানিয়েছে, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিষয়টি জানানো হবে।
কপিরাইট অফিসের বাইরে বিটিভি থেকে আবদুল করিমের গান প্রচারের জন্য স্বত্ব বাবদ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পেয়েছে তাঁর পরিবার। বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন জানান, ভবিষ্যতেও আবদুল করিমের গানের স্বত্ব বাবদ প্রাপ্য অর্থ প্রদান করা হবে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি থেকেও এক লাখের মতো অর্থ পেয়েছে তাঁর পরিবার।
কপিরাইট আইন অনুসারে, একটি গানের গীতিকার ও সুরকারকে গানের মূল স্বত্বাধিকারী বিবেচনা করা হয়। ফলে তাঁদের অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে গান পরিবেশনের সুযোগ নেই।
কপিরাইট আইনের ৮২ (১) ধারায় বলা আছে, স্বত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে কোনো গান পরিবেশন করলে তা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে, ইচ্ছাকৃতভাবে আইনের লঙ্ঘন করলে দণ্ডের বিধানও রয়েছে। আবদুল করিমের ছেলে বলছেন, ‘আবদুল করিমের গান পরিবেশনে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। শুধু গানের স্বত্ব থেকে প্রাপ্য অর্থ যেন আমাদের দেওয়া হয়।’
শাহ আবদুল করিমের আগে প্রয়াত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর গান সংরক্ষণ করে কপিরাইট অফিস। তাঁর গান থেকেও স্বত্ব বাবদ প্রাপ্য অর্থ তাঁর পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।
করিমের গান সংরক্ষণের দাবি
শাহ আবদুল করিমের শিষ্যদের কণ্ঠে মূল সুরে তাঁর গানগুলো রেকর্ড করে সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন করিমপুত্র শাহ নূর জালাল। তিনি বলেন, ‘সরকারি সহযোগিতা পেলে আবদুল করিমের সুর অবিকৃত রেখে রেকর্ড করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। তাঁর গান আমাদের সম্পদ, তা সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।’
বিষয়টি নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কপিরাইট অফিস। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আতাউর রহমান জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
সরকারি আয়োজনে না হলেও ‘স্বাধীন মিউজিক’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে আবদুল করিমের ৫০টি গান মূল সুরে নতুনভাবে শ্রোতাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মেহের আফরোজ শাওন, ইমরান মাহমুদুল, কনাসহ বেশ কয়েক শিল্পী এ আয়োজনে কণ্ঠ দিচ্ছেন।
শাহ আবদুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন তিনি।