দুই বছর আগে সিলেটের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনায় আসেন তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। এবারও বন্যার খবর শুনেই গত বৃহস্পতিবার পৌঁছে গেছেন ফেনীতে। শামিল হয়েছেন উদ্ধার তৎপরতায়। গতকাল মুঠোফোনে নিজের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন মনজুরুল আলমের সঙ্গে। তাসরিফের কথা জেনে নেওয়া যাক তাঁর ভাষ্যেই-
মানুষের জন্য কিছুটা হলেও ভালো কাজ করতে পারব ভেবেই উৎসাহিত হই। এই কাজগুলোতে আমি নিজে আনন্দ পাই। এ জন্যই তো বলা হয়, মানুষ মানুষের জন্য। তবে এবার একেবারেই দুর্গত মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা ছিল না। কারণ, সিলেটের বন্যায় সহায়তা ও তহবিল গঠন নিয়ে নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে। দুই বছর ধরে ট্রল করেছে, ইচ্ছাই ছিল না ফেনী আসি। পরে কিটো ভাই (ইউটিউবার) ফোন দিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। আমার সহযোগিতা চেয়েছিলেন। পরে মনে হলো মানুষ কথা বলুক, গালি দিতে থাকুক, আমি দেখি দুজন মানুষকে হেল্প করতে পারি কি না। সেই লক্ষ্য নিয়েই এসেছি।
প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা
প্রথম দিনেই (গত বৃহস্পতিবার) আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। নিজেরাও অনেকের সঙ্গে কথা বলছি। স্থানীয় লোকজন আমাদের সঙ্গে আছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। আমরা এই তিন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা খাবার চান না, তাঁরা বাঁচতে চান।
চারদিকে মানুষ শুধু বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। কেউ কেউ টিনের ঘরের চালার ওপর অবস্থান করছেন। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে ঘর। অবস্থা এতটাই খারাপ যে কল্পনারও বাইরে। আপনারা কতজনের মারা যাওয়ার কথা জেনেছেন, জানি না, কিন্তু আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কথা বলে জানতে পারছি, এ সংখ্যা অনেক গুণ বেশি। ফুলগাজী, পরশুরাম, আনন্দপুর এলাকাগুলোতে মানুষ আটকা পড়েছেন, সেই এলাকায় গিয়েছি।
সবাই যেন আমাদের খোঁজ করতে পারেন, সে জন্য আমাদের সঙ্গে ওয়াকিটকি ছিল। কারণ, কোথাও কোনো নেটওয়ার্ক ছিল না। এখানকার অবস্থা ভালো না।
ফুলগাজী, পরশুরাম, আনন্দপুর এলাকাগুলোয় মানুষ আটকা পড়েছেন, সেই এলাকায় গিয়েছি। সবাই যেন আমাদের খোঁজ করতে পারেন, সে জন্য আমাদের সঙ্গে ওয়াকিটকি ছিল। কারণ, কোথাও কোনো নেটওয়ার্ক ছিল না। এখানকার অবস্থা ভালো না।তাসরিফ খান
সিলেটের বন্যা থেকে শিক্ষা গ্রহণ
সিলেটে যে এলাকায় বন্যা হয়েছিল, তাঁরা কিন্তু পানি বা নৌকার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু এটা এমন একটা অঞ্চল, এখানে কোনো নদী সেভাবে নেই, নৌকা নেই। তাঁরা পানিবন্দী অবস্থায় টিকতে পারছেন না। বেশির ভাগ মানুষ জীবনে বন্যাই দেখেননি। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কী করবেন। এদিকে পানি বাড়ছে। আমরা এখানে দেখছি, প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। একটার সময় রাতের খাওয়ার পর দেখি, পানি দুই আঙুল পরিমাণ বেড়েছে। রাতেও বৃষ্টি হয়েছে।
যা গুরুত্ব পাচ্ছে
সিলেটের অভিজ্ঞতা পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছি। সিলেটের সেই বছরের অভিজ্ঞতা আমার বড় শিক্ষা। বন্যার প্রথম দুই দিন উদ্ধার তৎপরতা বেশি দরকার, পানি প্রয়োজন হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ দিন থেকে শুকনা খাবার দরকার হয়। আমরা সেগুলোর চেষ্টাও করছি। কারণ, আমরা এখনো তহবিল সংগ্রহ করছি না। স্বাধীনভাবেও কাজ করছি না। সেনাবাহিনী আমাদের সঙ্গে রেখেছে।
আমাদের বেশ কিছু এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু ঝুঁকির জন্য যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে জেনেছি, এমনও হয়েছে, বেশ কিছু জায়গায় পাঁচটা বোট গিয়েছে, হয়তো একটা বোট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো আছে, কিন্তু যোগাযোগ নেই। যে কারণে নিষেধ করেছে। তবে স্বাধীনভাবেই আমরা কাজের চেষ্টা চালাব। মানুষকে বাঁচাতে হবে। মাত্র খবর পেলাম, রাতে কয়েক শ স্পিডবোট ঢুকেছে। আশা করছি, মানুষের পাশে সবাই মিলে দাঁড়াতে পারব।