একটি গানের অংশবিশেষ ‘ময়ে মরে’ ছড়িয়েছে টিকটকে; এটি নিয়ে ভিডিও বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে তা হাওয়ার বেগে ফেসবুক রিলস, ইউটিউব শর্টসেও ছড়িয়ে পড়ে।
ফেসবুকে ‘ময়ে ময়ে’ (উচ্চারণটি আসলে ‘ময়ে মরে’ হবে) লিখে পোস্টও করছেন অনেকে, শব্দটি নিয়ে হাস্যরসও করছেন কেউ কেউ। শব্দটি দিন দুয়েক ধরে ফেসবুকের সার্চলিস্টে ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে।
‘ময়ে ময়ে’ কিংবা ‘ময়ে মরে’ শব্দের অর্থ না জানলেও গানটির সুরের মায়াজালে আটকে পড়েছেন বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের সংগীত–অনুরাগীরা। ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের এই আলোচিত গানের শিরোনাম ‘ড্যানাম’।
সার্বীয় ভাষার এই গান গেয়েছেন সার্বিয়ান গায়িকা, সুরকার তেয়া দোরা; গানের ভিডিওচিত্রে মডেলিংও করেছেন তিনি। দেশটির র্যাপার ও গীতিকার কোবির সঙ্গে যৌথভাবে গানের কথা লিখেছেন তেয়া দোরা; সুরকার লোকা জোভানোভিকের সঙ্গে সুরও বেঁধেছেন তিনি।
গানটি সার্বিয়ার সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেইম ও জুনির ভেতারের ব্যানারে গত ২২ মার্চ প্রকাশিত হয়। গানটি প্রকাশের প্রায় ছয় মাস পর এই সপ্তাহে টিকটকে গানের অংশবিশেষ ‘ময়ে মরে’ ভাইরাল হওয়ার পর হু হু করে গানের ‘ভিউ’ বাড়ছে। গানের অংশবিশেষ শুনে পুরো গানটি শুনতে হুমড়ি ইউটিউবে, স্পটিফাইয়ে খেয়ে পড়ছেন শ্রোতারা।
জুনির ভেতারের ইউটিউব চ্যানেলে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত ৪৭ মিলিয়নেরও বেশি বার দেখা হয়েছে ‘ড্যানাম’।
সামাজিক মাধ্যমে সিরাজুম মুনিরা নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটি বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানের কথার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি। গানটি ভাষার ব্যবধান ভেঙে দিয়েছে।’
স্পটিফাইয়ে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কোটিবার শোনা হয়েছে ‘ড্যানাম’। এর আগে স্পটিফাইয়ে তেয়া দোরার সাতটি গান প্রকাশিত হয়েছে। তেয়া দোরার আগের সাত গান মিলিয়ে যত বার শোনা হয়েছে, এক ‘ড্যানাম’ তার চেয়ে সাত গুণ বেশি বার শুনে ফেলেছেন শ্রোতারা। অ্যাপল মিউজিক, অ্যামাজন মিউজিকেও ঝড় তুলেছে ‘ড্যানাম’।
এটা তো গেল পুরো গানের পরিসংখ্যার, গানের ‘ময়ে মরে’ অংশটুকু কত কোটি বার শোনা হয়েছে—সেই হিসেব টানা দুরূহ। এই সময়ে টিকটকে, ফেসবুক রিলসে ও ইউটিউব শর্টসে বহুল ব্যবহৃত গানের অংশবিশেষ এটি।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শ্রোতাদের ভালোবাসা পাচ্ছেন গায়িকা তেয়া দোরা। সামাজিক মাধ্যম থ্রেডসে গতকাল মঙ্গলবার এক পোস্টে শ্রোতাদের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘গানটি নিয়ে অনেকে ভালোলাগার কথা জানিয়েছেন, আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সার্বিয়া থেকে গানটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। প্রতিদিনই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ভালোবাসা পাচ্ছি। আপনাদের জন্য ভালোবাসা রইল।’
গানটি কিভাবে ছড়াল?
‘ড্যানাম’–এর সুর হৃদয়গ্রাহী। ভাষার ব্যবধান ভুলে মূলত সুরই গানটিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে। আর এটি ছড়াতে মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে টিকটক। শ্রীলংকার গায়িকা ইয়োহানির ‘মানিকে মাগে হিতে’সহ সাম্প্রতিক সময়ে ‘ভাইরাল’ হওয়া বেশিরভাগ গানই টিকটিক থেকে ‘ভাইরাল’ হয়েছে।
এর কারণ হলো—টিকটকে কোনো গানের অংশবিশেষ নিয়ে বার বার ভিডিও বানানো হয়। ফলে গানটি বার বার বাজতে থাকে। সুরটা ভালো হলে শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে যায়। পরে খুঁজে পুরো গানটি শোনেন সংগীত–অনুরাগীরা। ‘ড্যানাম’ গানের ক্ষেত্রেও তেমনটায় ঘটেছে।
আলতার মিসতেরি নামে এক ইন্দোনেশীয় শ্রোতা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘টিকটকের মাধ্যমে গানটি ইন্দোনেশিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানটা শুনলে এক ধরনের শূন্যতার অনুভূতি কাজ করে।’
সার্বীয় ভাষায় ‘মরে’ শব্দের অর্থ দুঃস্বপ্ন। এই গানের কথা ও সুরে বিষাদ ছড়ানো আছে। গানে না পাওয়ার যন্ত্রণা আছে। শিল্পী গানে বলছেন, তাঁকে দিনের পর দিন দুঃস্বপ্ন (মরে) তাড়া করে বেড়ায়। এই দুঃস্বপ্ন তাঁর হতাশা ও বিচ্ছিন্নতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। দুঃস্বপ্নের ঘোরে নিজেকে ফেলনা মনে করেন। এর মাঝেও খড়কুটো ধরে বাঁচতে চান। তিনি চান, কেউ তার পাশে এসে দাঁড়াক। তাঁকে কেউ বুঝুক, মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিক।
সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘সংগীত সব ভাষার ঊর্ধ্বে।’ অনেকে গানের কথা অনুবাদও করে নিয়েছেন। সুরের সঙ্গে কথার মাঝেও নিজেকে হারিয়েছেন কেউ কেউ।
কে এই তেয়া দোরা
এই গানের স্রষ্টা তেয়া দোরার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সার্বিয়ার বেলগ্রেডে। তাঁর বাবা একজন লোকসংগীতশিল্পী। বাবাকে দেখেই সংগীতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিয়ানো শেখেন। ১৬ বছর বয়সে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে কলেজ অব মিউজিকে পড়তে যান। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে সুরকার ও গীতিকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।
২০১৯ সালে ‘ডা না মেনি জে’ শিরোনামে একটি গান দিয়ে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে অভিষেক ঘটে তেয়ার। সার্বিয়ার সিনেমায়ও গান করেছেন তিনি। ‘ড্যানাম’ গান দিয়ে সার্বিয়া ছাপিয়ে দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পেলেন ৩২ বছর বয়সী এই শিল্পী।