মুম্বাইয়ের একটি তারকা হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আশা ভোসলে। ছবি: এএফপি
মুম্বাইয়ের একটি তারকা হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আশা ভোসলে। ছবি: এএফপি

আমি এই ইন্ডাস্ট্রির শেষ মোগল: আশা ভোসলে

আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ৯০-এ পা দিতে চলেছেন আশা ভোসলে। জন্মদিন উপলক্ষে দুবাইয়ে এক লাইভ কনসার্টে অংশ নেবেন এই কিংবদন্তি গায়িকা। কনসার্ট সামনে রেখে গত মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের একটি পাঁচতারা হোটেলে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে কনসার্টসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

শুরুতেই দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় আশা@নাইনটি লাইভ ইন কনসার্ট নিয়ে আশা ভোসলে বলেন, ‘শুধু কনসার্ট স্টাইলে এই শো হবে না, হবে ব্রডওয়ে স্টাইলে। আমার জীবনের কিছু বিশেষ ঘটনা এই শোয়ে তুলে ধরা হবে। তাই এই অনুষ্ঠানে বিশেষ কিছু হবে। এই বয়সেও সংগীতের সেবা করছি, এ জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমি আগামী দিনেও একইভাবে সংগীতের সেবা করতে চাই। জীবন যেন আমাকে সেই সুযোগ দেয়।’

আশা জানান, দুবাইয়ের এই সংগীত আসরে প্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী তাঁর বোন লতা মঙ্গেশকরের কথাও তুলে ধরা হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে আমার মা–বাবা ও ভাই-বোনদের অনেক বড় অবদান। আমরা ভাইবোনেরা হাতের পাঁচ আঙুল। আমার জীবনের প্রতিটি পর্যায়ের সঙ্গে তারা জড়িয়ে আছে। লতা তাইয়ের (বড় বোন) সঙ্গে ছোটবেলা থেকে গান গাইছি।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভারাক্রান্ত গলায় আশা বলেন, ‘আমি এই ইন্ডাস্ট্রির শেষ মোগল। আমার সামনে সবাই এক এক করে চলে গেছেন। আমি একা রয়ে গেছি।’

আশা ভোসলে। ছবি: এএফপি

নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে আশা বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের খুঁজে বের করা উচিত, তার মধ্যে কী প্রতিভা আছে। সেই প্রতিভা বিকশিত করার প্রয়োজন আছে। আমি কখনোই ভাবিনি যে প্লেব্যাক গায়িকা হব। কিন্তু নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার সুযোগ হাতছাড়া করিনি। তাই প্রায় রোজই রেওয়াজ করি। আমার রেওয়াজের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। সাধারণত সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত রেওয়াজ করি। কখনো আবার ভোর পাঁচটা বা দুপুরবেলায়ও করি। ঘুম না এলে মধ্যরাতেও তানপুরা নিয়ে রেওয়াজ করতে বসে যাই। তবে কারও যাতে ঘুম নষ্ট না হয়, সে জন্য তানপুরার আওয়াজ কমিয়ে দিই। রেওয়াজে বসার আগে এককাপ চা বানিয়ে নিই।’

চড়াই-উতরাইয়ের জীবন আশার। নিজের জীবনকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের কথা বলতে হলে সঠিক গানটি হলো, “জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় প্যাহেলি হায় কাভি তো হাসায়, কাভি ইয়ে রুলায়।”এই জায়গায় পৌঁছাতে আমাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। বাচ্চাদের বড় করেছি। তাদের বিয়ে দিয়েছি। নাতি-নাতনিদের দেখভাল করেছি।’

আশা ভোসলে। ছবি: এএফপি

আশা ভোসলের গায়কির জাদুতে সারা বিশ্ব বারবার মুগ্ধ হয়েছে। তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘সারা দুনিয়া ঘুরে আমি গান গেয়েছি। লন্ডন, প্যারিস—সব জায়গার মানুষ আমার গাওয়া হিন্দি, মারাঠি গান সমান উপভোগ করেছেন। আমার মনে হয়, সুর আর অর্থ সবাই বোঝেন।’

সম্প্রতি ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি’ ছবিতে আশার গাওয়া জনপ্রিয় গান ‘ঝুমকা গিরা রে’র রিমিক্স করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এই সংগীতশিল্পী বলেন, ‘এখন দুনিয়া বদলে গেছে। মুঠোফোন, ল্যাপটপে প্রায় রোজই নতুন নতুন প্রযুক্তির জন্ম হচ্ছে। পুরোনো গানের কলির মধ্যে এখন “হাই”, “হুই” ঢুকিয়ে কিছু একটা বানানো হচ্ছে। সত্যি বলতে, আমার খারাপ লাগে। কিন্তু জানি যে এটাই হওয়ার কথা।’

নিজে কেমন গান শুনতে পছন্দ করেন? আশা বলেন, ‘সব ধরনের গান শুনতে পছন্দ করি। হিন্দি, দক্ষিণি, পশ্চিমা সংগীত—সবই শুনতে পছন্দ করি। তবে নিজের গান শুনি না।’